বাংলাদেশের এলজিবিটি কমিউনিটিকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র: পর্ব-৩
আমি আমার আগের লেখায় জানিয়েছি, কীভাবে বাংলাদেশের এলজিবিটি কমিউনিটিকে ব্যবহার করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করা হয় এবং এই ষড়যন্ত্রে হোচিমিন ইসলামের ভূমিকা। এই পোস্টে আমি লিখব সমকামি পরিচয়ের অভিযোগে এনসিপি দলের প্রথম ঘোষিত জাতীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব মো. মুনতাসির রহমানের বিষয়ে:
মো. মুনতাসির রহমান বাংলাদেশের এলজিবিটি কমিউনিটির সদস্য এবং বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি কমিউনিটির কিছু উন্নয়নমূলক কাজের সাথে জড়িত। কিন্তু গত দুই-তিন বছর তিনি তার একজন সহযোগীর মাধ্যমে কমিউনিটির মানুষ এবং অন্যান্যদের জন্য গোপন পার্টির আয়োজন করতে থাকেন। এই পার্টিগুলো সারারাত চলে এবং সেখানে কী কী হতে পারে সেটি আপনারা অনুমান করে নিতে পারেন।
এই পার্টিতে তিনি জানা-অজানা এবং পরিচয়ের বিস্তারিত যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনেক মানুষকে আমন্ত্রণ জানাতেন যাদের বেশিরভাগই তিনি চিনতেন নিজেদের মধ্যকার যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে। তার এবং তার পার্টি আয়োজক সহযোগী এরকম কয়েকটি পার্টি আয়োজন করে কোনো বাধা ছাড়াই সফল হওয়ার পর, তারা আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন। নিজেদের পরিচিত কিছু বিদেশি কূটনীতিক এবং এরকম অচেনা মানুষদের প্ররোচনায় তারা এই ধরনের পার্টিগুলোতে ১০০–৫০০ এর বেশি মানুষকে আমন্ত্রণ জানাতে থাকেন। আপনাদের জেনে রাখা ভালো, এই পার্টিগুলোতে যোগদান করতে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা ফি দিতে হত।
মুনতাসিরের এহেন ব্যক্তিগত যৌনাচারের সুবাদে তিনি তার অজান্তে কিছু শিবিরকর্মী ও বর্তমান এনসিপির কিছু নেতার সাথে পরিচিত হন। এছাড়া তিনি ‘লোকায়ত বিদ্যালয়’ নামে যে থিংক ট্যাঙ্কের কথা বলেছিলাম, যেখানে ফরহাদ মাযহার বিভিন্ন সময় বক্তব্য দিতেন, সেই পাঠচক্রে অংশগ্রহণ করতেন নিয়মিত। সেইসাথে এই পাঠচক্রে যোগ দিতেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব) এর শিক্ষক, বাংলাদেশের কিছু বামপন্থী রাজনৈতিক দলের তরুণ সদস্য, কিছু নারীবাদী সংস্থার সদস্য, রাষ্ট্রচিন্তা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কিছু নেতা এবং আরও কিছু এলজিবিটি কমিউনিটির সদস্য যাদের সাথে তিনি নিবিড় যোগাযোগ রাখতেন। তিনি শিবিরকর্মী ও বর্তমান এনসিপির পরিচিত নেতাদের তার পার্টিতে আমন্ত্রণ জানাতেন।
গত বছর বাসাবো এলাকায় এরকম একটি পার্টিতে অংশগ্রহণকারী একজন নারীকে তার অচেতন অবস্থায় একজন ধর্ষণ করেন। পার্টির পরের দিন সেই নারী এবিষয়ে অভিযোগ জানালে জানা যায়, যিনি ধর্ষণ করেছেন তাকে মো. মুনতাসির রহমান চিনতেন না; বরং তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মুনতাসিরের আরেকজন পার্টি আয়োজকের মাধ্যমে, যিনি এই ধর্ষককে চিনতেন নিজেদের দৈহিক সম্পর্কের মাধ্যমে। সেই ধর্ষক একজন শিবিরকর্মী যার পিতা তাদের এলাকার জামায়াত নেতা।
মো. মুনতাসির রহমানের সাথে ঘনিষ্ঠ সেইসব শিবিরকর্মী নিয়মিত তার এবং কমিউনিটির খোঁজখবর নিতেন এবং তারা সেভাবেই বিভিন্ন ধর্মীয় নামধারী গোষ্ঠীগুলোকে কো-অর্ডিনেটেড ক্যাম্পেইন ডিজাইন, অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে। তারা নানাভাবে এলজিবিটি কমিউনিটির বিষয়টি সামনে আনতে মো. মুনতাসির রহমানকে ব্যবহার করে, যা বাংলাদেশের ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস তদারকি করে।
আমার সংগঠন ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ থেকে বিভিন্নভাবে এই বিষয়ে সতর্ক করা হলে এবং আমাদের সামাজিক কর্মসূচি ও ঢাকা প্রাইডের মাধ্যমে কমিউনিটির পজিটিভ ন্যারেটিভ তুলে ধরতে থাকলে, তাদের এই ষড়যন্ত্রে বাধা সৃষ্টি হয়। যার ফলে ১০ বারের বেশি আমার সংগঠনের ফেসবুক পেজ সাসপেন্ড করানো হয় এবং সবশেষে ইনক্লুসিভ বাংলাদেশের ফেসবুক পেজ মুছে ফেলা হয়।
