যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রীর বিচারকে ‘সাজানো’ আখ্যা দিয়ে জ্যেষ্ঠ ব্রিটিশ আইনজীবীদের নিন্দা
বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে ‘সাজানো এবং অন্যায্য’ বলে অভিহিত করেছেন ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। তার ঠিক আগে লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলামের কাছে লেখা এক চিঠিতে আইনজীবীরা এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক গত জানুয়ারিতে ব্রিটিশ সরকার থেকে পদত্যাগ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে তার অনুপস্থিতিতেই (in absentia) এই দুর্নীতির মামলার বিচার চলছে এবং প্রসিকিউশন তার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করেছে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্ট আইনজীবীদের দলটিতে রয়েছেন সাবেক কনজারভেটিভ বিচার মন্ত্রী রবার্ট বাকল্যান্ড কেসি, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ডমিনিক গ্রিভ, চেরি ব্লেয়ার কেসি, ফিলিপ স্যান্ডস কেসি এবং জেফ্রি রবার্টসন কেসি। আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন যে, বিচার প্রক্রিয়ায় টিউলিপ সিদ্দিক তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের মতে, টিউলিপকে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা প্রমাণের বিষয়ে জানানো হয়নি এবং তাকে আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়নি। চিঠিতে আরও দাবি করা হয়, বাংলাদেশে টিউলিপের পক্ষে লড়ার জন্য নিযুক্ত একজন আইনজীবীকে জোরপূর্বক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাকে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে এবং তার মেয়েকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে আইনজীবীরা বলেন, “এ ধরনের প্রক্রিয়া কৃত্রিম এবং বিচার পরিচালনার একটি সাজানো ও অন্যায্য উপায়।” অভিযোগে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক তার খালা শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে ঢাকার একটি উপশহরে তার মায়ের জন্য জমির প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন। টিউলিপ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে একে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করে আসছেন। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা চিঠিতে উল্লেখ করেন, “যেহেতু তিনি (টিউলিপ) যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন এবং একজন ব্রিটিশ নাগরিক, তাই তিনি স্পষ্টতই পলাতক নন। তিনি একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং হাউস অফ কমন্সে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব। যদি উপযুক্ত কারণ থাকত, তবে তাকে প্রত্যর্পণ (extradition) করে বিচারের মুখোমুখি করা যেত।” ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনের শাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করলেও, টিউলিপের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্য এবং বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের অভিযোগকে ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের পরিপন্থী’ বলে অভিহিত করেছেন ব্রিটিশ আইনজীবীরা। তারা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে এই উদ্বেগগুলো নিরসন করে একটি সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সরকারের নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনুস গত জানুয়ারিতে টিউলিপকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিলেও, পারিবারিক সম্পর্কের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। এরপরই টিউলিপ সিদ্দিক ট্রেজারি ও সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এ বিষয়ে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
