শেখ হাসিনার ১০ কাঠায় ২১ বছরের সাজা: ইউনুসের ৪৪৬৭ কাঠার অপরাধে বিচার হবে কবে?
মাত্র ১০ কাঠা জমি বরাদ্দের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। আজ ঘোষিত এই রায়কে ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক। শেখ হাসিনার আইনজীবীরা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই রায়কে ‘নজিরবিহীন’, ‘প্রতিহিংসামূলক’ এবং ‘আইনের শাসনের নামে প্রহসন’ বলে অভিহিত করেছেন। জনমনে এখন একটাই প্রশ্ন—১০ কাঠার প্লটে যদি ২১ বছরের সাজা হয়, তবে ৪ হাজার ৪৬৭ কাঠা জমি দখলের নীরবতায় ন্যায়বিচারের পাল্লা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? ২১ বছরের সাজা ও গাণিতিক অসঙ্গতি আদালতের রায়ে শেখ হাসিনাকে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দের ‘অনিয়ম’-এর দায়ে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একজন পাঁচ বারের প্রধানমন্ত্রী, যিনি দেশকে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন, তার জন্য অবসরের পর ১০ কাঠা জমি পাওয়া রাষ্ট্রের কাছে অতি নগণ্য পাওনা। অথচ একেই ‘মহা অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করে ২১ বছরের মতো দীর্ঘমেয়াদী সাজা প্রদানকে ‘লঘু পাপে গুরুদণ্ড’ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে পূর্বাচল, উত্তরা ও চট্টগ্রামে মোট ৪ হাজার ৪৬৭ কাঠা জমি বরাদ্দের অভিযোগ রয়েছে। বিশ্লেষকরা এক অদ্ভুত গাণিতিক সমীকরণ সামনে এনেছেন: ১০ কাঠার জন্য যদি ২১ বছর জেল হয়, তবে ৪৪৬৭ কাঠার জন্য সাজার মেয়াদ কত হাজার বছর হওয়া উচিত? এই বিশাল বৈষম্য প্রমাণ করে যে, আজকের এই রায় আইনি প্রক্রিয়ার চেয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হাতিয়ার হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অসংখ্য মেগাপ্রজেক্টের মাধ্যমে যিনি বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছেন, সেই শেখ হাসিনাকে ‘চোর’ বা ‘দুর্নীতিবাজ’ সাজানোর এই চেষ্টা হাস্যকর বলে মনে করছেন তার সমর্থকরা। তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মতে, বর্তমান প্রশাসন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই ‘ফরমায়েশি রায়’ ঘোষণা করিয়েছে। ১০ কাঠা জমির ইস্যু তুলে মূলত হাজার হাজার কাঠা জমির কেলেঙ্কারি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা চলছে। আজকের এই রায়টি দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়েই। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, পলাতক দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে এমন কঠোর রায় দেওয়া ন্যায়বিচারের মৌলিক পরিপন্থী। এটি স্পষ্টতই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ‘মাইনাস’ করার পুরনো ফর্মুলারই নতুন সংস্করণ। শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই রায় সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যে জমি বরাদ্দে রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি হয়নি, বরং যা একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অধিকারের পর্যায়ে পড়ে, তার জন্য ২১ বছরের জেল দেওয়া বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনীত এই অভিযোগ এবং আজকের এই রায় তাকে জনগণের মন থেকে মুছে ফেলতে পারবে না। বরং, ৪৪৬৭ কাঠা বনাম ১০ কাঠার এই দ্বিমুখী বিচারব্যবস্থা শেখ হাসিনার প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি আরও বাড়িয়ে তুলবে। আজকের এই ২১ বছরের সাজার রায় হয়তো নথিপত্রে লিপিবদ্ধ থাকবে, কিন্তু ইতিহাসের কাঠগড়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হবে এই সময়ের বিচারিক সততা। ১০ কাঠার প্লটকে কেন্দ্র করে এই রায় কি ন্যায়বিচার, নাকি ৪৪৬৭ কাঠার মালিকদের সুরক্ষা দেওয়ার কৌশল—সে উত্তর সময়ই বলে দেবে।
