শিখন ঘাটতি দূর করতে প্রয়োজন শিক্ষক নিয়োগে প্যানেল – U.S. Bangla News




শিখন ঘাটতি দূর করতে প্রয়োজন শিক্ষক নিয়োগে প্যানেল

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ৮ এপ্রিল, ২০২৪ | ৪:২৯
শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি-এ বাক্যটি জন্ম থেকে জেনে আসছি। অথচ এ ঘাটতি দূরীকরণে কার্যকর উদ্যোগ আজও গ্রহণ করা হয়নি। বিগত কয়েক বছর শিখন ঘাটতি দূর করার নামে, বিশেষ করে প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের রমজান মাসে চলে অপতৎপরতা। তৃতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের অনেকেই প্রথম দিকে রোজা রেখে থাকে। এ মাস এলে শিশুদের মাঝে রোজা রাখার প্রতিযোগিতা দেখা যায়। আরও দৃশ্যমান হয় সহি কুরআন ‘কারিয়ানা’ শিক্ষা নিতে। মসজিদে নামাজের সময় বড়দের পাশাপাশি ছোট শিশুদের জামাতে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থাকে অতি নগণ্য। এতে মন্ত্রণালয়ের স্বল্প দিনের মহতী উদ্যোগ শিখন ঘাটতিকে আরও বৃদ্ধি করে। সবার জন্য শিক্ষা না হয়ে

কম সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য দায়সারা শিক্ষাদান হয়ে থাকে। রোজা রেখে স্বাভাবিক দিনের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষকদেরও একনাগাড়ে লম্ফঝম্প দিয়ে ৬-৭টি শ্রেণির কাজ করার বিষয়টি নীতিনির্ধারণী কর্তাব্যক্তিদের উপলব্ধিতে আসছে না। তারা তাদের অফিসিয়াল কাজ আর শিক্ষাদানকে একই মনে করেন। ব্যাপক শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণে শিখন ঘাটতি বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের উপলব্ধিবোধ জাগ্রত করার জন্য ছোট উদাহরণ দেওয়া হলো : বাড়িতে এক বা একধিক ছোট শিশু থাকলে তাদের দেখভাল তথা কখন আগুনে, পানিতে বা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, সে আশঙ্কায় পুরো পরিবার থাকে ব্যস্ত। তেমনই নানা পরিবারের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের অগণিত শিশুর হই-চই, চিল্লাচিল্লি, মারামারির মাঝে অবস্থান করে পাঠদান করতে হয় শিক্ষকদের। সার্বক্ষণিক এ কাজ করতে

করতে এ কঠিন কাজটিতে তারা অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন ৬-৭টা ক্লাস এক নাগাড়ে করতে করতে শিক্ষকের মাথা গরম হয়ে অনেক সময় যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। মাথা এত গরম হয়, অনেকটা যেন খই-মুরি ভাজাসহ রান্নার করার উপযোগী হয়ে থাকে। প্রাথমিকে বড় ধরনের শিখন ঘাটতির পেছনে রয়েছে শিক্ষক সংকটসহ নানা কারণ। শিক্ষক সংকট প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী জানান, গত একযুগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রধান শিক্ষক ৫ হাজার ২০৫ জন, সহকারী শিক্ষক ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৭৪ জনসহ মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৭৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা

শূন্য পদে। ২/৩/৪ বছর পরপর শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সমাপ্ত করে বিদ্যালয়গুলো তাদের শূন্যপদে শিক্ষক পেয়ে থাকেন। সংসদে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে থাকে। অতীতে শিক্ষক নিয়োগের এ দীর্ঘসূত্রতায় শিক্ষকদের পদ শূন্যের ফলে চেয়ারে ধুলা-বালি জমে যেমন বিবর্ণ হয়েছে, তেমনি শিক্ষক শূন্যতায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে বিশাল শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে কিছুটা আশার আলো দেখা গেছে ২০২৩ সালের নিয়োগ পরীক্ষায়। এতে এক বছর ৬ মাসের মধ্যে বিদ্যালয়ের শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের সম্ভাবনা বিদ্যমান। ২/৩/৪ বছর পরপর শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার উদ্যোগের মাধ্যমে প্রাথমিকের মহাপরিচালক মহোদয়ের শিখন ঘাটতির ভয়াবহ কুফল সম্পর্কে উপলব্ধিবোধ জাগ্রত হওয়ার

জন্য ধন্যবাদ। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে মেধাবীদের নিয়ে দীর্ঘ প্যানেল গঠনের প্রয়োজন। যাতে শিক্ষকের পদ শূন্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যোগ্য শিক্ষক পায় এবং শিখন ঘাটতি না হয়। বর্তমানে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করলেও ১ বছরের অধিক সময় অতিক্রম করেছে। এ দীর্ঘ সময়েও বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূন্যতা কাম্য নয়। এ প্রেক্ষাপটে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি ১ শাখা নং-০৫-১৭০-১১-০১৬.২২-৯৬ তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২৩ পরিপত্রে সব মন্ত্রণলায়ের অধীনে কর্মচারী নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। সরকার মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর অধীন সরকারি দপ্তর/অধিদপ্তর/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে ১৩-২০ গ্রেডের পদে কর্মচারী নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণে নিুরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত

