ইসিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভয় ২০১৪ সালের মতো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা নেই

৩১ অক্টোবর, ২০২৩ | ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বড় ধরনের শঙ্কা দেখছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জনবল ও কারিগরি সক্ষমতা বেড়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে যে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, আসন্ন নির্বাচনে সেই ধরনের পরিস্থিতির তৈরি হওয়ার আশঙ্কা নেই। বিএনপির নাম উল্লেখ না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে এক ধরনের প্রস্তুতি আর আংশগ্রহণমূলক না হলে আরেক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে, সেটি মোকাবিলার সক্ষমতা ও প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তারা এসব তথ্য জানান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সোমবার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে ইসি। বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। এবারই প্রথম নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। তফশিল ঘোষণার পরও এ ধরনের আরও বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে ইসি। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন ও তাদের প্রধানরা নির্বাচন কমিশনের কাছে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এতে এখন পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। নির্বাচন আয়োজনে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপির ডাকা আগামী তিন দিনের অবরোধের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি যেন না হয়, সে বিষয়ে তারা সতর্ক থাকবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন তারা। তফশিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের আগ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সময় সময় কমিশনকে জানাবে। তখন প্রয়োজন হলে কমিশন আবারও তাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবে। নভেম্বরের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি। জানা যায়, বৈঠকে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মূল্যায়ন, পর্যালোচনাসহ ১৯টি এজেন্ডা ছিল। বৈঠকের সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে একটি সংস্থার প্রধান বৈঠকে বলেন, ২০১৪ সাল আর ২০২৪ সালের পরিস্থিতি এক নয়। বর্তমানে পুলিশের জনবল, টেকনোলজি, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা সবই বেড়েছে। ওই সময়ে সারা দেশে যে ভয়ানক ও অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, এবার তা হবে না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজিবির ৯৮৩ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। এবার ওই সংখ্যা বাড়িয়ে ১১০০-১২০০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করতে পারবে। একইভাবে আনসার বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ৫ লাখের বেশি হবে। ভোটকেন্দ্রে সকালে ব্যালট : নির্বাচন কমিশন সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পাঠানোর পরিকল্পনার কথা বলে আসছে। বৈঠকের একপর্যায়ে গত নির্বাচনে রাতে ভোট পড়ার অভিযোগ তোলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, সত্য-মিথ্যা জানি না। এটা বিশ্বাস করার মতো কিছু দেখিনি। তবুও মানুষের মধ্যে পারসেপশন আছে রাতে ভোট কাটা হয়েছে। এসব কারণে সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পাঠানোর চিন্তা করছি। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন একটি বাহিনীর প্রধান। তিনি বলেন, এটা বিরোধীদের গুজব। কোথাও এর কোনো প্রমাণ নেই। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনীর প্রধান জানান, আমরা শুনতে পারছি কেন্দ্রে সকালে ব্যালট পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন। এবার নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রেই পুলিশের দুজন সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মেট্রোপলিটন ও দুর্গম এলাকা এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এ পরিস্থিতিতে সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কোনো কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ব্যালট পেপার পাঠানো না গেলে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। বৈধ অস্ত্র জমা : বৈঠকে ইসির এজেন্ডায় বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার প্রস্তাবনা তোলে ইসি। তবে এতে আপত্তি জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা যুক্তি দিয়ে বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হয়নি। এছাড়া বৈধ অস্ত্রের সঙ্গে অস্ত্রধারীর নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। পুলিশ নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকায় তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া কষ্টকর। এছাড়া অস্ত্র থানায় জমা নেওয়া ও নির্বাচন শেষে ফেরত দেওয়া জটিল প্রক্রিয়া। নির্বাচনের তিন মাস থানায় অস্ত্র জমা রাখা হলে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তবে অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবেন বলে জানান তারা। জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে প্রস্তুতির বিষয়ে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল হরতাল শেষে ইতোমধ্যে আরেকটি সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে। এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। আবার যখন যে পরিস্থিতি আসবে, সেটাও তারা উপস্থাপন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে প্রতিবেদন, তাতে এখন পর্যন্ত পরিবেশ শান্তিপূর্ণ আছে। তফশিলের পরিবেশ আছে। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের, আনসার ও ভিডিপি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান, এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম ও র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, ডিজিএফআই ও কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালকের পক্ষে তাদের প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।