আগুনে পুড়ে গেলে কী করবেন

আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি গুরুতর দুর্ঘটনা, যা দ্রুত এবং সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা না পেলে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। পোড়ার মাত্রা বা গভীরতা অনুযায়ী এর প্রাথমিক চিকিৎসা ভিন্ন হয়। পোড়ার তিনটি প্রধান ধরন রয়েছে এবং প্রতিটি ধরনের জন্য নির্দিষ্ট করণীয় সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরি।
ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন
এই ধরনের পোড়ায় ত্বকের উপরিভাগের স্তর অর্থাৎ এপিডার্মিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত, চামড়া লাল হয়ে যায়, সামান্য ফুলে ওঠে এবং হালকা জ্বালা অনুভব হয়। এটি সবচেয়ে হালকা ধরনের পোড়া এবং সাধারণত গুরুতর হয় না।
করণীয়: পোড়ার স্থানে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে অবিরাম ঠান্ডা পানি ঢালুন। এতে ব্যথা ও জ্বালা কমবে এবং পোড়া অংশকে আরও গভীরে
যেতে বাধা দেবে। যদি ব্যথা খুব বেশি মনে হয়, তবে একটি সাধারণ ব্যথানাশক ট্যাবলেট খেতে পারেন। ডিম, টুথপেস্ট বা অন্য কোনো ঘরোয়া জিনিস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন সেকেন্ড ডিগ্রি বার্নে ত্বকের উপরিভাগের প্রথম স্তর (এপিডার্মিস) সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এর নিচের স্তর (ডার্মিস) আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুড়ে যাওয়া স্থানটি লাল হয়ে যায়, ফুলে ওঠে, ফোসকা পড়ে এবং প্রচণ্ড ব্যথা হয়। সাধারণত গরম পানি বা অন্য কোনো গরম তরল শরীরে পড়লে, কাপড়ে আগুন লাগলে, বা গরম কিছুর সংস্পর্শে এলে এ ধরনের পোড়া দেখা যায়। করণীয়: পোড়া স্থানে এক থেকে দুই ঘণ্টা ধরে ঠান্ডা পানি
ঢালতে হবে। মনে রাখবেন, এখানে দীর্ঘ সময় ধরে পানি ঢালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফোসকাগুলো নিজে নিজে গলানোর বা ফাটানোর চেষ্টা করবেন না। এতে সংক্রমণ হতে পারে এবং আরোগ্য প্রক্রিয়ায় দেরি হতে পারে। ক্ষতস্থান পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনে জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে আলতো করে ঢেকে রাখুন। থার্ড ডিগ্রি বার্ন এটি সবচেয়ে গুরুতর এবং বিপজ্জনক ধরনের পোড়া। থার্ড ডিগ্রি বার্নে ত্বকের উপরিভাগের দুটি স্তরই (এপিডার্মিস ও ডার্মিস) সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি চামড়ার নিচের মাংসপেশি, রক্তনালি, স্নায়ু ইত্যাদিও আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায়, চামড়া পুড়ে শক্ত ও শুকনো হয়ে যায়। যেহেতু স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই স্পর্শ করলেও ব্যথা অনুভূত হয় না। সরাসরি আগুনে পুড়লে,
বিদ্যুতায়িত হলে, ফুটন্ত পানি বা কোনো রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি শরীরে পড়লে বা বিস্ফোরণের কারণে এই ধরনের বার্ন হতে পারে। জেনে রাখুন আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব আগুন বা গরম উৎস থেকে সরিয়ে নিন। পুড়ে যাওয়া কাপড় সাবধানে খুলে দিন। যদি কাপড় চামড়ার সঙ্গে আটকে থাকে, তবে তা টেনে ছিঁড়তে যাবেন না। বরং আটকে থাকা অংশ বাদে বাকি পোশাক কেটে সরিয়ে দিন। অযথা ডিম, টুথপেস্ট, আলু, ভিনেগার বা অন্য কোনো ঘরোয়া জিনিস পোড়া স্থানে লাগাবেন না। এতে কোনো উপকার হয় না, বরং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে এবং পরবর্তী চিকিৎসায় জটিলতা তৈরি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে শুইয়ে দিন যাতে তার পুড়ে যাওয়া অংশ উন্মুক্ত থাকে। এরপর একটি
জগ বা মগে ঠান্ডা পানি বা বরফ-ঠান্ডা পানি এনে পোড়া জায়গায় ঢালুন। এই প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত চালিয়ে যান, যতক্ষণ না জ্বালা-যন্ত্রণা ও ক্ষতস্থানের অতিরিক্ত গরমভাব কমে। আক্রান্ত স্থান ফুলে যাওয়ার আগে সেখান থেকে ঘড়ি, বেল্ট, আংটি, চুড়ি বা অন্য যেকোনো আঁটসাঁট জিনিস সরিয়ে ফেলুন। কারণ, ফোলা শুরু হলে এগুলো রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ বা শুকনো কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান হালকা করে ঢেকে দিন। এতে সংক্রমণ এড়ানো যাবে। যদি মুখমণ্ডল পুড়ে যায়, তবে পানি দিয়ে ঠান্ডা করুন যতক্ষণ না ক্ষতস্থান ঠান্ডা হয় এবং ব্যথা কমে। মুখ ঢাকার প্রয়োজন নেই, তবে পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে এমনভাবে মাস্ক তৈরি করতে পারেন যাতে
