খ্রিস্টানদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন পোপ, তালিকায় সর্বাগ্রে ইউনুসের বাংলাদেশ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের (Christians in Bangladesh) ওপর নিপীড়ন নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেন পোপ চতুর্দশ লিও বা রবার্ট ফ্রান্সিস প্রিভোস্ট (Pope Leo XIV)। এক্সে এক পোস্টে তিনি কয়েকটি দেশের নাম করেছেন। তার মধ্যে প্রথমেই আছে বাংলাদেশের (Bangladesh) নাম। এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে, খ্রিস্টানরা বৈষম্য এবং নির্যাতনের শিকার হয়। আমি বিশেষ করে বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, মোজাম্বিক, সুদান এবং অন্যান্য দেশগুলির কথা ভাবি যেখান থেকে আমরা প্রায়শই সম্প্রদায় এবং উপাসনালয়গুলিতে আক্রমণের কথা শুনি। ঈশ্বর একজন করুণাময় পিতা যিনি তাঁর সমস্ত সন্তানের মধ্যে শান্তি চান! আমি কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের কিভুর মানুষের সঙ্গে একত্রিত হয়ে প্রার্থনা করি, যেখানে সাম্প্রতিক দিনগুলিতে বেসামরিক নাগরিকদের উপর গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে। আসুন আমরা প্রার্থনা করি যে সমস্ত সহিংসতা বন্ধ হোক এবং বিশ্বাসীরা সাধারণ কল্যাণের জন্য একসাথে কাজ করতে পারে। কিভুতে দিন কয়েক আগে স্থানীয় খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা চালায় উগ্র ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী আইএসআইএস। বহু মানুষকে সেখানে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে চার্চ। সেখানে সন্ত্রাসবাদীদের হামলাকে গণহত্যা বলে দাবি করেছে একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। ওই ঘটনা নিয়েই পোপ রবিবার প্রকাশ্যে সরব হলেন। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের জমানাতেও হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের উপর ধর্মীয় বিদ্বেষ জনিত হামলা হয়েছে। বহু মানুষ হতাহত এবং সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। যদিও ইউনুস সরকার বারে বারেই এইসব ঘটনাকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে একাধিক মহল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। ভারত সরকারও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার সেই অভিযোগকে মান্যতা দিচ্ছে না। এবার স্বয়ং পোপ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় বিষয়টি নয়া মাত্রা পেল বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পোপের উদ্বেগের জবাবে এখনও পর্যন্ত কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। তবে ওয়াকিবহুল মনে করছে, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের শীর্ষ গুরুর উদ্বেগ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। মাস কয়েক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠানের তরফে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ করা হয়। ওই সংগঠনও সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংস হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারপরও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন নির্যাতন বন্ধ হয়নি বলে একাধিক সংগঠনের দাবি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন রাইটস এন্ড রিস্ক অ্যানালিসিস গ্রুপ বাংলাদেশে মানবাধিকার হরণের ঘটনায় একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি বলে একাধিক মহলের দাবি। হালে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় আদিবাসীদের উপর বহিরাগত মুসলিম সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যৌথ হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। হামলায় বেশ কয়েকজন মারা যান। ভয়ে আদিবাসীদের বহু এলাকা এখনো জনমানব শূন্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের সিংহভাগ মানুষ খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। অন্যদিকে গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতেই সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হয়েছে। তখন মূলত টার্গেট করা হয়েছিল হিন্দু সম্প্রদায়কে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে হাজারের বেশি জায়গায় হামলা হয়। প্রাণ বাঁচাতে বহু মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসার চেষ্টাও করেন। কিন্তু ইউনুস সরকার এখনও পর্যন্ত ধর্মীয় সন্ত্রাস এবং সাম্প্রদায়িক হিংসার অভিযোগ মানছে না।
