ভূমিকম্পে সাগরের বুকে জন্ম নেয়া সেন্টমার্টিন দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, সেন্টমার্টিন। তার শান্ত বালুকাময় সৈকত ও নীল জলের জন্য পর্যটকদের কাছে স্বপ্নপুরী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই দর্শনীয় দ্বীপটির জন্মরহস্য লুকিয়ে আছে এক বিশাল প্রাকৃতিক বিস্ময়ের মধ্যে। ভূতত্ত্ববিদদের গবেষণায় জানা গেছে, বর্তমান সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভৌগোলিক উপস্থিতি প্রায় ২৬৩ বছর আগে, ১৭৬২ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলশ্রুতিতে জন্ম নেয়। ওই বছরের ২ এপ্রিলের ওই ভূমিকম্প সাগরের তলদেশে বিশাল পরিবর্তন ঘটায়। বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৃষ্টির পেছনে রয়েছে ভারত ও মিয়ানমার প্লেটের সংযোগস্থলে থাকা এক বিশাল প্লেটচ্যুতি অঞ্চল। ঐতিহাসিক নথি এবং আধুনিক ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভূমিকম্পটি রিখটার স্কেলে প্রায় ৮.৫ বা তারও বেশি মাত্রার ছিল। এটি ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী কম্পন হিসেবে বিবেচিত। ভূমিকম্পের রাতেই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অঞ্চলে তীব্র কম্পন অনুভূত হয়েছিল। এই প্রলয়ঙ্করী কম্পনের ফলে সমুদ্রের তলদেশে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়, যা ভৌগোলিকভাবে ‘ভূমিকম্পজনিত সহ-উত্থান’ হিসেবে চিহ্নিত। সমুদ্রের নিচে থাকা তলদেশের বৃহৎ অংশ স্থায়ীভাবে উপরে উঠে আসে। এর ফলে সেন্টমার্টিন এবং টেকনাফের পূর্বের ডুবো চরগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে স্থায়ী ভূখণ্ড হিসেবে জেগে ওঠে। ভূতাত্ত্বিক গবেষণা এবং কার্বন পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ সেই রাতে প্রায় ১০ ফুট উচ্চতায় উপরে উঠে এসেছিল। দ্বীপে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উপরে উঠে আসা মৃত প্রবালের স্তরই এই উত্থানের সবচেয়ে দৃঢ় প্রমাণ। এই প্রবালগুলো আগের দিকে পানির নিচে ছিল, কিন্তু ভূমিকম্পের কারণে হঠাৎ উঠে আসায় মারা যায়। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, ১৭৬২ সালের আগে এই অঞ্চলটি স্থায়ী স্থলভূমি ছিল না। গবেষকরা জানান, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় কেবল সেন্টমার্টিনকে নতুন ভূখণ্ড দেয়নি; পুরো উপকূলীয় অঞ্চলের ভৌগোলিক মানচিত্রকেও পাল্টে দিয়েছে। এছাড়া ওই ভূমিকম্পের ফলে ভয়াবহ সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসও সৃষ্টি হয়েছিল, যা বিপুল প্রাণহানি ঘটিয়েছিল।
