দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরগুলো নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে ‘গোপন চুক্তি’র অভিযোগ আশরাফুল আলম খোকনের
দেশের প্রধান চারটি সমুদ্রবন্দর—চট্টগ্রাম, পায়রা, পানগাঁও ও মোংলা—জনগণের অজান্তে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন। তিনি দাবি করেছেন, দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র এসব বন্দর নিয়ে ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি গোপন চুক্তি করা হয়েছে, যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে প্রশ্ন রাখেন, “দেশটাকে কি বেচে দিলেন? এটাই কি ছিল আপনাদের জুলাই চেতনা?” আশরাফুল আলম খোকন তার পোস্টে অভিযোগ করেন, কোনো ধরনের জনমত যাচাই বা সংসদে আলোচনা ছাড়াই অত্যন্ত গোপনে এই চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যে চুক্তি দেশের অর্থনীতিকে ৩০ বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটি কেন সংসদে তোলা হবে না? কেন এই চুক্তির কপি গোপন রাখা হলো? কোন শর্তে এই চুক্তি করলেন?” পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের রাজস্ব আয়ের ৬২ শতাংশ আসে বন্দরগুলো থেকে। বিদেশিদের হাতে বন্দর চলে গেলে এই রাজস্বের হিস্যা কমে যাবে এবং বাজেটের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “মাপুটো বন্দরে বিদেশি ট্যারিফ বাড়ার পর স্থানীয় বাজারে ২২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছিল। বাংলাদেশেও বিদেশিরা ফি বাড়ালে দ্রব্যমূল্য সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাবে এবং সরকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের বরাদ্দ কমাতে বাধ্য হবে।” সার্বভৌমত্ব ও সামরিক ঝুঁকির সতর্কবার্তা অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ঝুঁকি নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোকন। তিনি বলেন, “বন্দরের নিয়ন্ত্রণ শুধু অর্থনীতি নয়, এটি ভূ-রাজনৈতিক শক্তির কেন্দ্র।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, চুক্তিতে ‘security cooperation’ বা ‘strategic access’-এর মতো ধারা থাকতে পারে, যার সুযোগ নিয়ে বিদেশি শক্তি সামরিক সরঞ্জাম মজুদ বা নৌঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা করতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা এবং পাকিস্তানের গওয়াদর বন্দরের উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, “শ্রীলঙ্কা ঋণের ফাঁদে পড়ে চীনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে পারেনি। পাকিস্তানও বিদেশি নিয়ন্ত্রণের কারণে স্বাধীন নৌ-নীতি গ্রহণ করতে পারছে না। বাংলাদেশও কি একই পথে হাঁটছে?” খোকন অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের দিন এবং ছুটির দিনে তড়িঘড়ি করে এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এটিকে তিনি জনগণের নজর ভিন্নদিকে ঘোরানোর একটি কৌশল হিসেবে অভিহিত করেন। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তার মতে, ক্ষমতার ভাগ পাওয়ার লোভে ডান ও বামপন্থী দলগুলো এই জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির বিষয়ে চুপ রয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এত বড় জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার আগে জনগণের মতামত নেওয়া হলো না কেন? দেশ না থাকলে ক্ষমতা দিয়ে কী করবেন?” পোস্টের শেষে তিনি এই চুক্তিকে দেশের শ্রমবাজারের জন্যও ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, বিদেশি কোম্পানিগুলো নিজস্ব কর্মী নিয়োগ দিলে স্থানীয় শ্রমিকরা চাকরি হারাবে এবং ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার খর্ব হবে। দ্রষ্টব্য: প্রতিবেদনটি আশরাফুল আলম খোকনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
