প্যাকেটজাত ৬২ শতাংশ খাদ্যে উচ্চমাত্রায় লবণ: গবেষণা

২১ মে, ২০২৩ | ১০:৫৪ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ সপ্তাহে অন্তত একবার প্রক্রিয়াজাতকৃত প্যাকেটজাত খাবার গ্রহণ করে। আর প্যাকেটজাত ৬২ শতাংশ খাদ্যে উচ্চমাত্রায় লবণের উপস্থিতি রয়েছে, যা হৃদরোগ, কিডনি বিকলসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাদ্যগ্রহণে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন। রোববার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটকৃত খাবারে লবণ নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং রিসলভ টু সেভ লাইভস (আরটিএসএল)-এর সহযোগিতায় এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের চিফ কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক সভায় সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন হাসপাতালের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (ক্লিনিক্যাল রিসার্চ) ডা. শেখ মো. মাহবুবুস সোবহান। তিনি বলেন, দেশের বাজারে বিদ্যমান প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্যে লবণের উপস্থিতি নির্ণয়ে ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আট বিভাগীয় শহর থেকে ১ হাজার ৩৯৭ ধরনের প্রক্রিয়াজাতকৃত প্যাকেটজাত খাবারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১০৫ ধরনের খাবার ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেখানে ৬২ শতাংশ খাবারে অধিক মাত্রায় লবণ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ খাবারে অত্যধিক এবং ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ খাবারে বেশি লবণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতকৃত প্যাকেটজাত খাবারে সঠিক মাত্রায় লবণ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৫ গ্রাম লবণ প্রয়োজন। সেখানে বাংলাদেশের মানুষ ৯ গ্রামের বেশি গ্রহণ করছে। মতবিনিময় সভায় মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (বিএসটিআই) উপপরিচালক এনামুল হক বলেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বাজারে থাকা খাবারের প্যাকেটগুলোর লেবেলে সঠিক তথ্য থাকে না। অনেক কোম্পানি খাদ্যপণ্যের উপাদানের সঠিক মাত্রা লুকিয়ে বাজারজাত করে। এতে ভোক্তারা প্রতারিত হন। নগরায়ণের জীবনে প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা কষ্টকর। তাই এই অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, প্রক্রিয়াজাতকৃত প্যাকেটজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে। তারপরও সাধারণ মানুষ এটি গ্রহণ করছে। এর মূল কারণ সচেতনতার অভাব। ভোক্তাদের সচেতন করতে হবে। এজন্য প্যাকেটজাত খাবারের সামনের দিকে পণ্যের খাদ্য উপাদানের তথ্য থাকতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, খাদ্যে লবণ ব্যবহারের পরিমাণ নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো আইন নেই। তাই সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ক্ষতিকর দিকগুলো জানাতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক বলেন, প্রক্রিয়াজাতকৃত প্যাকেটজাত খাবারে লবণের সঠিক ব্যবহারের জন্য সরকারকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে উলে­খ্যযোগ্য হচ্ছে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ লবণ ব্যবহার করা যাবে, সেটি নির্ধারণ করে দেওয়া। প্যাকেটের সামনে লেবেল ঠিক করে দেওয়া। খাবারে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো। একই সঙ্গে লবণ খাওয়ার ভুল ধারণাগুলো বাদ দিতে হবে। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি লিড-বাংলাদেশ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) অধ্যাপক ডা. ইউনুছুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক খালেদা ইসলাম, বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (নিউট্রিশন) ফারিয়া শবনব ও ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (এনসিডি) ডা. ফারজানা আক্তার ডরিন, জাতীয় পুষ্টিসেবার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. ফাতেমা আক্তার প্রমুখ।