নাক, মুখ ও চোখ খোলা থাকে। হাতের কাছে সিলভার সালফাডায়জিন ক্রিম থাকলে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে সাবধানে লাগিয়ে দিতে পারেন। আক্রান্ত অংশ পরিষ্কার কাপড় বা গজ-ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে একটু উঁচু করে ধরে রাখুন, যদি সম্ভব হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান থাকলে তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে দিন। প্রাথমিক চিকিৎসা চালানো অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। থার্ড ডিগ্রি বার্নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান অপরিহার্য। [ সহকারী অধ্যাপক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল ]
যেতে বাধা দেবে। যদি ব্যথা খুব বেশি মনে হয়, তবে একটি সাধারণ ব্যথানাশক ট্যাবলেট খেতে পারেন। ডিম, টুথপেস্ট বা অন্য কোনো ঘরোয়া জিনিস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন সেকেন্ড ডিগ্রি বার্নে ত্বকের উপরিভাগের প্রথম স্তর (এপিডার্মিস) সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এর নিচের স্তর (ডার্মিস) আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুড়ে যাওয়া স্থানটি লাল হয়ে যায়, ফুলে ওঠে, ফোসকা পড়ে এবং প্রচণ্ড ব্যথা হয়। সাধারণত গরম পানি বা অন্য কোনো গরম তরল শরীরে পড়লে, কাপড়ে আগুন লাগলে, বা গরম কিছুর সংস্পর্শে এলে এ ধরনের পোড়া দেখা যায়। করণীয়: পোড়া স্থানে এক থেকে দুই ঘণ্টা ধরে ঠান্ডা পানি
ঢালতে হবে। মনে রাখবেন, এখানে দীর্ঘ সময় ধরে পানি ঢালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফোসকাগুলো নিজে নিজে গলানোর বা ফাটানোর চেষ্টা করবেন না। এতে সংক্রমণ হতে পারে এবং আরোগ্য প্রক্রিয়ায় দেরি হতে পারে। ক্ষতস্থান পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনে জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে আলতো করে ঢেকে রাখুন। থার্ড ডিগ্রি বার্ন এটি সবচেয়ে গুরুতর এবং বিপজ্জনক ধরনের পোড়া। থার্ড ডিগ্রি বার্নে ত্বকের উপরিভাগের দুটি স্তরই (এপিডার্মিস ও ডার্মিস) সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি চামড়ার নিচের মাংসপেশি, রক্তনালি, স্নায়ু ইত্যাদিও আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায়, চামড়া পুড়ে শক্ত ও শুকনো হয়ে যায়। যেহেতু স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই স্পর্শ করলেও ব্যথা অনুভূত হয় না। সরাসরি আগুনে পুড়লে,
বিদ্যুতায়িত হলে, ফুটন্ত পানি বা কোনো রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি শরীরে পড়লে বা বিস্ফোরণের কারণে এই ধরনের বার্ন হতে পারে। জেনে রাখুন আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব আগুন বা গরম উৎস থেকে সরিয়ে নিন। পুড়ে যাওয়া কাপড় সাবধানে খুলে দিন। যদি কাপড় চামড়ার সঙ্গে আটকে থাকে, তবে তা টেনে ছিঁড়তে যাবেন না। বরং আটকে থাকা অংশ বাদে বাকি পোশাক কেটে সরিয়ে দিন। অযথা ডিম, টুথপেস্ট, আলু, ভিনেগার বা অন্য কোনো ঘরোয়া জিনিস পোড়া স্থানে লাগাবেন না। এতে কোনো উপকার হয় না, বরং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে এবং পরবর্তী চিকিৎসায় জটিলতা তৈরি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে শুইয়ে দিন যাতে তার পুড়ে যাওয়া অংশ উন্মুক্ত থাকে। এরপর একটি
জগ বা মগে ঠান্ডা পানি বা বরফ-ঠান্ডা পানি এনে পোড়া জায়গায় ঢালুন। এই প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত চালিয়ে যান, যতক্ষণ না জ্বালা-যন্ত্রণা ও ক্ষতস্থানের অতিরিক্ত গরমভাব কমে। আক্রান্ত স্থান ফুলে যাওয়ার আগে সেখান থেকে ঘড়ি, বেল্ট, আংটি, চুড়ি বা অন্য যেকোনো আঁটসাঁট জিনিস সরিয়ে ফেলুন। কারণ, ফোলা শুরু হলে এগুলো রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ বা শুকনো কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান হালকা করে ঢেকে দিন। এতে সংক্রমণ এড়ানো যাবে। যদি মুখমণ্ডল পুড়ে যায়, তবে পানি দিয়ে ঠান্ডা করুন যতক্ষণ না ক্ষতস্থান ঠান্ডা হয় এবং ব্যথা কমে। মুখ ঢাকার প্রয়োজন নেই, তবে পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে এমনভাবে মাস্ক তৈরি করতে পারেন যাতে
নাক, মুখ ও চোখ খোলা থাকে। হাতের কাছে সিলভার সালফাডায়জিন ক্রিম থাকলে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে সাবধানে লাগিয়ে দিতে পারেন। আক্রান্ত অংশ পরিষ্কার কাপড় বা গজ-ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে একটু উঁচু করে ধরে রাখুন, যদি সম্ভব হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান থাকলে তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে দিন। প্রাথমিক চিকিৎসা চালানো অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। থার্ড ডিগ্রি বার্নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান অপরিহার্য। [ সহকারী অধ্যাপক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল ]