স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের মুখে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, সীমান্ত নিরাপত্তায় ব্যর্থ সরকার: স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ

৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ৪:৪০ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে আবারও নতুন করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। মানবিক বিবেচনায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশ আশ্রয় দেওয়ার পরও দফায় দফায় অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকায় সীমান্তজুড়ে চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। গত রবিবার (১ ডিসেম্বর) ভোর ৬ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে দালালচক্রের সহায়তায় নতুন করে ৭টি পরিবারের মোট ২৪ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ, ৫ জন মহিলা ও ১২ জন শিশু রয়েছে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প–১৩ এর জি/৩ ব্লক এবং ক্যাম্প–১৯ এর এ/১৬, বি/১৩ ও ৬ নম্বর ব্লকে অবস্থানরত তাদের নিকটাত্মীয়দের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। গত রমজানে আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের এবারের ঈদ তাদের নিজ দেশে করার অঙ্গীকার করলেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশই রোধ করতে পারছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সীমান্তের দুর্বলতা, বিভিন্ন চোরাচালানচক্রের সক্রিয়তা এবং মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির দালালচক্র প্রতিনিয়ত নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশ করাচ্ছে। এতে একদিকে জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে, অন্যদিকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশও জটিল হয়ে উঠছে। নতুন অনুপ্রবেশকারীদের একটি অংশ মাদক পাচার, চুরি, ছিনতাই, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে—এমন অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। ফলে সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষ এখন আরও বেশি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জোরালো হচ্ছে। এদিকে, সীমান্ত দিয়ে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনার পর প্রশাসন ও সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরেই অনুপ্রবেশ রোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সীমান্তে কঠোর নজরদারি, আধুনিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা ও দালালচক্র দমনে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। এর ফলে অপরাধচক্র সুযোগ নিয়ে বারবার অনুপ্রবেশ ঘটাতে সক্ষম হচ্ছে। নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের দুর্বলতাই বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও জটিল ও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দা তারেকুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফ দখলে নিতে পারে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার প্রভাব আমাদেরকেই ভোগ করতে হচ্ছে। সেখানে সমস্যা দেখা দিলেই তারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আমাদের বসতভিটায় অবস্থান নেয়। বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহল জানলেও এখনো কোনো সংস্থা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এমন অবস্থায় মনে হচ্ছে, আমরা নিজেরাই বসতভিটা ছেড়ে মিয়ানমারে চলে যেতে বাধ্য হবো। রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সম্ভবত এসব লোভের কারণেই তারা মিয়ানমার ছেড়ে আবারও এখানে প্রবেশ করছে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থের বিষয়টি শুধু আমার নয়-সবারই বোঝা উচিত ছিল। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ গফুর উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গারা শুধু ঢুকছে, কেউ ফিরে যাচ্ছে না। এতদিনে একজন রোহিঙ্গারও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের নজির নেই। কেউ গেলেও আবার ফিরে আসে। তিনি আরও জানান, এ পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব প্রতিনিয়তই স্থানীয় জনগণকে বহন করতে হচ্ছে। দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা ও সীমান্ত নিরাপত্তা আরও কঠোর করার জন্য তিনি জোর দাবি জানান। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের ইনচার্জ (সিনিয়র সহকারী সচিব) আল ইমরান জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি আমিও শুনেছি এবং এ বিষয়ে মেসেজও পেয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে নবাগত রোহিঙ্গারা ঠিক কোথায় অবস্থান করছে-তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে, শিগগিরই সব তথ্য পাওয়া যাবে।