তানজিন তিশার ভয়েস রেকর্ড
কলকাতার সিনেমা ‘ভালোবাসার মরশুম’-এর প্রযোজক শরীফ খানের আনা অর্থ আত্মসাৎ ও অপেশাদারিত্বের অভিযোগকে ‘ফালতু’ ও ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছিলেন অভিনেত্রী তানজিন তিশা। ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের স্বচ্ছতা প্রমাণের চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু এবার বেরিয়ে এলো থলের বিড়াল। অভিনেত্রীর দাবির বিপরীতে হাতে এসেছে তানজিন তিশার পাঠানো সেই ভয়েস রেকর্ড ও কথোপকথনের স্ক্রিনশট, যা স্পষ্ট করছে ভিন্ন এক সত্য। প্রযোজক শরীফ খান ছে পাঠানো প্রমাণাদিতে দাবি করেছেন, তিশা শাকিব খানের ‘সোলজার’ সিনেমার অজুহাত দেখিয়ে বারবার কলকাতার সিনেমার শিডিউল পিছিয়েছিলেন এবং ভিসার দায়িত্ব নিজেই নিয়েছিলেন। অথচ এখন তিনি উল্টো সুর গাইছেন। কী আছে সেই ভয়েস রেকর্ডে? হাতে আসা ভয়েস রেকর্ডে স্পষ্ট শোনা যায় তানজিন তিশা প্রযোজক শরীফ খানকে অনুরোধ করছেন শাকিব খানের সিনেমার জন্য কলকাতার শুটিং পেছানোর জন্য। রেকর্ডে তিশাকে বলতে শোনা যায়, “দাদা আমি তোমাকে কি বলবো সেটা ভেবেই কল রিসিভ করিনি। আমি তোমার সিনেমার জন্য খুবই আগ্রহী, কিন্তু এদিকে শাকিব খানের সিনেমা আমার। এটা আমি আর পেছাতে পারছি না। আমরা অলরেডি এই সিনেমার প্ল্যান করে ফেলেছি; যেহেতু আমাদের লেট হচ্ছেই, আমরা এই মাসের মধ্যেই ঢাকার ফিল্মটা শেষ করে ফেলবো। তাই তোমাকে অনুরোধ করবো, আমার ভয়েস রেকর্ডটা রেখে দেও। এটা আমার স্টেটমেন্ট। তুমি কিছুদিন ডেটটা একটু পিছিয়ে দেও। সবাইকে একটু বুঝাও... সোলজার সিনেমাটা দেশ প্রেম সিনেমা। এটা রিলিজ হবে ১৬ ডিসেম্বর। সো এইটা আমি আর পেছাতে পারছি না।” সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, তিশা তার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছিলেন প্রযোজক ভিসা করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ ভয়েস রেকর্ডে তিনি বলছেন, “আমি সত্যিই তোমাদের কাজটা করতে চাই। এবং আমি তোমাকে বলছি, ভিসা নিয়ে একদম চিন্তা নেই। ভিসা আমি নিজে ম্যানেজ করবো। এটা নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না।” তিশার অভিযোগ ও প্রযোজকের পাল্টা জবাব মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) তিশা ফেসবুকে দাবি করেন, শরীফ খান মূল প্রযোজক নন, তিনি লাইন প্রোডিউসার। এবং ভিসা করাতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি সিনেমাটি করতে পারেননি। তিশার এই দাবির প্রেক্ষিতে প্রযোজক শরীফ খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি যদি এই সিনেমার প্রোডিউসার না হই, তাহলে এগ্রিমেন্ট চেক করে দেখেন। সেখানে আমার সিগন্যাচার আছে। মোশন পোস্টারে আমার নাম আছে। সে কার সঙ্গে কথা বলে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে? এখন বাঁচার জন্য আমাকে লাইন প্রোডিউসার বানাচ্ছে!” ভিসা ও শিডিউল নিয়ে নাটকীয়তা প্রযোজক জানান, তিশার জন্য দুবার শিডিউল পরিবর্তন করতে হয়েছে, যাতে তাদের বিশাল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, “বর্তমানে ইন্ডিয়ান ভিসা স্লট পাওয়া খুব কঠিন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমরা স্লট ম্যানেজ করেছি। কিন্তু স্লট ডেটের দুদিন আগে সে আমেরিকা যাওয়ার কথা বলে স্লটে দাঁড়ায়নি। প্রোডাকশন তার দায়িত্ব পালন করেছে, কিন্তু আর্টিস্ট যদি না দাঁড়ায় সেই দোষ কি প্রোডাকশনের?” শরীফ খান আরও বলেন, “সে শাকিবের সিনেমার জন্য আমার সিনেমা পেছাতে বলছে। সে কে যে আমার সিনেমা পেছাতে বলবে? সে তো পেছানোর কেউ না! তার কারণেই আমাদের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। অথচ এখন টাকা ফেরত চাইলে উল্টো মিথ্যাচার করছে।” মধ্যরাতে ফোন দেওয়ার অভিযোগ খণ্ডন তিশা অভিযোগ করেছিলেন শরীফ খান মধ্যরাতে ফোন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন। এর জবাবে শরীফ খান তাদের কথোপকথনের কললিস্ট ও মেসেজের স্ক্রিনশট দেখান। তিনি বলেন, “আমি প্রচণ্ড কমফোর্টজোনে তার সঙ্গে কথা বলেছি। সে কোন সময় মেসেজ করত, কল করত, রিপ্লাই করত—তার সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। সে নিজের দোষ ঢাকতে এখন আমাকে অপেশাদার সাজানোর চেষ্টা করছে।” উল্লেখ্য, কলকাতার ‘ভালোবাসার মরশুম’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিশাকে প্রায় সোয়া ৪ লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল। সিনেমাটি থেকে বাদ পড়ার পর সেই টাকা ফেরত না দেওয়াতেই এই জটিলতার সৃষ্টি। একই সিনেমায় অভিনয়ের কথা থাকলেও অভিনেতা খায়রুল বাসার সরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন প্রযোজক।
