নাঙ্গলকোটে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রকে ‘সন্ত্রাস বিরোধী’ মামলায় গ্রেফতার: এলাকাবাসীর ক্ষোভ
হাতে কলম আর চোখের সামনে বই-খাতা থাকার কথা ছিল কিশোর মো. ইমরান হোসেনের (১৫)। স্কুলের বেতন আর পরীক্ষার ফি পরিশোধ করে সে প্রস্তুতি নিচ্ছিল আসন্ন বার্ষিক পরীক্ষার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, পড়ার টেবিলের বদলে এই স্কুলছাত্রের ঠাঁই হয়েছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এই কিশোরকে রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইনে’ গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত মো. ইমরান হোসেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির নিয়মিত ছাত্র (রোল নং-৪৮)। বিদ্যালয়ের রসিদ বই (ক্রমিক নং-১৫০৫২) অনুযায়ী, গত ১১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখেও সে স্কুলের বেতন ও সেশন ফি বাবদ ১৫০০ টাকা জমা দিয়েছে। অথচ নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ তাকে গত ১৭ নভেম্বর গ্রেফতার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা (নং-১২/১৬৬) দায়ের করে আদালতে পাঠায়। পুলিশের এজাহারে ১৫ বছর বয়সী ইমরানকে ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ আনা হয়েছে যে, সে সরকার বিরোধী স্লোগান, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং ককটেল বিস্ফোরণসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল। ইমরানের পরিবারের সদস্যরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, “ইমরান নিতান্তই একজন শিশু। রাজনীতির অ আ ক খ-ও সে বোঝে না। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে তাকে এমন মিথ্যা মামলায় জড়ানোয় তার শিক্ষাজীবন আজ ধ্বংসের মুখে।” বাংলাদেশের শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে কাউকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাদের আটকের ক্ষেত্রে বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। অথচ ইমরানকে সাধারণ হাজতীদের মতো করে আদালতে পাঠানো হয়েছে, যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক স্কুলছাত্রকে এভাবে রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করায় এলাকাবাসী ও সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন, শিশু আইন লঙ্ঘন করে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া একটি ছেলেকে পুলিশ কিভাবে দুর্ধর্ষ অপরাধী সাজায়? অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে ইমরানকে মুক্তি দিয়ে তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।
