শাহরিয়ার কবিরের আটক ‘সম্পূর্ণ বেআইনি’ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন: জাতিসংঘ,

২৩ নভেম্বর, ২০২৫ | ৫:৩৩ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

লেখক, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী অধ্যাপক শাহরিয়ার কবিরের আটকাদেশকে ‘সম্পূর্ণভাবে বেআইনি’ এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রারি ডিটেনশন’ (ডব্লিউজিএডি)। সংস্থাটি তাদের ১০৩তম অধিবেশনের সিদ্ধান্তে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার এক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং সঠিক আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। গত বছরের ১৭ই সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাপক শাহরিয়ার কবিরকে আটক করে। জাতিসংঘের সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শাহরিয়ার কবিরের স্বাধীনতা হরণকে চারটি প্রধান ক্যাটাগরিতে ‘বেআইনি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো—আইনগত ভিত্তি ছাড়া আটক, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘন, ন্যায়বিচারের অধিকার হরণ এবং বৈষম্যমূলক মামলা ও হয়রানি। ডব্লিউজিএডি-এর প্রতিবেদনের ৫১ নম্বর প্যারাগ্রাফে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান সরকার শাহরিয়ার কবিরের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার যে অভিযোগ এনেছে, তার একমাত্র ভিত্তি ছিল একটি টেলিভিশন টকশোতে দেওয়া তাঁর বক্তব্য। সরকারের দাবি ছিল, তিনি সেখানে সহিংসতায় উস্কানি দিয়েছেন। তবে জাতিসংঘ স্পষ্ট জানিয়েছে, কেবল টেলিভিশনে কথা বলাকে হত্যা বা সহিংসতার মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করা যুক্তিসঙ্গত নয়। সরকার এমন কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি যা নিশ্চিত করে যে তাঁর বক্তব্যের ফলেই সহিংসতা ঘটেছে। প্রতিবেদনে (প্যারাগ্রাফ ৫৪ ও ৬৯) বলা হয়েছে, মূলত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চর্চার কারণেই তাকে আটক করা হয়েছে, যা সর্বজনীন মানবাধিকার সনদের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। জাতিসংঘের মতে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা ব্যবহার করে তাঁকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ফলে তাঁর গ্রেপ্তার এবং আটক রাখার কোনো আইনি ভিত্তি নেই। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরনের হস্তক্ষেপের কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছে সংস্থাটি। প্যারাগ্রাফ ৭৭-এর পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে যে, শাহরিয়ার কবিরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যূনতম অধিকারগুলো থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ ছিল অত্যন্ত সীমিত, এবং তাঁকে প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। এছাড়া, তাঁর জামিন আবেদনগুলো প্রায় ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে’ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ১১ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিচার শুরু না করে তাঁকে আটক রাখাকে আন্তর্জাতিক নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে ডব্লিউজিএডি। প্রতিবেদনে (প্যারাগ্রাফ ৮০) বলা হয়েছে, আদালতে হাজির করার সময় শাহরিয়ার কবিরকে উগ্র জনতার হাত থেকে রক্ষা করতে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর কাজ ও মতামতের কারণে এমন হামলার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়া, তাঁর প্রতি নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে জাতিসংঘ মামলাটি ‘নির্যাতনবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক’-এর কাছে পাঠিয়েছে (প্যারাগ্রাফ ৭৯)। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে (প্যারাগ্রাফ ৮২ ও ৮৪) আরও বলা হয়, রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে এবং শান্তিপূর্ণভাবে অধিকার চর্চার ফলেই তাঁকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। সরকার এই ‘বৈষম্যমূলক’ ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আটকের অভিযোগ খণ্ডাতে ব্যর্থ হয়েছে।