৯ জনকে সুবিধা দিতে ২৫ হাজার ব্যবসায়ীকে পথে বসানোর ‘চক্রান্ত’, নেপথ্যে উপদেষ্টার ইশারা: সাংবাদিক সোহেল
মাত্র ৯ জন ব্যবসায়ীকে মোবাইল ফোনের একচেটিয়া (মনোপলি) ব্যবসার সুযোগ করে দিতে সারাদেশে প্রায় ২৫ হাজার সাধারণ ব্যবসায়ীকে পথে বসানোর গভীর চক্রান্ত চলছে। সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা ( প্রধান উপদেষ্টা ড ইউনুসের বিশেষ সহকারী ও নেদারল্যান্ডসের নাগরিক ফয়েজ আহমদ) ইশারায় এই সিন্ডিকেটকে সুবিধা দিতেই একটি সংবাদ সম্মেলন বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিনা অপরাধে প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা ডিবি হেফাজতে থাকার পর মুক্তি পেয়ে এমন বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন এডিটর মিজানুর রহমান সোহেল। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব তথ্য জানান। এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। সাংবাদিক সোহেল জানান, বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার’ (এনইআইআর) বা মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছিল ‘মোবাইল ফোন বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ’ (এমবিসিবি)। সোহেল এই সংগঠনের মিডিয়া পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার অভিযোগ, ওই সংবাদ সম্মেলন বন্ধ করতেই তাকে গভীর রাতে তুলে নেওয়া হয়। স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “দীর্ঘ সময় পর বুঝতে পারলাম, সরকারের একজন উপদেষ্টার ইশারায় মাত্র ৯ জন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে মনোপলি ব্যবসা করার সুযোগ দেয়ার জন্যই আমাকে আটক করা হয়েছিল। সেই প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করাই তাদের প্রধান টার্গেট ছিল।” মিজানুর রহমান সোহেল দাবি করেন, দেশের মুক্ত বাণিজ্য নীতির সঙ্গে এনইআইআর স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক। প্রতিযোগিতা কমিশন থাকার পরেও মাত্র ৯ জন ব্যবসায়ীকে বিশেষ সুবিধা দিতে সারাদেশে ২৫ হাজার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে পথে বসানোর আয়োজন চলছে। তিনি বলেন, “এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামের সাধারণ মানুষ, প্রবাসীসহ অনেকেই বিপদে পড়বেন। একটা চেইন ভেঙ্গে পড়বে। অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে যাবে।” সোহেল তার স্ট্যাটাসে সরাসরি অভিযোগ করেন যে, সিন্ডিকেটের ওই ৯ জন ব্যবসায়ীর একজন বর্তমান সরকারের এক উপদেষ্টার স্কুলবন্ধু। তিনি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়বের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “একটা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললে সরকার কেন ভয় পায়? জেনে রাখা ভালো, এই ৯ জনের একজন ওই উপদেষ্টার স্কুল-বন্ধু।” আটকের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “ডিবি প্রধান আমার সঙ্গে কথা বলবেন—এই অজুহাতে ৫/৬ জন সদস্য আমাকে বাসা থেকে তুলে নেয়। ডিবিতে নিয়ে আসামির খাতায় নাম লেখা হয়, জুতা-বেল্ট খুলে গারদে রাখা হয়। কিন্তু কেন আমাকে আটক করা হলো, তা ডিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বলতে পারেননি।” বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে সোহেল বলেন, “যারা মুখে ‘বাকস্বাধীনতা’র বুলি আওড়ান, তারাই কি আমাকে বাকরুদ্ধ করতে এই আয়োজন করলেন? মগের মুল্লুকে এই কি তবে বাকস্বাধীনতার বাস্তব চিত্র?” এদিকে, সাংবাদিক সোহেলের সঙ্গে সংগঠনটির সেক্রেটারি আবু সাঈদ পিয়াসকেও আটক করা হয়েছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পিয়াস এখনো ডিবি কার্যালয়ে আটক রয়েছেন বলে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা হয়েছে। আটকের পর সাংবাদিক সমাজ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতিবাদের কারণে দ্রুত মুক্তি পেয়েছেন বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মিজানুর রহমান সোহেল।
