পিরোজপুরে ভোটার তালিকার হালনাগাদে মৃত ব্যক্তিরা

২৯ মে, ২০২৩ | ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পৌরসভায় মৃত ব্যক্তিও উঠে এসেছে ভোটার তালিকার হালনাগাদে। এমনই প্রায় শতাধিক মৃত ব্যক্তিদের রেখেই ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার অভিযোগ উঠেছে। ওই তালিকায় ৫ থেকে ৬ বছর আগের মৃত ব্যক্তিরাও রয়েছে। সম্প্রতি ভোটার পুনর্বিন্যাসেও তাদের রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয় এক ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অন্য ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় দেখানো হয়েছে। এসব অনিয়ম রেখেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করায় উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসীরা। জানা যায়, ২০২২ সালের ২০ মে থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশজুড়ে চার ধাপে ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ চলে। নির্বাচন কমিশন থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মধ্য দিয়ে তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি শুরু করা হয় তখন। এতে যোগ্য ব্যক্তিদের ভোটার করার পাশপাশি ভোটার তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সেখানে হালনাগাদে যেমন মৃতদের ভোটার রাখা হয়েছে, তেমনি ভোটার পুনর্বিন্যাসেও তাদের রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে ২২ মে বিকেলেই অনিয়ম ও ভুল-ভ্রান্তি সংশোধনের আবেদন করেছেন অনেক ভুক্তভোগী। পৌরসভার ২০ জন ভোটার লিখিতভাবে ওইদিনই উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়, প্রধান নির্বাচন কমিশন কার্যালয় এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব বরাবর এসব ভুলভ্রান্তি উল্লেখ করে এলাকাবাসির পক্ষে তা সংশোধন করার আবেদন করেন মো. সওকত ইকবাল নামের একজন স্থানীয় ভোটার। প্রকাশ করা ভোটার তালিকায় দেখা যায়, পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে প্রায় দুই’শ ভোটারের নাম রয়েছে, যারা অনেক আগেই মারা গেছেন। ডেথ সার্টিফিকেটে দেখা যায় ভোটার নং ৭৯০৫১২০০০১০০ ইলিয়াস খান, পিতা- আসমত আলী খান ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয়। ভোটার নং ৭৯০৫১৬৮১৪৭৭৯ আব্দুল খালেক, পিতা- গফুর ২০১৮ সালের ২৮ আগষ্ট মারা গেছেন। একইভাবে ভোটার তালিকায় দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল আজিজ সিকদার, আবুল হাশেম হাওলাদার, আব্দুল খালেক বেপারী, আব্দুর রব হাওলাদার, গাজী আফজাল হোসেন, মহব্বত আলী হাওলাদারসহ আরো অনেক মৃত ভোটার রয়েছেন হালনাগাদ ভোটার তালিকায়। এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ আবেদনকারীদের। উল্টো যারা অভিযোগ করেছে, তারা যথেষ্ট তথ্য ও প্রমাণ দিতে পারেনি বলে তাদের নামে চিঠি পাঠিয়েছে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়। যদিও আইন অনুযায়ী তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার দায়িত্ব নিজ নিজ নির্বাচন কার্যালয়ের। স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, আগের হালনাগাদ ভোটার তালিকা ঠিকমতো করা হলে এ সমস্যা তৈরী হতো না। সামনে আবারো হালনাগাদ করা হবে। সেখানে এই জটিলতার থাকবে না। জানা যায়, গত ১৫ মে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনের জন্য পুনর্বিন্যাস করা সীমানা অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য লিখিত নির্দেশনা জারি করা হয়। মাত্র ১০ কার্য দিবসের মধ্যে নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য একজন কর্মকর্তাকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়ারও নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। সে নির্দেশনা অনুযায়ী মাত্র চার কার্য দিবস পরেই ২২ মে নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে তা প্রকাশ করে ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়। হালনাগাদ করা ভোটার তালিকায় কারো কোন অভিযোগ থাকলে তা ২৩ ও ২৪ মে অফিস চলাকালীন সময়ে ভোটার তালিকা পূনর্বিন্যাসকারী কর্মকর্তা বরাবর লিখিতভাবে জানানোর অনুরোধ করা হয়। হালনাগাদকৃত প্রকাশ করা ভোটার তালিকায় দেখা যায়, পৌরসভায় নয়টি ওয়ার্ডে প্রায় দুই’শ ভোটারের নাম রয়েছে যারা অনেক আগেই মারা গেছেন। যাদের অনেকেরই ডেথ সার্টিফিকেট এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। এমন অনেকের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে যারা অন্য এলাকার। চাকরির সুবাদে এক সময় ভান্ডারিয়া পৌরসভায় থাকলেও গত ৫ বছর ধরে তারা বদলী হয়ে অন্য জেলা বা বিভাগে চলে গেছেন। কিন্তু তাদের নামও হালনাগাাদ করা ভোটার তালিকায় রয়েছে। এছাড়া সবচেয়ে বেশি ভুল রয়েছে ওয়ার্ড ভিত্তিক তালিকায়। এমন অনেক ভোটার রয়েছেন যাদেরকে নিজ ওয়ার্ডের পরিবর্তে অন্য ওয়ার্ডের ভোটার দেখিয়ে তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। শুধু ১ নম্বর ওয়ার্ডেই এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন অর্ধ শতাধিক। সবমিলিয়ে ২০০ এর বেশি ভোটারকে এভাবে অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৮০০ ভোটার রয়েছে, যারা ২০২১ সালের ২১ জুনের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পাশের শিয়ালকাঠী ইউনিয়নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তাদেরকেও নতুন হালনাগাদ হওয়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।