মোহাম্মদপুরে ফের সক্রিয় ১৩ কিশোর গ্যাং – U.S. Bangla News




মোহাম্মদপুরে ফের সক্রিয় ১৩ কিশোর গ্যাং

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ৩ জুন, ২০২৩ | ৬:০১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরজুড়ে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। এদের তৎপরতায় গত কয়েক মাসে প্রায় শ খানেক খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদিনই তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। অতি তুচ্ছ ঘটনা থেকে শুরু করে পান থেকে চুন খসলেই এরা প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে এলাকায় সৃষ্টি করে ত্রাসের রাজত্ব। এছাড়া কুপিয়ে জখম, ছিনতাই, ডাকাতি ও খুনের মতো ভয়ংকর অভিযোগও এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, র‌্যাব অফিসের ৫০০ গজের ভেতরই কিশোর গ্যাং চক্রগুলো সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া। বসিলা থেকে মোহাম্মদপুর তিন রাস্তা মোড় পর্যন্ত রাস্তাতেই সব সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, নবীনগর

হাউজিং, বসিলা চল্লিশ ফিট, কাঁটাসুর ও ঢাকা উদ্যান এলাকাজুড়ে ধারালো দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ নিয়ে প্রতিদিনই চলে কিশোর গ্যাংয়ের মহড়া। এসব গ্যাংগুলোকে কিশোর গ্যাং বলা হলেও বয়সদের দিক থেকে এর সদস্যরা প্রায় সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। এরা এতটাই দুর্ধর্ষ এবং বেপরোয়া যে, দিনের আলোতেও দেশীয় ধারালো অস্ত্র হাতে একদল আরেক দলকে ধাওয়া করতে সংকোচ বোধ করে না। স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিবের অনুসারীরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ছিল। তিনি আটকের পর তারা কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও এখন তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যেসব এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া : ঢাকা উদ্যান এলাকায় ‘অজানা কিশোর গ্যাং’ আতঙ্কে থাকেন সেখানকার বাসিন্দারা। রাত হলেই তারা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে জোরে হর্ন

বাজিয়ে পুরো এলাকা দাপিয়ে বেড়ায়। এই এলাকার আতঙ্ক লম্বু মোশারফ গাংচিল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে কাজ করত। তার অবর্তমানে দলের অন্যতম সদস্য নাঈম ওরফে ভাইগ্না নাঈম, রক্তচোষা জনি, রবিন ওরফে শুটার রবিন ও রুবেল পুরো এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেয়। এই গ্রুপে রুহুল আমিন, পাগলা নাসির, জসিম, শামীম, আমির, সোহেল ও ল্যাংড়া শুক্কুরের নেতৃত্বে একটি দল তুরাগ হাউজিং, আক্কাস নগর, ঢাকা উদ্যান নদীর পাড়, চন্দ্রিমা হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, বসিলা হাক্কার পাড়ে ছিনতাই, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। এই এলাকায় সবচেয়ে ভয়ংকর গ্রুপ হিসাবে পরিচিত ‘পাটালি গ্রুপ’। এ গ্রুপের আশ্রয়দাতা হচ্ছে র‌্যাবের সোর্স হিসাবে পরিচিত আলমগীর ওরফে ফর্মা আলমগীর। এই গ্রুপ

তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে এলাকাভেদে ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করে আসছে। এই গ্রুপের মূল নেতৃত্ব দেয় সজিব ওরফে ফর্মা সজিব। তার নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড় থেকে ধানমন্ডি-২৭ নম্বর মোড় পর্যন্ত অস্ত্রের মহড়া, ছিনতাই এবং প্রশাসনের লোক পরিচয়ে পথচারীকে আটকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়সহ নানা ভয়ংকর অভিযোগ রয়েছে। তার পাশাপাশি, রায়েরবাজার কবরস্থান ও তার আশপাশ এলাকায় ছিনতাই ও মাদক সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছে হাসান ওরফে মাগুর হাসান। কাউকে খুন বা অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করার নেতৃত্ব দেয় ফালান ও ফরহাদ ওরফে ডেঞ্জার ফরহাদ। তাদের এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড সুবিধামতো করতে বোর্ড ঘাটে বেড়িবাঁধের ওপর ছাত্রলীগের ক্লাব করা

হয়েছে। এই ক্লাবের ভেতর চৌকি ফেলে মাদক সেবন থেকে শুরু করে রাস্তা থেকে নারী পথচারীকে তুলে দলবদ্ধ ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অভিযোগ রয়েছে পাটালি গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে। রায়ের বাজারের পাবনা হাউজ গলি, নেকাব খান রোডসহ আশপাশের এলাকায় মানিক ওরফে চাঁন মানিকের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল সক্রিয় রয়েছে। এই গ্রুপের আশ্রয়দাতা হচ্ছে বহুল আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী শাকিল ওরফে গালকাটা শাকিল। ইমন ওরফে এলেক্স ইমনের নেতৃত্বে ‘এলেক্স’ গ্রুপ নামে রায়ের বাজার এলাকায় আরেকটি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এই গ্রুপের আশ্রয়দাতা হচ্ছে রানা ওরফে গালকাটা রানা। এই গ্রুপে গালকাটা নাহিদ, জেক কাল্লুসহ আরও ১৫-২০ জনের সক্রিয় সদস্য রয়েছে। এছাড়াও, সাত মসজিদ এলাকায় সোলাইমান সলে,

শাহিও ও ফিরোজের নেতৃত্বে ‘ল ঠ্যালা’ ও ‘ডায়মন্ড’ গ্রুপ সক্রিয়। চাঁদ উদ্যান এলাকায় ‘ভাইব্বা-ল কিং’ গ্রুপে দুলাল ওরফে ডিস দুলাল নেতৃত্ব দেয়। এই গ্রুপে ফারুক, জুয়েল, সাজ্জাদ, মিলন, টিকটক শাহিন, আকতারসহ ৮-১০ জন সদস্য সক্রিয় রয়েছে। মোহাম্মদিয়া হাউজিং লিমিটেড এলাকার বেড়িবাঁধে ‘ডায়মন্ড’ গ্রুপে হাসান, আকাশ, সোহাগ, জুয়েল ও মিলনসহ ১৫-২০ জনের সদস্য রয়েছে। বাঁশবাড়ী এলাকায় ‘লাড়া-দে’ গ্রুপে মিম, নাহিদ, আশিক, ওসামা, নাঈম, আলি ও রাব্বিসহ ২০ জন সদস্য রয়েছে। বসিলা ৪০ ফিট ও তার আশপাশ এলাকায় ফারুক খান অভির নেতৃত্বে ‘দে-ধাক্কা’ নামে আরেকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এই গ্রুপে জাকির, শরিফুল, ফয়সাল, রুহুল আমিন, ভাইস্তা রনি, ভুট্টু সুমন, সাইফুল, মোল্লা সফিকুর, আরিফ

এবং নাইমসহ ১৫-২০ জন সক্রিয় হয়ে কাজ করে। লাউতলা এলাকায় ‘ঠোঁটে-ল’ গ্রুপের নেতৃত্বে দিয়ে আসছে মহিদুল ইসলাম মাহি। তার নামে হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এই গ্রুপে দ্বীন ইসলাম ওরফে দিলা, ফাডা আলামিন, সজিব, মৃদুল, জুম্মন, সাব্বির ওরফে ফুট সাব্বির, আশরাফ, রতন, সোহেল, জিন পরী, শফিক, মানিক ও মিরাজসহ ২০-২৫ জনের একটি গ্রুপ নিয়মিত ছিনতাই ও অস্ত্রের মহড়া দেয়। বসিলা মেট্রো হাউজিং এলাকায় লাল ওরফে রক্ত লাল, মেহেদী ও রাফির নেতৃত্বে ‘লাল গ্রুপ’ নামে একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। এই গ্রুপে আল-আমিন, মোটা সুমন, বাবু, সজিব, সুজন, জাহিদ, রাহিদ, মামুনসহ প্রায় ২০ সদস্যের একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। তিন রাস্তার মোড়

ও সোনা মিয়ার টেক এলাকায় বাত রাসেল, আন্ডা রাসেল, ব্যাঁকা রাসেল, রাহুল, চকলেট ইমন, আলামিন, রমজান, ইউসুফ, রাশেদ, মানিক, মনির ও নোমানের নেতৃত্বে টক্কর-লসহ বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং সক্রিয় হয়ে কাজ করছে। কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব জানান, আমি কিশোর গ্যাং চক্রের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। কারণ, আপনারা জানেন আমি দীর্ঘদিন ধরে জেলে ছিলাম। এতদিন পর এখন এসে যারা আমাকে কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করে, তাদের অবস্থান দেখেন। কিশোর গ্যাং দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে বলে দাবি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল

মঈন। তিনি বলেন, যারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত বা অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের আটক করে জেলে পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকায় আমরা কিশোর গ্যাং দমন করতে লম্বু মোশারফ, কবির বাহিনীসহ বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং বাহিনীর মদতদাতাকে আটক করেছি। ইতোমধ্যে আমরা ওই গডফাদারদের শনাক্ত করে জনপ্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী মাদকপাচার ও মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার মোকাবিলার কৌশল নিয়ে আলোচনা ৭৬ বছরের তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভাঙল যে কারণে চাকরি ছাড়লেন দুদকের ১৫ কর্মকর্তা ‘উপজেলা নির্বাচনও দেশের জনগণ বর্জন করবে’ টাঙ্গাইল শাড়ি ও পোড়াবাড়ির চমচমের জিআইপণ্য সনদ পেল চীন সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যা বললেন শি জিনপিং ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে অস্ত্র জমা দেবে হামাস ‘বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা, সমাধানে সরকারের সদিচ্ছা দেখাতে হবে’ দিল্লির দাসত্ব গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি: জয়নুল আবদিন আরও ৭৩ নেতাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আরও বাড়তে পারে গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুর মৃত্যু কেন্দ্রে ঢুকতে পারেনি ২০ বিসিএস পরীক্ষার্থী, কাঁদলেন হাউমাউ করে ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে অস্ত্র জমা দেবে হামাস তৃতীয় বিয়ে কবে করছেন আমির খান? কারাগারে কষ্টের বর্ণনা দিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বুবলীর দাদি চরিত্রে দিলারা জামান আ.লীগের ৩০ এপ্রিলের সভায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল কেন বেছে নিল না তুরস্ককে?