গাজায় শান্তি বাস্তবায়নে জোর যৌথ প্রতিরক্ষায় গুরুত্বারোপ

৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাহরাইনের রাজধানী মানামায় মিলিত হয়েছেন উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) নেতারা। গালফ অঞ্চলের দেশগুলো নিয়ে গঠিত জোটটির ৪৬তম শীর্ষ সম্মেলনে গাজায় শান্তি ফেরাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির পূর্ণাঙ্গতা চান নেতারা। পাশাপাশি দেশগুলোর মধ্যে যৌথ প্রতিরক্ষা ঢাল গড়ে তোলার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। বুধবার সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণে বাহরাইনের রাজা হামাদ বিন ঈসা আল খলিফা বলেছেন, ‘ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানোর জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।’ সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান নিজ দেশ থেকে গাড়িতে করে সৌদি-বাহরাইন সংযোগকারী সড়ক অতিক্রম করে সম্মেলনে যোগ দেন। বাহরাইনের রাজার আমন্ত্রণে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবারের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা। শীর্ষ সম্মেলনটি ২০২০ সালের পর প্রথমবারের মতো জিসিসি শীর্ষ সম্মেলনে ওমানের সুলতান হাইথাম বিন তারিকের উপস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। ২০১১ সালের পর ওমানের কোনো সুলতান এবার প্রথম অংশ নিলেন। শীর্ষ সম্মেলনে আরও যোগ দিয়েছেন, কুয়েতের আমির মিশাল আল আহমেদ আল জাবের আল সাবাহ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি। সম্মেলনের এজেন্ডায় প্রতিরক্ষা ও রাজনৈতিক সমন্বয়, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে উপসাগরীয় অবস্থানের সমন্বয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ছয়টি দেশ নিয়ে ১৯৮১ সালে জোটটি গঠিত হয়। দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন এবং ওমান। দ্য ন্যাশনাল জানায়, সম্মেলনটি এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন দ্রুত পরিবর্তনশীল অঞ্চলটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করছে। যদিও চলমান সংঘাতের টানাপোড়েনে দেশগুলো বিভক্ত। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা থেকে শুরু করে সংঘাত-সম্পর্কিত আঞ্চলিক কূটনীতির পথনির্দেশনা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন জরুরি বিষয় নিয়ে পরবর্তী ঘোষণা আসবে। সম্মেলনে জিসিসির মহাসচিব জসেম আল বুদাইভি বলেছেন, ‘আমাদের অবস্থান ও কণ্ঠস্বর এক। আমরা পররাষ্ট্রনীতিতে ঐক্যবদ্ধ। এবারের সম্মেলনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।‘ সম্মেলন শুরু আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপসাগরীয় দেশগুলো একটি যৌথ ব্যবস্থা চূড়ান্ত করার দিকে মনোনিবেশ করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একটি যৌথ প্রতিরক্ষা ঢাল গড়ে তোলা। আমরা দ্রুতই এই লক্ষ্যে পৌঁছাব।‘ আরব লীগের প্রাক্তন সহকারী মহাসচিব খলিল ইব্রাহিম আল থাওয়াদি বলেন, আরব বিশ্ব এখন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখে। গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোর সঙ্গে নিরন্তর সমন্বয়ের এখনই সময়। গাজার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যস্থতায় বারবার ইসরায়েলি লঙ্ঘন সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত হয়। ওমানি বিশেষজ্ঞ সালেম আল জেহোরির মন্তব্য, ‘আমরর সম্মিলিত নিরাপত্তা জোরদার করে এবং একসঙ্গে হুমকি মোকাবেলা করে জিসিসির ভূগোল সংরক্ষণ করতে চাই।‘ সম্মিলিত নিরাপত্তায় জোর সর্বশেষ জিসিসি শীর্ষ সম্মেলন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কুয়েতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারপর থেকে মধ্যপ্রাচ্য ক্রমাগত তীব্র উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গেছে। এর মধ্যে গত জুন মাসে সরাসরি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাছাড়া কাতারের ওপর ইরান এবং ইসরায়েলি হামলার ঘটনাগুলো জিসিসি নেতাদের সবকিছু নতুন করে ভাবাচ্ছে। আঞ্চলিক ক্ষেপণাস্ত্র-প্রতিরক্ষা ঢালসহ একটি নতুন যৌথ প্রতিরক্ষা কৌশল প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি। সাম্প্রতিক সংঘাতময় পরিস্থিতি জিসিসি দেশগুলোকে ভাবিয়েছে। ইসরায়েল ও ইরানের হামলার পর কাতার বহিরাগত নিরাপত্তা ছাতা শক্তিশালী করার জন্য পদক্ষেপ নেয়। সামরিক ঘাঁটি সমন্বয় এবং প্রশিক্ষণের আওতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বর্ধিত প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করে। কূটনীতি এবং সংঘাত সমাধানের কৌশল গ্রহণের পাশাপাশি জিসিসি ক্রমবর্ধমানভাবে উদ্ভাবন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত গভীর অর্থনৈতিক রূপান্তরের ওপর মনোনিবেশ করছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে ডেটা সেন্টারে বড় বিনিয়োগ, উন্নত প্রযুক্তির অবকাঠামো এবং ডিজিটাল উদ্যোগের একটি নতুন নতুন পদক্ষেপ রয়েছে। বুদাইভির মতে, এবারের শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে নতুন অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পর্কে আলোচনার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তা এবং এআই প্রকল্পগুলো এবারের সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার সুসমন্বয়ে গুরুত্ব চার দশকেরও বেশি সময় ধরে উপসাগরীয় শীর্ষ সম্মেলনগুলো সদস্য দেশগুলোর নেতাদের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার সুসমন্বয়ের বিষয়টিতে আগ্রহ গড়ে তুলেছে। যা দেশগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে। পাশাপাশি অভিন্ন লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করেছে। সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, এবারের শীর্ষ সম্মেলনে আঞ্চলিক ঐক্যের ডাক কেবল পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া নয়; এটি রাজনৈতিক সচেতনতা এবং যৌথ বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত ফল। ঐক্যের এই দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ করে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির সমন্বয়ে বড় ভূমিকা রাখবে। বলা হচ্ছে, এবারের জিসিসি শীর্ষ সম্মেলনকে অতীতের অর্জনগুলোকে একত্রিত করার এবং ভবিষ্যতের জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণের একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন নেতারা। এটি অর্থনৈতিক একীকরণ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, জ্বালানি, জলবায়ু এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। যা উপসাগরীয় জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ভূমিকা রাখবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের সম্মেলন গাজা, সিরিয়া, ইরান এবং ইউক্রেনের ওপর গভীর রাজনৈতিক সমন্বয়ে জোর দেবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সহযোগিতা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর নেতারা দৃষ্টি দিচ্ছেন। সূত্র: সৌদি গেজেট, ওমান অবজারভার, বাহরাইন নিউজ এজেন্সি