জাতিকে শিক্ষিত করার প্রতিদানে কি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো শেখ হাসিনাকে

২২ নভেম্বর, ২০২৫ | ৫:৫৯ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাংলাদেশ আজ এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির সম্মুখীন। একদিকে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়, যা তিনি ১৬ বছর ধরে জাতীয় মিশনের কেন্দ্রে রেখেছিলেন। সংশ্লিষ্ট মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে—যে নেত্রী জাতিকে শিক্ষিত করার জন্য দিন রাত কাজ করেছিলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য নানা সুবিধা নিশ্চিত করেছিলেন, তাকেই কি এখন দেশবিরোধীরা ফাঁসি দিতে চাইছে? “শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড এবং কোনো শিশুকে জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়”— শেখ হাসিনার এই উক্তিটি ছিল তাঁর মূলমন্ত্র। এটি ছিল সমতা, প্রতিশ্রুতি এবং দূরদৃষ্টির প্রতীক, যা বাংলাদেশকে একটি ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত জাতি হিসেবে গড়ে তোলার ভিত্তি ছিল। শিক্ষাকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখার দর্শন শেখ হাসিনা তাঁর দীর্ঘ শাসনামলে শিক্ষাকে রাজনৈতিক ক্ষমতার সীমা পেরিয়ে উন্নয়নের প্রধান এজেন্ডা হিসেবে গণ্য করেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের শক্তি নিহিত তার শিক্ষিত নাগরিকদের মধ্যে। বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ: তাঁর নেতৃত্বেই চালু হয় দেশব্যাপী বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক কার্যক্রম, যা প্রতি বছর ৪ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাত। এটি শুধু বই সরবরাহ ছিল না, বরং গ্রামীণ, দরিদ্র ও প্রান্তিক এলাকার শিশুদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা: পাঠ্যপুস্তকগুলো পাঁচটি আদিবাসী ভাষায় এবং ব্রেইল সংস্করণে প্রকাশ করা হয়েছিল, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্বের এক শক্তিশালী উদাহরণ। শিক্ষায় বিনিয়োগ: তিনি শিক্ষক প্রশিক্ষণ, বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাল ক্লাসরুম এবং মেয়েদের শিক্ষায় বিপুল বিনিয়োগ করেছিলেন, যা লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে তরুণীদের স্বপ্ন দেখার সাহস জুগিয়েছিল। শেখ হাসিনা সরকারের নিষ্ঠা শিক্ষাকে একটি মৌলিক সেবা থেকে জাতীয় আন্দোলনে রূপান্তরিত করেছিল। তাঁর বিশ্বাস ছিল—শিশুদের ওপর বিনিয়োগই দেশের জন্য সবচেয়ে স্থায়ী বিনিয়োগ। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে শিক্ষায় মহাবিপর্যয় কিন্তু আজ সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হচ্ছে। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিনামূল্যে বই বিতরণের ঐতিহ্য ধসে পড়েছে। শেখ হাসিনা বছরের পর বছর ধরে যে দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন, তা কয়েক মাসেই ভেঙে যাচ্ছে—যা বহু মহলের মতে, প্রশাসনিক জটিলতা, পরিকল্পনার দুর্বলতা এবং অন্তর্বর্তী উদাসীনতা ও অহংকারের ফল। লাখ লাখ শিক্ষার্থী অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছে, স্কুলগুলো নিস্তব্ধ। পাঠ্যপুস্তক ছাপা ও বিতরণ মারাত্মকভাবে বিলম্বিত হয়েছে; অনেকে জানে না তাদের শিক্ষাবর্ষ কখন শুরু হবে। এই ব্যর্থতা শুধু লজিস্টিক নয়, এটি শিক্ষার মানকেও গভীরভাবে আঘাত করছে। সাম্প্রতিক শিক্ষা বোর্ডের তথ্য এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়েছে: অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এসএসসি ও এইচএসসি পাসের হার নেমে এসেছে প্রায় দুই দশকের সর্বনিম্ন স্তরে। এসএসসি পাসের হার ১৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এইচএসসি পাসের হার মাত্র ৫৮.৮৩%, যা দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল। দুর্বল ব্যবস্থাপনা, ক্ষুব্ধ শিক্ষক এবং নীতিগত বিভ্রান্তি দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্সকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যে নেত্রী জাতিকে শিক্ষিত করার মাধ্যমে দেশকে ভবিষ্যৎমুখী করতে চেয়েছিলেন, আজ তাকেই মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠিন রায়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, এটি কি সেই নেত্রীর প্রতিদান যিনি দেশের জন্য 'সবচেয়ে স্থায়ী বিনিয়োগ' করেছিলেন? যেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অগ্রগতির অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল, সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার বপন করছে অস্থিরতা ও বিভ্রান্তি। যদি এই অবহেলা চলতেই থাকে, তবে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এক দশকের অগ্রগতি ধ্বংস হয়ে যাবে, এবং লাখ লাখ শিক্ষার্থী হয়তো হারাবে সেই ভবিষ্যৎ, যা শেখ হাসিনা কঠোর পরিশ্রমে তাদের জন্য গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এই সময়ে, জাতির শিক্ষিত অংশের কাছে প্রশ্ন—শিক্ষা নিয়ে এই অবহেলা এবং জাতির জন্য কাজ করা নেত্রীর প্রতি এই বিচারিক রায়—এটি কি তবে জাতির জন্য চরম লজ্জার বিষয় নয়?