কমিউনিটির কিছু মানুষ এই বিষয়গুলি দূতাবাসের মতামতের জন্য অনুরোধ করলে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এ বিষয়ে সরাসরি সহযোগিতা করতে অপারগতা জানায় এবং মুনতাসির রহমানকে ফেসবুক (মেটা) এর সাথে কমিউনিটির লিয়াজোঁ ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনোনীত করা হয়। এতে কমিউনিটির অনেকেই অস্বস্তিবোধ করেন, কারণ মুনতাসিরের যে সকল কর্মকাণ্ড সমালোচিত ছিল তার ভিতর অন্যতম ছিল তার এইসব রাত্রিকালীন পার্টি আয়োজন—যার নাম দেওয়া হত: অশ্লীল রাত, বর্ষার বেশ্যা, শীতের মাগি, গরম পানি ইত্যাদি। মুনতাসিরের ডিজিটাল সিকিউরিটি বিষয়ে পরীক্ষিত কোনো অভিজ্ঞতা না থাকাও এর একটি কারণ।
এই ঘটনার কিছুদিন পর মুনতাসির তার নিজের সংগঠনের ব্যানারে একটি অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং সেখানেও কিছু অচেনা ব্যক্তি যোগ দেন এবং অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে পর্নগ্রাফিক ভিডিও প্রদর্শন করা শুরু করে। ২০–৩০ সেকেন্ড এই ভিডিও চলতে থাকলেও মুনতাসির এব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে উপস্থিত কয়েকজন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সেটি বন্ধ হয়।
এই ঘটনার কিছুদিন আগে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে সাভারের কল্লোল রিসোর্টে মুনতাসির এরকম একটি পার্টি আয়োজন করেন, যার নেপথ্যে ছিল তার পরিচিত কিছু শিবির সদস্য। এই পার্টির আয়োজনের খবর এই শিবিরকর্মীরাই স্থানীয় মুসল্লি ও পুলিশকে জানিয়ে দেয় এবং পার্টি শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর, আগেই খেপিয়ে তোলা সাধারণ জনগণের হামলায় সেটি পণ্ড হয়। মুনতাসির ও তার সহযোগী এই বিষয়টি মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সক্ষম হন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সহায়তায়, কারণ সেই পার্টিতে তাদেরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
মো. মুনতাসির রহমান বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী, নারীবাদী ও সমাজকর্মী যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক ছিলেন তাদের বিভিন্ন তথ্য এই শিবিরকর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। যার ফলে তাদের অনেকেই ৫ই আগস্টের পর প্রকাশ্যে হুমকি পেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হন।
৫ই আগস্ট পরবর্তীতে মুনতাসিরের কার্যকলাপে কমিউনিটির অনেকেই বিরক্ত ছিলেন। তাদের এই বিরক্তির মাত্রা আরও বাড়ে যখন তিনি প্রকাশ্যে জামায়াত এবং শিবিরের রাজনৈতিক কাজ ও দর্শন সমর্থন করেন এবং কমিউনিটির অনেককে তার এই সমর্থনে থাকতে আহ্বান জানান। তিনি প্রকাশ্যে, তার ফেসবুকে জুলাই মাসে কীভাবে বর্তমান এনসিপির হান্নান মাসউদ এবং এনসিপির অন্যদেরকে শিবিরের সাথে সহায়তা করেছেন সেটা বর্ণনা করেছেন।
শিবির এবং এনসিপির প্রতি তার কাজের পুরস্কার হিসেবে এনসিপি তাকে তাদের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে ঘোষণা করে। তার নিজের পরিচালিত প্রাইভেট ফেসবুক গ্রুপ “আনন্দলোক” এ, তার এই রাজনৈতিক কাজে যোগদানের জন্য কমিউনিটির মানুষের তীব্র সমালোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলতে বাধ্য হন যে এনসিপিতে কমিউনিটির জন্য “সিট” বরাদ্দ আছে, যা দিয়ে তিনি নিজেকে ভবিষ্যতের সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান এবং কমিউনিটির জন্য কাজ করতে চান। এনসিপির এই ঘোষণার পর শিবিরের কর্মীরা জনসম্মুখে মুনতাসিরের সমকামী পরিচয় প্রকাশ করে দেয় যাতে এনসিপি সাধারণ মানুষের জনসমর্থন হারিয়ে দুর্বল হয়। এনসিপি জনসমর্থন হারানোর ভয়ে তড়িঘড়ি করে “কিছু জানতাম না” উল্লেখ করে মুনতাসিরকে বহিষ্কার করে।