গ্রহণ করেছেন। ১. অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়নের সময় ডিপিসি পদের নিয়োগে যে জেলার জন্য প্রার্থী সুপারিশ করবে, সেই জেলার যোগ্য প্রার্থীর মধ্য থেকে প্রতিটি সুপারিশকৃত প্রার্থীর বিপরীতে ১:২ অনুপাতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করবে। তবে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করার সময় কোনো কোটার অধীনে কোনো জেলার যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট সাবেক বৃহত্তর জেলার অন্তর্ভুক্ত কোনো জেলা থেকে উপরিক্ত ভাবে কোটার শূন্য পদে পূরণ করবে। কোটার শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে যে জেলার চাকরিজীবীর সংখ্যা সর্বাপেক্ষা কম, সেই জেলার যোগ্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে মেধাক্রমের ভিত্তিতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। ২. অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণের মেয়াদ হবে বিবেচ্য বিজ্ঞপ্তির

ভিত্তিতে প্রথম নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের তারিখ হতে এক বছর অথবা শূন্যপদ পূরণের জন্য পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রকাশের তারিখ যেটি আগে ঘটে। ৩. নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত প্রার্থীদের মধ্যে কেউ চাকরিতে যোগদান না করলে শূন্যপদ পূরণের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ডিপিসি সভায় অপেক্ষমাণ তালিকা এবং উত্তীর্ণ প্রার্থীদের রেজাল্ট সিট উপস্থাপনপূর্বক শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী সুপারিশ করতে হবে। পাশাপাশি কমিটির উপস্থিতিতে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে সুপারিশকৃত প্রার্থীকে তার নিয়োগের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অফিসের শূন্যপদে তেমন ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। অথচ শিক্ষকের শূন্যতায় হয় শিখন ঘাটতির মতো বিশাল ক্ষতি। অভিভাবক সমাজের মনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তথা বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার

জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়। যা মোটেই কাম্য নয়। এ প্রেক্ষাপটে খুব শিগ্গির প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রয়োজন। বিশাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিপুল সংখ্যক মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ পেয়ে থাকেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড। একই সমযোগ্যতায় অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেতন স্কেল কমপক্ষে দশম গ্রেড। এর ফলে বিপুল সংখ্যক মেধাবী প্রাথমিক শিক্ষক হিসাবে চাকরি নিলেও, অল্প সময়ের মধ্যেই সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-বিমাসহ নানা স্থানে উচ্চতর সুযোগ-সুবিধা পেয়ে শিক্ষকতার পেশা ত্যাগ করেন। এছাড়া অবসর ও মৃত্যুর মতো নানা কারণে প্রতিনিয়ত শিক্ষকের পদ শূন্য হচ্ছে। আবার অনেক স্থানে প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে পদোন্নতির জটিলতা রয়েছে। এ জটিলতা নিরসনকল্পে

শিক্ষকদের কর্মরত বিদ্যালয়ের সিনিয়রটি ভিত্তিতে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। বিগত সময় বিভিন্ন স্কুলে পোস্টিং-এর নাম করে কোটি কোটি টাকার ঘুষবাণিজ্য হয়েছিল। অবশ্য প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা দীর্ঘ সময় হতেই স্বচ্ছ ও ত্রুটিমুক্ত। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা সারা দেশে প্রশংসার দাবি রাখে। শিখন ঘাটতি দূর করার জন্য সর্বাগ্রে প্রাথমিক শিক্ষক শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া জিরো টলারেন্স নামিয়ে আনতে হবে। এছাড়া তথ্যপত্রের চেয়ে বেশি জোর দিতে হবে শ্রেণিতে শিক্ষকের পাঠদানে অবহেলা বা ত্রুটির বিষয়ে কঠোর জবাবদিহিতায়। ব্যাংকের কর্মচারীদের মতো শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূরীকরণের প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে প্রধান শিক্ষক, সহকারী উপজেলা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সর্বোচ্চ মন্ত্রী পর্যন্ত। শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। দূর হোক প্রাথমিক শিক্ষাসহ সব শিক্ষার শিখন ঘাটতি। মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিল ৩৫ প্রত্যাশীরা আরও ৬ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ তাপমাত্রায় ৬৮ বছরের রেকর্ড ভাঙল কলকাতা ‘ভুল চিকিৎসা বলার অধিকার কেউ রাখে না, রাখে একমাত্র বিএমডিসি’ বোমা হামলার হুমকি, দিল্লির ১০০ স্কুলে তুলকালাম! ভারতের নির্বাচনি প্রস্তুতি দেখার আমন্ত্রণ পেল আওয়ামী লীগ আইপিএলে নাচতে নাচতে অতিষ্ঠ চিয়ারলিডাররা চীন থেকে থ্রেডস ও হোয়াটসঅ্যাপ সরাল অ্যাপল সোনার দাম সাত ধাপে কত কমল? নারী স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার, সৌদিতে তরুণীর ১১ বছরের কারাদণ্ড ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি যুদ্ধবিরতির মধ্যেই রাফাহে অভিযানের ঘোষণা নেতানিয়াহুর ৫৩ বছরেও হয়নি জাতীয় মজুরি কমিশন সংসার চলে না শ্রমিকের, বেঁচে থাকাই চ্যালেঞ্জ দীর্ঘদিন পর নিজের ভুল স্বীকার করে সামান্থাকে নিয়ে যা বললেন নাগা বিরাট-অনুশকার ডেটিং জীবনের তথ্য ফাঁস ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদ্মায় ঝাঁপ তরুণীর মেগান মার্কেল নতুন খবর দিলেন জীবন ওলটপালট করে গেল ‘আগ্রাসী’ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটিতে আলোচনা হয়নি: ওবায়দুল কাদের