‘বাঁধের মাটি বড় বড় খণ্ড হয়ে ঝুপঝাপ শব্দে ভেঙে পড়ে’
খুলনার কয়রা উপজেলার সর্ব দক্ষিণের জনপদ কপোতাক্ষ নদের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে হঠাৎ বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশের উপক্রম হয়। স্থানীয়রা রাত জেগে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে এ যাত্রায় রক্ষা করেছেন। তবে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদীতীরবর্তী বাসিন্দাদের। স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নদের উপজেলার মাটিয়াভাঙ্গা এলাকার প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা ওই রাতে একটি রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হন। তবে জরুরিভিত্তিতে বাঁধ সংস্কারে ব্যবস্থা না নিলে যে কোনো সময় নোনা পানিতে প্লাবিত হবে কয়েকটি গ্রাম। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দিদারুল আলম জানান, সুন্দরবন ঘেঁষা আড়পাঙ্গাসিয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের মোহনা সংলগ্ন বাঁধটিতে এক মাস আগেই ফাটল দেখা দেয়। বিষয়টি পাউবোকে জানানো হলেও প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অল্প কিছু বস্তা ডাম্পিং করে দায়সারা কাজ করা হয়েছিল তখন। বৃহস্পতিবার রাতে আগের ফাটলটি হঠাৎ বড় হয়ে বাঁধ ধসে গেছে। তিনি বলেন, ভাঙনের খবর শুনে রাতেই ঘটনাস্থলে যান মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের সোহেল গাজী, আক্তারুল মোল্যা, নয়ন খাঁসহ অনেকেই। তারা গিয়ে দেখেন, বাঁধের মাটি বড় বড় খণ্ড হয়ে নদীতে ঝুপঝাপ শব্দে ভেঙে পড়ছে। তাৎক্ষণিক গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তারা দ্রুত রিং বাঁধ নির্মাণ করেন। এতে করে আর লোকালয় পানিতে প্লাবিত হয়নি। তবে জোয়ারের পানি যেভাবে বাড়ছে, এতে দ্রুত সংস্কার কাজ না করা হলে আবারও ভাঙনের ঝুঁকি আছে। মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের অজিয়ার শেখ বলেন, দেখতে দেখতে নদীর বাঁধ কীভাবে ভেঙে গেল, তা বুঝতে পারলাম না। মনে হলো বাড়িঘর সব তলিয়ে যাবে। তবে রিং বাঁধ দেওয়ায় এ যাত্রা মনে হয় রক্ষা হলো। আমাদের দাবি, বাঁধটি দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হোক। পাশাপাশি বর্ষার আগেই এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করা হোক। আমরা আর আতঙ্কের মধ্যে থাকতে চাই না। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওসমান গনি খোকন বলেন, বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে রাতেই রিং বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকানো সম্ভব হয়েছে। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় কয়রা উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের দুটি পোল্ডারে প্রায়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে উচ্চতা-প্রশস্ততা বৃদ্ধি, ঢাল সংরক্ষণ, নদীশাসন ও চর বনায়ন রয়েছে। মাটিয়াভাঙ্গার ভাঙন এলাকাটিও ওই প্রকল্পের অংশ। পাউবোর সাতক্ষীরা-২ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর কবীর বলেন বাঁধটির মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। কাজ চলমান অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধটি ভেঙে যায়। কংক্রিট ব্লক নির্মাণের সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতেই বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে পারায় এলাকা প্লাবিত হয়নি। তবে স্থানীয়দের দাবি, বর্ষার আগে বাঁধের কাজ শেষ না হলে বড় বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। তবে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, বরাদ্দ বিলম্ব, বালু-মাটির সংকট ও ভাটার সময়ের ওপর নির্ভর করতে হওয়ায় কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। মাটিয়াভাঙ্গা এলাকার বাঁধে জরুরিভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
