এক বন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে আরেকজনের বিরাগভাজন হতে পারি না: সেনাপ্রধান – U.S. Bangla News




এক বন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে আরেকজনের বিরাগভাজন হতে পারি না: সেনাপ্রধান

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ | ১০:২৪
সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যা করা প্রয়োজন, তা অবশ্যই করা হবে। তবে দেশটির সামরিক নেতাদের সঙ্গে সখ্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, দেশটির সামরিক নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই এক বন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে আরেকজনের বিরাগভাজন হতে পারি না। এ বাস্তবতা বুঝে যেটা ভালো, আমরা সেটাই করছি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন। ‘ডিফেন্স ডিপ্লোম্যাসি : স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান এএফএম গওসোল আযম সরকার। স্বাগত বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু

বকর সিদ্দিক খান। সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেমিনারে সামরিক কূটনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে চারটি বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় মুক্ত আলোচনা। এ সময় কেউ কেউ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে সেনাপ্রধান মিয়ানমারের জেনারেলদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে বাস্তব সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সামরিক কূটনীতি শুধু সামরিক বিষয়ের ওপর সীমাবদ্ধ নয়। সামরিক ক‚টনীতি কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয়ও নয়। রাষ্ট্রের সব অঙ্গ একসঙ্গে কাজ করবে। কিভাবে এ সহযোগিতা হতে পারে, সেটাই হলো চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সামরিক কূটনীতি চলে। এজন্য সামর্থ্য বাড়াতে

হবে। আর সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন সম্পদ ও বাজেট। প্রথম বিশ্বের একজন মুখপাত্র এবং তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র সমান হবে না। এজন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর কাজ শুধু যুদ্ধ করা নয়; বরং জাতীয় স্বার্থরক্ষায় কিভাবে যুদ্ধ পরিহার করা যায়, সেটাও দেখা সামরিক বাহিনীর কাজ। আজ যারা বন্ধু, কাল তারা বন্ধু থাকবেন এমন নয়। এটাও আমাদের ভুললে চলবে না। সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের কূটনীতি হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। সামরিক বাহিনী কূটনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। কূটনীতি হলো, বিদেশের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থরক্ষায় রাষ্ট্রের যে কোনো ব্যক্তির প্রচেষ্টা। অর্থনৈতিক কূটনীতি, ক্রীড়া কূটনীতি, গানবুট কূটনীতি-

এমন নানা ধরনের কূটনীতি আছে। সেনাপ্রধান এ সময় জানান, কুয়েত বাংলাদেশকে ১৮টি মূল্যবান অ্যারাবিয়ান হর্স দিয়েছে। এটা সামরিক কূটনীতির ফলে হয়েছে। সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কোনো দেশে দায়িত্ব পালনে যাওয়ার সময় তাদের বলে দিই, তারা প্রত্যেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। তাদের এমনভাবে কাজ করতে হবে যাতে তারা ফিরে আসার পর স্বাগতিক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হয়। সেনাপ্রধান শফিউদ্দিন সামরিক বাহিনীর পাঁচটি দায়িত্বের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব রাষ্ট্রের সর্বভৌমত্ব রক্ষা করা। দ্বিতীয় কাজ- বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় জাতিগঠনে দায়িত্ব পালন। তৃতীয় কাজ- বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় দুর্যোগ মোকাবিলা করা। দুর্যোগ মোকাবিলা শুধু দেশের ভেতরে নয়। দেশের বাইরেও করা যায়।

বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী চীন, ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, তুরস্কে দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করেছে। চতুর্থ কাজ হলো বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা করা। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী এই কাজ করছে। পঞ্চম কাজ হলো বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এটা শুধু শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে নয়। কাতারে পাঁচ হাজারের বেশি লোক পাঠিয়ে এই কাজ সেনাবাহিনী করেছে। এটা শুধু সেনাবাহিনীর লোক নয়, বরং পুলিশ ও বেসামরিক লোকও পাঠানো হয়েছে। জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ সেনাপ্রধান হওয়ার আগে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে তার অংশ নেওয়ার স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ঘটনা। আমি তখন মধ্য আফ্রিকায় জাতিসংঘ মিশনে নিযুক্ত হয়েছিলাম। ওই বছর ৯ অক্টোবর আমি অ্যামবুশের মুখে পড়ি। সৌভাগ্যবশত

ওইদিনই আমি একটি বুলেটপ্রুফ আর্মাড ভেহিক্যাল সঙ্গে নিয়েছিলাম। সেখানে গ্রেনেড নিক্ষেপ হলেও আমি বেঁচে যাই। ওই ঘটনায় অন্য দেশের কয়েকজন সৈন্য প্রাণ দিয়েছেন। কয়েকজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীসহ অনেকে আহত হন। কারণ, সব যানবাহনই বুলেটপ্রুফ ছিল না। তাই প্রথমে নিজেদের সুরক্ষা করতে হবে। তারপর আমাদের ওপর ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের প্রেক্ষাপটে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, পুরো কাজটাই খুব চ্যালেঞ্জিং। অনেক নিরপেক্ষ থেকে কাজ করতে হয়। চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এই নীতিতে বিশ্বাসী বাংলাদেশ। আমাদের ক‚টনীতিকরা সামরিক কূটনীতির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব ভালোভাবে জানেন। ক্রয়ের ক্ষেত্রেও

কোথা থেকে ক্রয় করলে সুবিধা পাওয়া যাবে, সেটা আলোচনা করা হয়। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি। সেমিনারে চারটি বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম আলী আশরাফ ‘প্রতিরক্ষা কূটনীতির পরিবর্তনশীল ধারা এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য অর্জন’, বিআইএসএস-এর গবেষণা ফেলো এএসএম তারেক হাসান শিমুল ‘ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি : বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কূটনীতির চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ’, মেজর জেনারেল (অব.) মাইন উল্লাহ চৌধুরী ‘জাতিসংঘ ও অন্যান্য বৈদেশিক মিশনে প্রতিরক্ষা কূটনীতি: দিগন্তের অনুসন্ধান’ এবং এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হোসেন ‘প্রতিরক্ষা কূটনীতির বর্তমান চর্চা এবং ভবিষ্যৎ গতিপথ: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। বক্তারা বলেন, একটি দেশের বৈদেশিক ও নিরাপত্তা

নীতির উদ্দেশ্য পূরণে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিরক্ষা কূটনীতি একটি কার্যকর কূটনৈতিক হাতিয়ার এবং সংকট প্রতিরোধের ব্যবস্থা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিরক্ষা কূটনীতিকে বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হিসাবে ব্যবহার করা হয়, যা দেশের জাতীয় স্বার্থ এবং পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। তারা আরও বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণ প্রতিরক্ষা কূটনীতির একটি দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশকে বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী এর গুরুত্ব ও প্রভাব বৃদ্ধি করার সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রতিরক্ষা কূটনীতির ধারণা ও আবেদন বিস্তৃত হচ্ছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। সেমিনারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও

সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তা, বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধি, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, সাবেক কূটনীতিক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, আরও করতে হবে: মির্জা ফখরুল সৌদি আরবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত, বিভিন্ন স্থানে বন্যা হাসপাতালে খালেদা জিয়া বিদেশে পালানোর সময় শত কোটি টাকা আত্মসাতের হোতা বিমানবন্দরে গ্রেফতার শিশু ধর্ষণের বর্ণনা দিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি র‌্যাব কর্মকর্তা ‘রহস্যঘেরা’ মিল্টন সমাদ্দার আটক বিএনপির কর্মীরা ক্লান্ত, নেতারা হতাশ: ওবায়দুল কাদের যেসব ভয়ংকর অভিযোগ উঠেছে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ভারতে বিমান যাত্রায় সুখবর, বাদ পড়ল ৭টি চার্জ চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিল ৩৫ প্রত্যাশীরা আরও ৬ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ তাপমাত্রায় ৬৮ বছরের রেকর্ড ভাঙল কলকাতা ‘ভুল চিকিৎসা বলার অধিকার কেউ রাখে না, রাখে একমাত্র বিএমডিসি’ বোমা হামলার হুমকি, দিল্লির ১০০ স্কুলে তুলকালাম! ভারতের নির্বাচনি প্রস্তুতি দেখার আমন্ত্রণ পেল আওয়ামী লীগ আইপিএলে নাচতে নাচতে অতিষ্ঠ চিয়ারলিডাররা চীন থেকে থ্রেডস ও হোয়াটসঅ্যাপ সরাল অ্যাপল সোনার দাম সাত ধাপে কত কমল? নারী স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার, সৌদিতে তরুণীর ১১ বছরের কারাদণ্ড ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি