নোবেলের আড়ালে শ্রমিক শোষণ: জনসেবার নামে লুটপাট করে ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য গড়ার অভিযোগ ইউনূসের বিরুদ্ধে

১ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বিশ্বজুড়ে তিনি ‘ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা’ এবং নোবেলজয়ী হিসেবে পূজনীয়। অথচ নিজ দেশের অভ্যন্তরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে উঠল ভয়াবহ অভিযোগ। বাংলাদেশের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও কূটনীতিক আমিনুল হক পলাশ দাবি করেছেন, ড. ইউনূসের এই বিশ্বজোড়া খ্যাতির আড়ালে রয়েছে অর্থ আত্মসাৎ, কর ফাঁকি, অন্যের মেধা চুরি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের এক দীর্ঘ ও অন্ধকার অধ্যায়। বর্তমানে বিলেতে নির্বাসিত পলাশ ‘দ্য ইউনূস ফাইলস’-এর মাধ্যমে এমন সব নথি ও তথ্য সামনে এনেছেন, যা নোবেলজয়ীর তথাকথিত ‘মানবিক’ ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রাণভয়ে দেশত্যাগ ও নেপথ্যের কারণ সাবেক এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, তিনি একসময় জাতীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে কাজ করতেন। কিন্তু যখনই তার অনুসন্ধান ড. ইউনূসের আর্থিক সাম্রাজ্যের দিকে মোড় নেয়, তখনই তিনি হুমকির মুখে পড়েন। পলাশ অভিযোগ করেন, ইউনূস-সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে ভারত থেকে প্রত্যাহার করা হয় এবং তাকে ‘গুম’ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল বলে তিনি জানতে পারেন। প্রাণ বাঁচাতে এবং সত্য প্রকাশ করতে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। মেধা চুরির অভিযোগ: মাইক্রোক্রেডিটের প্রকৃত জনক কে? পলাশের মতে, ড. ইউনূস মাইক্রোক্রেডিটের একক উদ্ভাবক নন। ৭০-এর দশকের বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিপত্র (আর্কাইভ) উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, জোবরা গ্রামের সেই ঋণ প্রকল্প ছিল মূলত ফোর্ড ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত একটি অ্যাকশন-রিসার্চ, যা পরিচালনা করেছিলেন স্বপন আদনান, নাসিরউদ্দিন এবং এইচ.আই. লতিফীর মতো জুনিয়র গবেষকরা। পলাশ বলেন, “ইউনূস পরবর্তীতে সুকৌশলে এই প্রকল্পের অন্য সব অবদানকারীর নাম মুছে ফেলে পুরো কৃতিত্ব নিজের নামে চালিয়ে দেন। এটি ছিল তার প্রথম বুদ্ধিবৃত্তিক চুরি।” আর্থিক অনিয়ম ও শ্রমিক বঞ্চনা পলাশ তার সাক্ষাৎকারে ইউনূসের প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি ‘কর্পোরেট মাট্রিওশকা পুতুল’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন, যার ভেতরে লুকিয়ে আছে দুর্নীতির জাল। তার অভিযোগ, দাতা সংস্থার টাকায় গ্রামীণ ব্যাংক গঠিত হলেও সেই অর্থ কৌশলে ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ ও ‘গ্রামীণ টেলিকম’-এর মতো ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণফোন থেকে ১০,৮৯০ কোটি টাকা লভ্যাংশ পেলেও, সেই অর্থ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় না করে কুক্ষিগত করা হয়েছে। ৪৩৭ কোটি টাকার শ্রমিক সেটেলমেন্ট ফান্ডের বিষয়ে পলাশ বলেন, “এই টাকার একটি বড় অংশ শ্রমিকদের পকেটে না গিয়ে ইউনিয়ন নেতা এবং আইনজীবীদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে চলে গেছে, যা মানি লন্ডারিংয়ের শামিল।” কর ফাঁকি ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ড. ইউনূস প্রায় ১০০ কোটি টাকার ব্যক্তিগত সম্পদ ট্রাস্টে স্থানান্তর করে কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, যা সর্বোচ্চ আদালত দ্বারাও প্রমাণিত। পলাশের দাবি, ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর ড. ইউনূস নজিরবিহীনভাবে নিজের বিরুদ্ধে থাকা সব আইনি বাধা অপসারণ করেছেন। পলাশ বলেন, “ক্ষমতায় বসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার ৬ মাসের কারাদণ্ড বাতিল হয়, দুদক মামলা প্রত্যাহার করে নেয় এবং এনবিআর গ্রামীণ ব্যাংককে ৫ বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেয়। এটি আইনের শাসন নয়, বরং নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের অতীত মুছে ফেলার চেষ্টা।” রাষ্ট্রীয় পদে আত্মীয়করণ অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ড. ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর তার ঘনিষ্ঠজনদের রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন। বিশেষ করে তার ভাগ্নে অপূর্ব জাহাঙ্গীর এবং দীর্ঘদিনের সহযোগী লামিয়া মোর্শেদকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই উচ্চপদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পলাশের। আন্তর্জাতিক অডিট দাবি পাশ্চাত্যের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে পলাশ বলেন, “২০ বছর আগের একটি পুরস্কার দিয়ে তাকে বিচার করবেন না। বর্তমানে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কী করছেন, তা দেখুন। যদি তার লুকানোর কিছু না থাকে, তবে তিনি তার সকল প্রতিষ্ঠানের ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক ফরেনসিক অডিটের আহ্বান জানান।” এই সাবেক কূটনীতিকের দাবি, ড. ইউনূস জনগণের মঙ্গলের কথা বলে মূলত নিজের ব্যক্তিগত আধিপত্য ও সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা বিশ্বের কাছে অজানা রয়ে গেছে।