সঞ্চয় গেলো, স্বপ্ন গেলো, জীবন গেলো : ১৫ হাজার কোটি টাকার লুটপাট শেষে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা ইউনুস কর্তৃক
২০২৪ সালের জুলাইয়ে যখন দেশজুড়ে রক্তস্নান হচ্ছিলো, যখন রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকছিলো, তখন কেউ কি ভেবেছিলো যে এই অরাজকতার আসল শিকার হবে দেশের সাধারণ মানুষ? যারা নিজেদের সারাজীবনের সঞ্চয় জমা রেখেছিলো বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, যারা স্বপ্ন দেখতো একটা নিরাপদ ভবিষ্যতের, তারা আজ দাঁড়িয়ে আছে সর্বস্বান্ত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। ইউনুস এবং তার তথাকথিত অ-সরকার এখন ৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছে, আর এই সিদ্ধান্তের ভয়াবহতা বুঝতে হলে শুধু সংখ্যাগুলো দেখলেই চলে। ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এই বিশাল অঙ্কের টাকা আটকে আছে এই ৯টি প্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত আমানত। কিন্তু সবচেয়ে নির্মম সত্যটা হলো, এই আটটি প্রতিষ্ঠানের গড় শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ৯৫ টাকা। সহজ ভাষায়, দেনা পরিশোধের পর সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। একেবারে শূন্য। পিপলস লিজিংয়ে ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা, অ্যাভিভা ফাইন্যান্সে ৮০৯ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ৬৪৫ কোটি টাকা আটকে আছে সাধারণ মানুষের। এই মানুষগুলো কারা? হয়তো কোনো সরকারি চাকরিজীবী যিনি অবসরের পর নিরাপদ জীবনের জন্য সঞ্চয় করেছিলেন। হয়তো কোনো ব্যবসায়ী যিনি সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য টাকা জমিয়েছিলেন। হয়তো কোনো মধ্যবিত্ত পরিবার যারা একটা বাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখতো। আর এখন এই মানুষগুলোর কী হবে? ইউনুস এবং তার দল কি এই প্রশ্নের উত্তর দেবে? বিদেশি টাকায়, জঙ্গি সংগঠনের সহায়তায় আর সামরিক বাহিনীর সমর্থনে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা কি এই সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা ভাবে? যে সুদী মহাজন সারাজীবন দরিদ্রদের নিয়ে ব্যবসা করেছে, নোবেল পুরস্কার জিতেছে, সে কি জানে একজন মধ্যবিত্ত মানুষের সঞ্চয় হারানো মানে কী? দেশের নির্বাচিত সরকারকে ক্যু করে ফেলে দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা এখন একের পর এক অর্থনৈতিক খাত ধ্বংস করে চলেছে। প্রথমে ৫টি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে জোর করে একীভূত করা হলো। এখন ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কাল আরও কতগুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে, কে জানে? সমন্বিত ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫। কী সুন্দর নাম! আইনি ভাষায় সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা একটা অধ্যাদেশ, যার আড়ালে লুকিয়ে আছে হাজার হাজার পরিবারের ধ্বংসের গল্প। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন লিকুইডেটর নিয়োগ করবে, সম্পদ বিক্রি করবে, আর যা পাওয়া যাবে তা দাবিদারদের মধ্যে বণ্টন করবে। কিন্তু যখন শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যই ঋণাত্মক, তখন সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা পাবে কী? এই ৯টি প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপি ঋণ ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা পুরো এনবিএফআই খাতের খেলাপি ঋণের ৫২ শতাংশ। এত বিশাল পরিমাণ খেলাপি ঋণ হলো কীভাবে? এই প্রতিষ্ঠানগুলো কাদের ঋণ দিয়েছিলো? কারা এই ঋণ নিয়ে পালিয়েছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কি কেউ দেবে? নাকি শুধু সাধারণ আমানতকারী আর শেয়ারহোল্ডারদের ওপর দিয়েই পুরো বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হবে? ইউনুস এবং তার দল ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের অর্থনীতি ধসে পড়ছে। ডলারের দাম আকাশছোঁয়া, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে, আর এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটা একটা পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ। দেশের অর্থনীতিকে পুরোপুরি ধসিয়ে দিয়ে কোনো বিদেশি শক্তির স্বার্থ হাসিল করা হচ্ছে কিনা, সেটা এখন গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। খাওয়া শেষে থালা-বাসন ধুয়ে রাখলেই কি সব ঠিক হয়ে যায়? লুটপাট করে, দেশের সব অর্থনৈতিক খাত ধ্বংস করে, এখন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেই কি সব মিটে যায়? যারা তাদের সারাজীবনের সঞ্চয় হারাবে, যারা রাতারাতি নিঃস্ব হয়ে যাবে, তাদের কী হবে? কয়েকদিন পর যদি ঋণে জর্জরিত সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের আত্মহত্যার খবর আসতে শুরু করে, তাহলে কি কেউ অবাক হবে? আসলে হওয়ার কিছু নেই। কারণ এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। ইউনুস যেখানে যায়, সেখানে শান্তি থাকে না। শুধু ধ্বংস আর বিপর্যয়ের গল্প থাকে। মনে রাখা দরকার, এই ৯টি প্রতিষ্ঠানের পেছনে আছে হাজার হাজার কর্মচারী, যারা চাকরি হারাবে। আছে লাখ লাখ আমানতকারী আর শেয়ারহোল্ডার, যারা তাদের অর্থ হারাবে। আছে অসংখ্য পরিবার, যাদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। আর এসবের জন্য দায়ী কে? যারা একটা নির্বাচিত সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাত করে ক্ষমতায় এসেছে, তারাই। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যে রক্তস্নান হয়েছিল, তার ফলাফল এখন ভোগ করছে পুরো দেশ। অর্থনীতি ধসে পড়ছে, মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, আর ক্ষমতার মসনদে বসে থাকা ইউনুস এবং তার দল শুধু কাগজে কলমে সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছে। তারা জানে না, অথবা জানতে চায় না, যে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়বে লাখ লাখ মানুষের জীবনে। দেশের অর্থনীতির এই করুণ দশা দেখে একটাই প্রশ্ন জাগে: কোথায় যাচ্ছে আমরা? একটা স্বাধীন দেশ, যার মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছিল, সেই দেশের অর্থনীতি কি এভাবেই ধ্বংস হবে? আর কতদিন এই অবৈধ সরকার দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে? কবে দেশের মানুষ বুঝবে যে ইউনুসের শান্তির নোবেল আসলে দেশের জন্য অশান্তির বার্তা?
