বিশ্বে কেন এত খাবার নষ্ট হয়? – U.S. Bangla News




বিশ্বে কেন এত খাবার নষ্ট হয়?

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ২৯ মার্চ, ২০২৪ | ৯:২৭
জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইউএনইপির এক প্রতিবেদন বলছে, এ মুহূর্তে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ খাদ্য নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ একবার খেলে আরেকবার কী খাবে সেটা নিয়ে ভাবতে হয় তাদের! অথচ প্রতিদিন এত পরিমাণ খাবার নষ্ট হচ্ছে, যা দিয়ে প্রতিদিন একশ কোটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব। গত বুধবার (২৭ মার্চ) প্রকাশিত হয়েছে ইউএনইপির ‘ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট ২০২৪’। এতে বলা হয়, ২০২২ সালে বিশ্বে ১০৫ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি মানুষ যখন না খেয়ে আছে, তখন লাখ কোটি ডলার মূল্যের খাবার ময়লার ঝুড়িতে ফেলা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, বিশ্বে এত খাদ্য কীভাবে নষ্ট হয়? কারা নষ্ট করে এসব খাবার? খাদ্য

অপচয় বলতে কী বোঝায় উৎপাদনের শুরু থেকে অর্থাৎ মাঠে শস্য উৎপাদন হোক বা সবজি, ফল, মাংস, ডিম বা দুধ যাই হোক না কেন, সেটি মানুষের খাবারের প্লেটে যদি না পৌঁছায়, অথবা প্লেটে পৌঁছেও নষ্ট হয় তবে সাধারণভাবে তাকে খাদ্য অপচয় বলা যায়। উৎপাদনের পর যদি সেটি খাওয়ার যোগ্য না হয়, মানে সেটি যদি পচে যায়, বা মান সম্পন্ন না হয়, সেটিও খাদ্য অপচয় বলে গণ্য হয়। ইংরেজিতে বিষয়টি বোঝানোর জন্য 'ফুড লস' এবং 'ফুড ওয়েস্ট' দুটি শব্দ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বাংলায় এ দুটিকেই খাদ্য অপচয় বলে বর্ণনা করা হয়। তবে 'ফুড লস' ফুড ভ্যালু চেইন বা খাদ্যচক্রের প্রাথমিক পর্যায়ে হয়ে

থাকে আর 'ফুড ওয়েস্ট' হয় এই চক্রের শেষ প্রান্তে। যখন শস্যদানা যেমন চাল-গম-ডাল, সবজি ও ফল, বিভিন্ন প্রাণীর মাংস, ডিম বা দুধ এসব উৎপাদনের পর বাজারজাতকরণ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে যেসব অপচয় হয় তাকে 'ফুড লস' বলে। কিন্তু যখন এসব খাবার বাড়ি বা রেস্তোরাঁ বা কমিউনিটি সেন্টারে রান্নার পর অপচয় হয় তখন সেটিকে 'ফুড ওয়েস্ট' বলা হয়। কোথায় এবং কীভাবে খাবার নষ্ট হয় জাতিসংঘের ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ভোক্তার কাছে সহজলভ্য খাবারের ১৯ শতাংশ তথা এক পঞ্চমাংশ বাসাবাসি, রেস্তোরাঁ, খাদ্য পরিষেবা এবং খুচরা বাজারে নষ্ট হয়। আরও বলা হয়েছে, এছাড়া খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় খামার থেকে ফসল সংগ্রহ থেকে শুরু

করে টেবিলে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত নষ্ট হয় প্রায় ১৩ শতাংশ। এভাবে প্রতিদিন এত খাবার নষ্ট হওয়ার বিষয়টাকে ‘বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি’ বলে অভিহিত করেছেন ইউএনইপির নির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসন। তিনি বলেন, ‘খাবার অপচয় বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি। এ মুহূর্তে যখন বিশ্বজুড়ে খাবার নষ্ট করা হচ্ছে, তখন কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকছে। ইনগার অ্যান্ডারসনের মতে, বিষয়টি শুধুমাত্র বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপরই বিরূপ প্রভাব ফেলছে না, এতে জলবায়ু পরিবর্তনও ত্বরান্বিত হচ্ছে, জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ ঘটছে। যে পরিমাণ খাবার নষ্ট হচ্ছে তার বেশিরভাগ হচ্ছে বাসাবাড়িতে। এর পরিমাণ ৬৩ কোটি ১০ লাখ টন। এরপর খাদ্য পরিবেশন এবং খুচরা বিক্রির সময় যথাক্রমে ২৯ কোটি ও

১৩ কোটি ১০ লাখ টন খাবার নষ্ট হয়। আর প্রত্যেক ব্যক্তি বছরে গড়ে ৭৯ কেজি খাবার অপচয় করে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের অপচয়ের ঘটনা নৈতিক নয়; বরং ‘পরিবেশগত ব্যর্থতা’। বিমান চলাচল থেকে নিঃসরিত কার্বন যতটা না বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়াচ্ছে, তার থেকে পাঁচ গুণ উষ্ণতা বাড়াচ্ছে নষ্ট খাদ্য থেকে সৃষ্ট খাদ্যবর্জ্য। এখন পর্যন্ত বিশ্বে খাবারের অপচয় নিয়ে জাতিসংঘের সংকলিত দ্বিতীয় প্রতিবেদন এটি। প্রতিবেদনটি তৈরিতে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করেছে অলাভজনক সংস্থা ডব্লিউআরএপি। খাবার অপচয় নিয়ে এটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ চিত্র উপস্থাপন করেছে। ডব্লিউআরএপির কর্মকর্তা রিচার্ড সোয়ানেল বলেন, ‘এটা আমাকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। প্রতিদিন এক বেলায় যত খাবার নষ্ট হয়, শুধু

তা দিয়েই বর্তমানে অনাহারে থাকা প্রায় ৮০ কোটি মানুষের সবাইকে খাওয়ানো সম্ভব।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে যত খাবার নষ্ট হয়েছে, তার ২৮ শতাংশ নষ্ট হয়েছে রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন ও হোটেলের মতো খাদ্য পরিষেবা ব্যবস্থাগুলোতে। কসাই ও মুদি দোকানে নষ্ট হয়েছে ১২ শতাংশ খাবার। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৬০ শতাংশ খাবার নষ্ট হয়েছে বাসাবাড়িতে। এর পরিমাণ ৬৩ কোটি ১০ লাখ টন। সোয়ানেল মনে করেন, এ ধরনের অপচয় হওয়ার বড় কারণ, মানুষ তাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার কিনছে। এছাড়া তারা কতটুকু খেতে পারবে তার আন্দাজ করতে পারছে না। এতে খাবার উচ্ছিষ্ট থেকে যাচ্ছে। সোয়ানেল আরেকটি বিষয়ের কথা বলেছেন। তা হলো, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ।

উৎপাদিত খাবার নষ্ট হচ্ছে কারণ, মানুষ ভুলবশত ধারণা করে যে তাদের খাবারের মেয়াদ নেই। খাবার নষ্ট শুধু ধনী দেশের সমস্যা নয় সমস্যাটি কেবল ধনী দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ২০২১ সালের ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট বা খাদ্যবর্জ্য সূচক রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে খাদ্য অপচয়ের পার্থক্য কমে এসেছে। বর্তমানে উচ্চ আয়, উচ্চ-মধ্যম আয় এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বাসাবাড়িতে খাদ্য অপচয়ের গড়ে বছরে মাথাপিছু মাত্র সাত কিলোগ্রামের পার্থক্য। তবে এক্ষেত্রে শহুরে ও গ্রামীণ জনসংখ্যার মধ্যে বেশ তারতম্য দেখা যায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে গ্রামীণ এলাকায় সাধারণত কম অপচয় হয়। এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো গ্রামাঞ্চলে পোষা প্রাণী, পশুখাদ্য

ও সার তৈরির জন্য খাদ্যবর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে বেশি খাবার অপচয় সৌদি আরবে সম্প্রতি বিশ্বে খাবার অপচয় বা নষ্ট করার দিক দিয়ে শীর্ষ অবস্থানে থাকা দেশের নাম জানা গেছে। মুসলিম এই দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। অথচ এই দেশটিকে ইসলামের বিভিন্ন দিক থেকে অনুসরণ করে সারাবিশ্বের মুসলিম দেশগুলো। জাতিসংঘের ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর যে পরিমাণ খাবার নষ্ট হয় তার অর্ধেকেই হয় মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক পোগ্রামের কর্মকর্তা শেফ লাইলা ফাতাল্লাহ জানান, সৌদিতে প্রতি বছর যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন বা তৈরি করা হয় তার ৩৩ শতাংশই অপচয় করা হয়। এ বিষয়টি স্বাভাবিকের অনেক বাইরে চলে যাওয়ায়

কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও জানান তিনি। গত বছর সৌদি গ্রেইনস অর্গানাইজেশন (সাগো) এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, খাবার ক্রয়ের জন্য মানুষ যে অর্থ ব্যয় করেন সেটির ওপর ভিত্তি করে তারা খুঁজে পেয়েছেন- খাবার নষ্টের কারণে প্রতিবছর ৪০.৪ বিলিয়ন রিয়াল অপচয় হয়। সংস্থাটির গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, সৌদি আরবে ৪.০৬ মিলিয়ন টন অথবা ৩৩.১ শতাংশ খাদ্য অপচয় হয়। যার অর্থ একজন ব্যক্তি গড়ে ১৮৪ কেজি খাবার নষ্ট করেন। সৌদির সব অঞ্চলকে নিয়ে এ গবেষণাটি চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, শুধুমাত্র সবজিই নষ্ট হয় ৩ লাখ ৩৫ হাজার টন। যারমধ্যে রয়েছে ৩৮ হাজার টন ধুন্দুল, ২ লাখ ২ হাজার টন আলু, ৮২ হাজার টন শসা, ১ লাখ ১০ হাজার টন পেঁয়াজ ও ২ লাখ ৩৪ হাজার টন টমেটো। গবেষণায় সংগ্রহ করা ৩০ হাজার ৮০০ স্যাম্পল থেকে আরও ওঠে এসেছে, সৌদিতে প্রতি বছর প্রধানতম খাদ্যের মধ্যে ৯ লাখ ১৭ হাজার টন আটা ও রুটি, ৫ লাখ ৫৭ হাজার টন চাল এবং ২২ হাজার টন ভেড়ার মাংস অপচয় হয়। এছাড়া উল্লেখযোগ্য অপচয়ের মধ্যে আরও রয়েছে ১৩ হাজার টন উটের মাংস, মুরগির মাংস ৪ লাখ ৪৪ হাজার টন। এছাড়া ৪১ হাজার টন অন্যান্য মাংস নষ্ট করা হয় সৌদিতে। সৌদির মানুষ প্রচুর পরিমাণে ফলও অপচয় করে থাকেন। প্রতিবছর দেশটিতে নষ্ট হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার টন খেজুর, ৬৯ হাজার টন কমলা, ১২ হাজার টন আম এবং ১ লাখ ৫৩ হাজার টন তরমুজ। খাদ্য অপচয়ে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও বাংলাদেশে প্রতি বছর যত খাবার উৎপাদন হয়, তারও একটি বড় অংশ ভাগাড়ে যায়, মানে নষ্ট হয়। ইউএনইপি ২০২১ সালে ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স নামে রিপোর্ট প্রকাশ করে যাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে এক কোটি ৬ লাখ টন খাদ্য অপচয় হয়। মাথাপিছু খাদ্য অপচয়ের হারও বাংলাদেশে বেশ বেশি। ইউএনইপির ওই ইনডেক্স অনুযায়ী একজন বাংলাদেশি বছরে ৬৫ কেজি খাদ্য উপাদান কিংবা তৈরি খাদ্য নষ্ট করেন। ইউএনইপির রিপোর্ট অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি খাবার অপচয় হয় চীনে। সেখানে বছরে খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ ৯ কোটি ১৬ লাখ টন। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ খাদ্য অপচয় হয় বাংলাদেশে।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
গরমে ট্রেনের হাইড্রোলিক ব্রেকে আগুন, আতঙ্কে যাত্রীরা পিচ গলে ঝুঁকিতে সড়ক ভারতের লেন্স দিয়ে বাংলাদেশকে দেখে না যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন কর্মকর্তা যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ মিথ্যা: হামাস নিউইয়র্কে বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবে উপচে পড়া ভিড় যুক্তরাষ্ট্রকেই বিশ্বের নেতৃত্বে থাকতে হবে ২৬ এপ্রিল শুক্রবার নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাচ্ছে মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত আঙিনায় চাষাবাদের প্রস্তুতি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটিতে ক্যারিয়ার বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত এমটিএর বিনামূল্যের বাস পরিসেবা শেষ হচ্ছে চলতি বছরেই ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদ প্রকাশ করতে হবে রেকর্ড দাবদাহে ওষুধের মান নষ্টের শঙ্কা পঁচাত্তরেও তিনি ‘স্বপ্নচারিণী’ জীবনের শেষ বিসিএসটা দিতে পারলেন না ফাহাদ যুক্তরাষ্ট্র গেলেন বিএনপি নেতা আমির খসরু সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে কলমে স্বতন্ত্র এমপিদের তোপের মুখে নৌকার কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও অনুশাসন উপেক্ষিত জীর্ণ রেল সেতুতে পদে পদে বিপদ কাল খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ সিদ্ধান্ত প্রাথমিকের গরম ভোগাবে আরও ৫ দিন