বাংলাদেশ-চীন পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক, যেসব কথা হলো

২৮ মে, ২০২৩ | ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

দক্ষিণ ও দিক্ষণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং। শনিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ-চীন পররাষ্ট্র পর্যায়ের বৈঠকে তারা এ গুরুত্বারোপ করেন। এ বৈঠকে তারা নিজ নিজ দেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডং বলেন, তিনি দশ বছর পর বাংলাদেশ সফর করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন দেখে তিনি খুবই মুগ্ধ। উভয় প্রতিনিধি দল পারস্পরিক স্বার্থ এবং বহুপাক্ষিক ফোরামে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। চীনের পক্ষ থেকে এক চীন নীতিতে অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করে। উভয়পক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন মানের অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায়। উভয়পক্ষই বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাবসংক্রান্ত বিষয় আরও ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছে। উভয়পক্ষ ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে কার্যকর হওয়া ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্ক এবং কোটা ফ্রি (ডিএফকিউএফ) সুবিধা ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা করেছে। চীনের প্রতিনিধিরা প্রয়োজনীয় মানদণ্ডের নিরিখে বাংলাদেশ থেকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং হিমায়িত খাবার আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে ডিএফকিউএফ কভারেজের মধ্যে শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, পায়ে ব্যবহার্য্য পণ্য, নন-নিট পোশাক ইত্যাদি রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে। সুন ওয়েইডং চট্টগ্রামে চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের দেশের খামারিদের বিনিয়োগ উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-গুয়ানঝু সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার জন্য চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দুই পক্ষ নিয়মিত কনস্যুলার পরামর্শ চালু করতে সম্মত হয়। বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজিতে উদ্ভাবনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করে। দুপক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগে অবদান রাখার বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করে। অনলাইন জুয়া এবং মাদক পাচারের মতো উদীয়মান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে চীন সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। জননিরাপত্তা ইস্যুতে নিবেদিত সংলাপে দুপক্ষই নীতিগতভাবে সম্মত হয়। বৈঠকে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য বিনিময়ের জন্য বাংলাদেশ চীনকে ধন্যবাদ জানায়। এ বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটসহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়েও দুপক্ষ আলোচনা করেছে। বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন সহজ করার জন্য চীন প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে। সুন ওয়েইডং উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকারী হবে। পাইলট প্রজেক্টের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে ‘গো অ্যান্ড সি’ সফর এবং বাংলাদেশে ‘কাম অ্যান্ড টক’ সফরের ব্যবস্থা করার জন্য চীনের পক্ষ বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন চীনকে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের চলমান প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন।