বাংলাদেশকে আধুনিক করায় কি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো শেখ হাসিনাকে?

২১ নভেম্বর, ২০২৫ | ৮:১০ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

"প্রতিটি মহান জাতির জন্ম হয় একটি স্বপ্ন থেকে—একটি সাহসী দৃষ্টিভঙ্গি, যা সীমাবদ্ধতা, চ্যালেঞ্জ ও সন্দেহের দেয়াল ভেদ করে এগিয়ে যায়।" বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, যে নেত্রী দেশকে আধুনিক করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন তাকে কীভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো। এটি ১৬ বছরে অর্জিত সমস্ত প্রগতি ও আধুনিকতার ওপর আঘাত। ষোলো বছর আগে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা কেবল সড়ক, সেতু বা আকাশচুম্বী ভবনের স্বপ্ন ছিল না; এটি ছিল মর্যাদা, আত্মনির্ভরতা ও অগ্রগতির স্বপ্ন। আজ মহিমান্বিত পদ্মা সেতু, ঢাকায় গর্জে চলা মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল—প্রতিটি অর্জনই সেই স্বপ্নের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। যা একসময় অসম্ভব মনে হতো, আজ তা আমাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা। একটি জাতির জীবনে কিছু মুহূর্ত আসে যা তার আত্মবিশ্বাসকে ফুটিয়ে তোলে। বাংলাদেশের জন্য সেই মুহূর্তটি ছিল পদ্মা সেতু। যখন আন্তর্জাতিক মহল আমাদের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল, শেখ হাসিনা দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন: "আমরা নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব।" এটি শুধু অবকাঠামো প্রকল্প ছিল না; এটি ছিল এক জাতির আত্মবিশ্বাসের ঘোষণা। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকৌশল বিস্ময় গড়ে তোলে। এটি দক্ষিণের ২১টি জেলাকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জিডিপিকে প্রায় ১.৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। বাণিজ্য, পর্যটন ও কৃষিক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে নতুন দিগন্ত। এটি প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশ পারে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মেগা প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের হৃদয়ে এনে দিয়েছে বিশ্বমানের গতিশীলতা। মেট্রো রেল: ঢাকার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল—যে যাত্রা একসময় দুই ঘণ্টারও বেশি লাগত, আজ তা সম্পন্ন হয় মাত্র ৪০ মিনিটে। এটি সময় সাশ্রয় করে মানুষের জীবনমান উন্নত করেছে। বঙ্গবন্ধু টানেল: কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এই টানেল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম। এটি চট্টগ্রামের দুই তীরকে যুক্ত করে বাণিজ্য ও যোগাযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। নতুন অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবে এটি প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি দক্ষতাকে নতুন গতি দিচ্ছে। এটি প্রতীকীভাবে জানায়—বাংলাদেশ এখন উদ্ভাবনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ডিজিটাল রূপান্তর গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিস্তৃত, বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়েছে। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল: শেখ হাসিনার উদ্যোগে দেশজুড়ে গড়ে উঠছে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই অঞ্চলগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত নতুন দুয়ার, বাংলাদেশকে তৈরি পোশাক, আইটি, উৎপাদন ও ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পের বৈশ্বিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত করছে। এটি লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে গ্রামীণ ভূমিকে সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করছে। একসময় "ডিজিটাল বাংলাদেশ" ছিল স্বপ্ন, আজ তা বাস্তবতা। ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থার মাধ্যমে নাগরিকরা এখন অনলাইনে দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে সরকারি সেবা পাচ্ছেন। দেশের আইটি খাত প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী ইঞ্জিন হিসেবে ১০ লাখেরও বেশি তরুণ পেশাদার ও ফ্রিল্যান্সারকে স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস ও বৈশ্বিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। শেখ হাসিনার অগ্রগতির দর্শন কেবল ভূমিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমানবন্দর আধুনিকীকরণ কর্মসূচি বাংলাদেশকে বাণিজ্য, পর্যটন ও বৈশ্বিক সম্পৃক্ততার নতুন যুগে প্রবেশ করিয়েছে। ষোলো বছর ধরে শেখ হাসিনা একটি গর্বিত, আধুনিক ও আত্মনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্ন বহন করেছেন। তিনি সেতু গড়েছেন যেখানে অন্যরা দেখেছিল নদী, মেট্রো বানিয়েছেন যেখানে অন্যরা দেখেছিল যানজট, আর শিল্প গড়েছেন যেখানে অন্যরা দেখেছিল অনিশ্চয়তা। তাঁর ভিশন ২০৪১ ছিল আরও উচ্চাভিলাষী। আজ এই রূপান্তরের স্থপতিকে যখন মৃত্যুদণ্ডের রায়ের মুখোমুখি হতে হয়, তখন বহু মানুষ প্রশ্ন তুলছেন—বাংলাদেশের আধুনিকীকরণের স্বপ্ন দেখার জন্যই কি তাঁকে এই কঠিন প্রতিদান পেতে হলো? তাঁর উত্তরাধিকার প্রতিটি সেতুর ওপর দিয়ে ছুটে চলা গাড়িতে, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং প্রতিটি নাগরিকের মনে বেঁচে আছে। এই রায়ের ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের অগ্রগতি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।