প্রগতিশীলতার মুখোশ খুলে উগ্রবাদের পক্ষে: ঢাবি শিক্ষক মোনামীর ভয়ংকর ভোলবদল ও হিযবুত-জামায়াত কানেকশন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রোক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া মোনামী। ৫ আগস্টের আগে যিনি ছিলেন আওয়ামীপন্থী নীল দলের কট্টর সমর্থক ও সুবিধাভোগী, পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই ভোল পাল্টে তিনি এখন জামায়াত-শিবিরের অঘোষিত ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’। প্রগতিশীলতার লেবাসে দীর্ঘদিন ধরে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এখন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর এবং জামায়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক লবিস্ট হিসেবে কাজ করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মোনামী নীল দলের ব্যানারে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। এমনকি গত মে মাসেও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে চীন সফরে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হন তিনি। অথচ সরকার পতনের পরপরই তিনি ‘মুহি শিবির হলে শিবির ভালো’ স্লোগান দিয়ে উগ্রবাদের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি কোনো আদর্শিক পরিবর্তন নয়, বরং চরম সুবিধাবাদ এবং ক্ষমতার বৃত্তে টিকে থাকার ঘৃণ্য কৌশল। মোনামীর উত্থানের পেছনে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর-এর সংশ্লিষ্টতার ছায়া স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তথ্যে প্রকাশ, মোনামীর মেন্টর এবং ঢাবি লোকপ্রশাসন বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. সৈয়দা লাসনা কবীর এবং তাঁর স্বামী ড. শেখ তৌফিক হিযবুত তাহরীরের শীর্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত। ড. তৌফিক নিষিদ্ধ সংগঠনটির রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। অভিযোগ, এই ‘তৌফিক-লাসনা’ নেক্সাসেরই নতুন এবং আধুনিক ‘প্রজেক্ট’ হলেন মোনামী। প্রগতিশীল পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি কীভাবে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর হাতের পুতুলে পরিণত হলেন, তা নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, মোনামী এখন বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি হিসেবে যাতায়াত শুরু করেছেন। টার্কিশ ফান্ডের নামে লাখ লাখ টাকা উপঢৌকন হিসেবে গ্রহণের অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ডাচ রাষ্ট্রদূতের বাসায় জামায়াতের প্রতিনিধি সেজে তাঁর উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, তিনি আন্তর্জাতিক মহলে উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে ‘গণতান্ত্রিক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার মিশনে নেমেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। মোনামীর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব। পিতা আমিনুল ইসলাম মিলন ছিলেন আওয়ামী লীগ আমলের প্রভাবশালী আমলা এবং প্রধান তথ্য কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, পিতার প্রভাব এবং ড. মোহাব্বত খান ও ড. লাসনা কবীরের লবিংয়ের জোরেই তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। মেধার চেয়ে ‘কানেকশন’ এবং ‘পারিবারিক পরিচয়’ তাঁর নিয়োগে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর নাটক সাজিয়ে মোনামী মূলত নিজের ইমেজ ক্লিন করার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পুলিশের সঙ্গে মূল প্রতিরোধ গড়েছিলেন অধ্যাপক ড. নুসরাত জাহান চৌধুরী, কিন্তু মিডিয়ার সামনে হিরো সাজার কসরত করেছেন মোনামী। মুক্তিযোদ্ধা পিতার সন্তান ও সাবেক সেনাপ্রধানের পুত্রবধূ হয়েও মোনামী যেভাবে উগ্রবাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন, তা নজিরবিহীন। প্রশ্ন উঠছে—মোনামী কি তবে হিযবুত তাহরীর ও জামায়াতের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুশীল সমাজে ঘাপটি মেরে থাকা কোনো ‘স্লিপার সেল’? তাঁর এই রহস্যজনক তৎপরতা এবং ভোলবদল জাতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অশনিসংকেত।
