মেট্রোর অনলাইন রিচার্জে ধস, ৪ ঘণ্টায় ৭ লাখ হিট

২৫ নভেম্বর, ২০২৫ | ৯:০৩ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

মেট্রোরেলের ভাড়া প্রদান করার স্থায়ী কার্ডে অনলাইন রিচার্জ কার্যক্রমে ধস নেমেছে। অনলাইন রিচার্জ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ওয়েবসাইটে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, রিচার্জের জন্য তৈরি করা ওয়েবসাইটের ধারণক্ষমতা খুবই কম। ওয়েবসাইট বানানোর জন্য গঠিত কারিগরি দল ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাইটে একসঙ্গে সর্ব্বোচ দুই হাজার ৫০০ জন ভিজিট করতে পারবে। আর একসঙ্গে সর্ব্বোচ ১৩০ জন গ্রাহক রিচার্জ করতে পারবে- এমনভাবেই সাইটের কারিগরি দিক প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত চার ঘণ্টায় সাইটে প্রায় সাত লাখ হিট পড়েছে। এতে করে বিপর্যয় তৈরি হয়। এই সাইট তৈরিতে কাজ করেছে ডাটাসফট সিস্টেম বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ডাটাসফটের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল এটি পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য তৈরি করতে। এতদ্রুত ব্যাপকভাবে লঞ্চ করা হবে সেটির কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি। ফলে এমন বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। আমাদের এখন ক্যাপাসিটি বাড়াতে কাজ করতে বলা হয়েছে। সব ঠিক হতে কয়েক দিন সময় লাগবে।’ এ দিকে আজ থেকে এমআরটি কার্ড ও র‍্যাপিড পাসে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, নগদ, রকেটসহ সব ধরনের অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রিচার্জ করার সুবিধা চালু করা হয়। কিন্তু ত্রুটির কারণে প্রথম দিনই এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। বিকেলের পর একাধিকবার কার্ড রিচার্জের জন্য নিবন্ধন করতে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, সেটি কাজ করছে না। সেখানে লেখা দেখাচ্ছে, ‘অপ্রত্যাশিত একটি ত্রুটি ঘটেছে! অনুগ্রহ করে পরে আবার চেষ্টা করুন।’ এ বিষয়ে কারণ জানতে চেয়ে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। ওয়েবসাইটি টানা দুই ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এর গতি খুবই কম। বেশি গ্রাহকের চাপ নেওয়ার কার্যকরী ক্ষমতা নেই। সঠিক ‘ওটিপি’ (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিলেও সেটি ভুল দেখাচ্ছে। একই ওটিপি একাধিকবার দিলে তারপর কাজ করছে। একইভাবে কার্ডের নাম্বার ভুল বলছে। তবে কার্ডের নাম্বার পাঁচবারের বেশি দেওয়ার সুযোগ নেই। আবার অনলাইন রিচার্জের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এমআরটি পাসের ক্ষেত্রে নতুন নিবন্ধন করতে হবে না। শুরু র‍্যাপিড পাসের নিবন্ধন করতে হবে। কারণ এমআরটি পাস নেওয়ার সময় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু নিবন্ধন ছাড়াও র‍্যাপিড পাস ব্যবহার করা গেছে। তাই নিবন্ধিত এমআরটি ওয়েবসাইটে ‘সাইন ইন’ করার পর দৃশ্যমান থাকার কথা থাকলেও তা নেই। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ডিটিসিএলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুপুরে সাইট লঞ্চ হওয়ার পর থেকেই নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি। সমস্যাগুলো সমাধানে সময় লাগবে। তবে যত দ্রুত করা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে।’ এই সেবাটি সমন্বয় করে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। জানতে চাইলে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নীলিমা আখতার বলেন, ‘প্রথম দিন অনেক চাপ তৈরি হওয়ায় হয়তো এমনটা ঘটছে। আস্তে আস্তে ওয়েবসাইটের ক্যাপাসিটি (ধারণক্ষমতা) বাড়ানো হবে। কাজ চলছে, আশা করি বিষয়টি দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে’। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে মেট্রোরেলের র‍্যাপিড পাস ও এমআরটি পাস কার্ডে অনলাইন রিচার্জের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক, সেতু ও রেল মন্ত্রণালয়) শেখ মইনউদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নিখিল কুমার দাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিটিসিএ নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশনের প্রতিটিতে দুটি করে মোট ৩২টি অ্যাড ভ্যালু মেশিন (এভিএম) বসানো হয়েছে। এই মেশিনে র‍্যাপিড পাস ও এমআরটি পাস কার্ড স্পর্শ করানোর পর অনলাইন রিচার্জ সম্পন্ন হবে। পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। আগামী মাসে অনলাইনে রিচার্জের সুবিধার জন্য মেট্রোরেলের অ্যাপ চালু হবে। অন্যদিকে, সাইটটি সচল হলে ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে আপাতত যে কোনো একটি পেমেন্টের মাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইনে কার্ড রিচার্জ করতে হবে। অনলাইনে রিচার্জ করার পর এভিএম কার্ড স্পর্শ করার আগপর্যন্ত তা অপেক্ষমাণ দেখাবে। অনলাইন রিচার্জের পর কার্ডটি এভিএম মেশিনে স্পর্শ করে রিচার্জ করা ব্যালেন্স যুক্ত হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। রিচার্জ সফল হলে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে একটি এসএমএস দেওয়া হবে। একটি কার্ডে একবারে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা, সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করা যাবে। এ ছাড়া একবারে শুধু একটি পেন্ডিং অনলাইন রিচার্জ থাকতে পারবে। আগের রিচার্জ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নতুন অনলাইন রিচার্জ করা যাবে না। কার্ড যদি ব্ল্যাকলিস্টেড, রিফান্ডেড বা অবৈধ হয়, তাহলে রিচার্জ করা যাবে না। ব্যবহারকারী তার রিচার্জ হিস্ট্রি অ্যাপ্লিকেশন বা ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে দেখতে পারবেন। ব্যবহারকারী চাইলে কার্ড এভিএম মেশিনে স্পর্শ করার আগে সাত দিনের মধ্যে রিচার্জ বাতিলের জন্য অনুরোধ করতে পারবেন। রিচার্জ বাতিলের ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ সার্ভিস চার্জ কাটা হবে। আর কার্ড ব্ল্যাকলিস্ট-সংক্রান্ত কারণে পেন্ডিং ট্রানজেকশনের ক্ষেত্রেও গ্রাহক রিফান্ড রিকোয়েস্ট করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রেও পাঁচ শতাংশ সার্ভিস চার্জ কাটা হবে।