নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ট্রাস্ট–নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে আর্থিক লেনদেনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ | ২:১৬ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

দেশের আলোচিত- সমালোচিত নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রফেসর মোঃ ইউনুস ট্রাস্ট, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণসহ ‘গ্রামীণ পরিবার’-এর বিভিন্ন সংগঠনের আর্থিক লেনদেন নিয়ে একাধিক তদন্ত সংস্থার জালে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ। কর দপ্তর, দুদক এবং আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটগুলোর হাতে থাকা নথিপত্র বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা বলছেন, এটি “বহু বছর ধরে গড়ে ওঠা একটি সংগঠিত আর্থিক নেটওয়ার্ক”, যার মাধ্যমে বিপুল টাকা ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে ট্রাস্টের নামে ব্যাংকিং চ্যানেলে লুকিয়ে রাখা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধারাবাহিকভাবে ‘অলাভজনক’ দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ট্রাস্টের নামে শত শত কোটি টাকার ঘূর্ণায়মান লেনদেন তদন্ত নথি বলছে— ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রফেসর মোঃ ইউনুস ট্রাস্ট–এর নামে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে: জমা রাখা হয় ১২৮.৩৯ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয় ১২৭.৪ কোটি টাকা এ সময় ১৭.৩২ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয় গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টে, ১.৬১ কোটি টাকা যায় রূপায়ণ হাউজিংয়ে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য এই ট্রাস্টের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ১০৩টি এফডিআর। তদন্তকারীদের বলছে, “এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে একই টাকা ট্রান্সফার করে নতুন এফডিআর তৈরি করার মাধ্যমে প্রকৃত উৎস ও খরচ আড়াল করার চেষ্টা থাকতে পারে।” মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকেও অস্বাভাবিক লেনদেন: মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের হিসাবে ২০১৮–২০২২ সময়ে: জমা: ১২.১ কোটি; উত্তোলন: ১৬.৫৩ কোটি। এছাড়া গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ দেখানো হলেও, তদন্তকারীদের মতে “লেনদেনগুলো স্বাভাবিক ট্রাস্ট ব্যবস্থাপনার চেয়ে অর্থ স্থানান্তরের কৌশল বলেই বেশি প্রতীয়মান।” ৪,৯৭৪ কোটি টাকার এফডিআর—তবু প্রতিষ্ঠান অলাভজনক গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণ এই দুই প্রতিষ্ঠানের নামে শুধুমাত্র এফডিআর রয়েছে ৪,৯৭৪ কোটি টাকা (২০২২ সালের জুন পর্যন্ত)। এত বিপুল স্থায়ী আমানত থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলো ধারাবাহিকভাবে অলাভজনক দেখানোয় প্রশ্ন উঠেছে। লাভ কোথায় গেল? কর এড়াতেই কি ‘লোকসান দেখানোর’ কৌশল? শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের টাকা বাঁচাতেই কি আয়ের হিসাব আড়াল করা হয়েছে? দুদক মামলায় ৪৩৭ কোটি টাকার বিতরণ অনুমোদন। দুদকের মামলার নথিতে উঠে এসেছে আরও গুরুতর অভিযোগ। গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ড. ইউনূস সভাপতিত্বে ৪৩৭.০১ কোটি টাকা বিতরণের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২৬.২২ কোটি টাকা জমা হয় কিছু কর্মচারী, এক ইউনিয়ন নেতা ও এক আইনজীবীর হিসাবে। তদন্তকারীরা বলছেন, “এটি ছিল পরিকল্পিত বিতরণ প্রক্রিয়া, যা পরে জালিয়াতি, আত্মসাৎ ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের ধারায় মামলায় রূপ নেয়।” শ্রমিকদের পাওনা আটকে রাখার অভিযোগ: শ্রম আদালতের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে অভিযোগ শ্রমিকদের বৈধ পাওনা দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রাখা।শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের অর্থ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রদান না করা। অন্যদিকে কর দপ্তরের মামলায়: ড. ইউনূসের দানকৃত ৭৬.৭৩ কোটি টাকার ওপর আরোপিত ১৫.৩৯ কোটি টাকা কর হাইকোর্ট বৈধ বলে রায় দিয়েছে। গ্রামীণফোন লভ্যাংশ: ১০,৮৯০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ।গ্রামীণ ব্যাংকের বিনিয়োগে গড়ে ওঠা গ্রামীণ পরিবারের।কোম্পানিগুলো থেকে প্রকৃত সদস্যদের কল্যাণের পরিবর্তে অন্যত্র অর্থ প্রবাহের অভিযোগও তদন্তে উঠে এসেছে। গ্রামীণফোন থেকে পাওয়া ১০,৮৯০.১৯ কোটি টাকা লভ্যাংশ ব্যাংকের হিসাবে না দেওয়াকে তদন্তকারীরা “গুরুতর অনিয়ম” বলছেন। বিদেশি রেমিট্যান্স নিয়েও অস্পষ্টতা। এগমন্ট গ্রুপের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ওমান, পর্তুগাল, স্পেন, চীন ও জাপান থেকে আসা রেমিট্যান্সের উৎস–উদ্দেশ্যও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।