জামায়াতের কর্মসূচির মঞ্চসজ্জা ঘিরে তীব্র বিতর্ক জাতীয় পতাকার রঙ ‘পদদলিত’ করার অভিযোগ, আইনগত প্রশ্নেও আলোচনা
রাজধানীতে আয়োজিত জামায়াতে ইসলামের একটি রাজনৈতিক কর্মসূচির মঞ্চসজ্জা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসূচির ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, মঞ্চে ওঠার সিঁড়ি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজ রঙে তৈরি করা হয়েছে এবং মঞ্চের উপরের অংশজুড়ে ব্যবহার করা হয়েছে পাকিস্তানের পতাকার অনুরূপ সবুজ রঙের ব্যাকড্রপ ও ভিজ্যুয়াল ডিজাইন। এ নিয়ে নেটিজেনদের বড় একটি অংশ অভিযোগ করছেন, জাতীয় পতাকার রঙ এভাবে সিঁড়ির মতো স্থানে ব্যবহার করে কার্যত সেটিকে ‘পদদলিত’ করা হয়েছে, যা জাতীয় মর্যাদার পরিপন্থী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রতিক্রিয়াগুলোতে ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন লিখেছেন, “যে পতাকা ছিনিয়ে আনতে ৩০ লাখ শহীদ প্রাণ দিলেন, ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম বিসর্জন দিতে হলো, সেই পতাকার রং আজ রাজনৈতিক সাজসজ্জায় পদদলিত হচ্ছে। এটি শুধু দৃষ্টিকটু নয়, চরম অপমান।” ‘মনস্তাত্ত্বিক বার্তা’ নিয়েও প্রশ্ন এ বিষয়ে কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, মঞ্চের নকশায় একটি প্রতীকী বার্তাও থাকতে পারে। তাঁদের মতে, নিচে বাংলাদেশের পতাকার রঙের অনুকরণ এবং উপরে পাকিস্তানি সবুজের প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত ভিজ্যুয়াল বার্তা উপস্থাপিত হয়েছে, যা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল। তবে এই ব্যাখ্যাকে অনেকে অতিরঞ্জিত বলেও মন্তব্য করছেন। তাঁদের মতে, এটি পরিকল্পনাহীন বা দায়িত্বজ্ঞানহীন ডিজাইনের ভুলও হতে পারে। আইনগত প্রশ্নও সামনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সংক্রান্ত বিধিমালা অনুযায়ী, জাতীয় পতাকা বা তার রঙ এমনভাবে ব্যবহার করা যাবে না, যাতে তা অসম্মানিত হয় বা অপমানের ইঙ্গিত বহন করে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি প্রমাণিত হয় যে জাতীয় পতাকার প্রতীকী রঙ ইচ্ছাকৃতভাবে পদদলিত হওয়ার মতো স্থানে ব্যবহার করা হয়েছে, তাহলে তা আইনগত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। একজন আইনজীবী জানান, “জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষার বিষয়টি সংবিধান ও বিধিমালায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। এখানে অবহেলা, অসচেতনতা কিংবা উদ্দেশ্য—যাই হোক না কেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখার সুযোগ রয়েছে।” জামায়াতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নেই এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মঞ্চসজ্জা নিয়ে এই বিতর্ক নতুন করে রাজনৈতিক শিষ্টাচার, জাতীয় প্রতীক ব্যবহারের নীতি ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখার বিষয়টি সামনে এনে দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
