৩৬৭ রানের লিড নিয়ে দিন শেষ বাংলাদেশের

২২ নভেম্বর, ২০২৫ | ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

সাকিব আল হাসানের রেকর্ড ভাগ বসানো তাইজুল ইসলাম নিলেন ৪ উইকেট। তিনি জ্বলে ওঠায় আয়ারল্যান্ডের প্রথম ইনিংস থামল ২৬৫ রানে। তাদেরকে ফলো-অন না করিয়ে ফের ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ। ২১১ রানে এগিয়ে থেকে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে শতরানের জুটি গড়লেন মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম। তাদের ফিফটিতে মিরপুর টেস্টে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত করল টাইগাররা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ১৫৬ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। হাতে ৯ উইকেট নিয়ে তাদের লিড বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬৭ রান। ফলে জয়ের জন্য আইরিশদের বিশাল লক্ষ্য দেওয়ার পথে রয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এদিন বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর প্রভাব পড়ে এই টেস্টেও। ভয়ঙ্কর ঝাঁকুনিতে পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। খেলা বন্ধ থাকে তিন মিনিট। দুই দলের ক্রিকেটাররা মাঠের একপাশে জড়ো হন। ড্রেসিং রুম থেকেও বেরিয়ে আসেন কয়েকজন। এরপর অবশ্য খেলা চলে নির্বিঘ্নে। জয় ও সাদমানের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১১৯ রান। গ্যাভিন হোয়ের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে জয় থামেন ৯১ বলে ছয়টি চারের সাহায্যে ৬০ রানে। এর আগে হোয়ের বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে জীবন পেয়েছিলেন তিনি। তখন তিনি ব্যাট করছিলেন ৩২ রানে। জয় ফিরলেও ক্রিজে সাদমান টিকে আছেন ৬৯ রানে। তার ১১০ বলের ইনিংসে চার পাঁচটি। তার সঙ্গী মুমিনুল হক চারটি চারের মাধ্যমে ২১ বলে ১৯ রানে অপরাজিত আছেন। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এই নিয়ে মাত্র ১২তম বারের মতো শতরানের উদ্বোধনী জুটি পেল বাংলাদেশ। যার তিনটিরই দেখা মিলল চলতি বছর। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগের টেস্টে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ১৬৮ রানের জুটি গড়েছিলেন জয় আর সাদমানই। এর আগে গত এপ্রিলে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১১৮ রানের জুটি এসেছিল সাদমান ও এনামুল হক বিজয়ের কাছ থেকে। দ্বিতীয় সেশনে আইরিশরা অলআউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ পায় উড়ন্ত শুরু। চা বিরতির আগে ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৪১ রান তুলে ফেলেন জয় ও সাদমান। ফিরে এসে আস্থার সঙ্গেই খেলতে থাকেন দুজন, তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। এসময় অবশ্য তাদের বেশ পরীক্ষা দিতে হয় প্রতিপক্ষের স্পিনারদের বিপরীতে। কারণ, কিছু বল টার্ন করছিল, কিছু নিচু হচ্ছিল, আবার কিছু লাফিয়ে উঠছিল। ম্যাচের ৩২তম ওভারে উদ্বোধনী জুটির ইতি ঘটার পর আর কোনো বিপদ হতে দেননি সাদমান ও মুমিনুল। তৃতীয় সেশনে খেলা হয়েছে ৩০ ওভার। বাংলাদেশ শুধু জয়ের উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১১৫ রান। এর আগে আয়ারল্যান্ডকে গুটিয়ে দেওয়ার পথে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার তাইজুল। এই বাঁহাতি স্পিনার ৭৬ রান খরচায় শিকার করেন ৪ উইকেট। শেষ ব্যাটার ম্যাথু হামফ্রিসকে সাজঘরে ফিরিয়ে বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিবের পাশে বসেন তিনি। বাংলাদেশের ২৫ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এখন যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তারা। দুজনেরই নামের পাশে সমান ২৪৬ উইকেট। তবে সাকিবকে যেখানে খেলতে হয়েছে ৭১ টেস্ট, সেখানে ৫৭তম টেস্টেই তার রেকর্ড ছুঁলেন তাইজুল। আইরিশদের দ্বিতীয় ইনিংস বাকি থাকায় চলতি টেস্টেই সাকিবকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন তিনি। দ্বিতীয় দিনের ৫ উইকেটে ৯৮ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল সফরকারীরা। এদিন তারা যোগ করে আরও ১৬৭ রান। লরকান টাকার অপরাজিত থাকেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৫ রানে। তার ১৭১ বলের ধৈর্যশীল ইনিংসে চার সাতটি। এছাড়া, অভিষিক্ত স্টিফেন ডোহেনি ৭৭ বলে ৪৬ ও জর্ডান নিল ৮৩ বলে ৪৯ রান করেন। তাইজুলকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া খালেদ আহমেদ ও হাসান মুরাদ দুটি করে উইকেট নেন। একটুর জন্য ফলো-অন এড়াতে না পারলেও সেটি কোনো প্রভাব ফেলেনি ম্যাচে। বাংলাদেশ আবার ব্যাটিংয়ে নামে। দলকে আরও একবার ভালো শুরু এনে দেন সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয়। টানা দ্বিতীয় টেস্টে শতরানের বন্ধ করেন দুই ওপেনার। চা বিরতির আগে সাত ওভারেই ৪১ রান তুলে ফেলেন দুজন। পরে জুটির শতরান আসে ১৫২ বলে। ৩২ রানে জীবন পেয়ে জয় পঞ্চাশে পা রাখেন ৭৫ বলে, সাদমান ৭৬ বলে। লেগ স্পিনার গ্যাভিন হোয়ের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে জয় থামেন ৬০ রানে। বাকি সময়টুকু দাপটেই কাটিয়ে দেন সাদমান ও মুমিনুল হক। ১১০ বলে ৬৯ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন সাদমান, ২১ বলে ১৯ রানে ব্যাট করছিলেন মুমিনুল। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৭৬ আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৮৮.৩ ওভারে ২৬৫ (আগের দিন ৯৮/৫) (টাকার ৭৫*, ডোহেনি ৪৬, ম্যাকব্রাইন ০, নিল ৪৯, হোয়ে ৪, হামফ্রিজ ৮; ইবাদত ১২-১-৪৭-১, খালেদ ৮-০-৩৯-২, তাইজুল ৩৫.৩-৬-৭৫-৪, মুরাদ ২১-৩-৫৩-২, মিরাজ ৯-১-৩৮-১, মুমিনুল ৩-১-৫-০)। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৩৭ ওভারে ১৫৬/১ (জয় ৬০, সাদমান ৬৯*, মুমিনুল ১৯*; নিল ৪-০-২৭-০, হামফ্রিজ ৬-০-২৫-০, ম্যাকব্রাইন ১৫-২-৪০-০, হোয়ে ১২-০-৫৬-১)।