দেশের নিরাপত্তা সংকটে স্বরাষ্ট্র সচিব পাকিস্তানে, ষড়যন্ত্রের গন্ধ
যখন উগ্রপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীর উত্থান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রায় ঘিরে দেশজুড়ে উত্তেজনা ও নিরাপত্তা সংকট আকার ধারণ করেছে, ঠিক তখনই দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এক দীর্ঘ ও রহস্যজনক পাকিস্তান সফরে ব্যস্ত। তার এই সফরকে কেন্দ্র করে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে এবং একটি গভীর ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিতর্কিত হিজবুত তাহরির-এর সঙ্গে পুরনো সম্পর্কের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নাসিমুল গনি গত ৭ নভেম্বর থেকে পাকিস্তানে অবস্থান করছেন, যা এরই মধ্যে দশ দিন ছাড়িয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, দেড় মাসের ব্যবধানে এটি তার দ্বিতীয় দীর্ঘ সফর। এর আগে সেপ্টেম্বরেও তিনি ৯ দিন পাকিস্তানে কাটিয়েছেন। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ সফরের বিষয়ে জাতিকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেছে। কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তার এমন ঘন ঘন পাকিস্তান ভ্রমণ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, ৮ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকেই ইউনূস সরকার এবং প্রতিরক্ষা বাহিনী পাকিস্তানের সঙ্গে একটি গোপন আঁতাত গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানি মন্ত্রী, সেনা কর্মকর্তা ও গোয়েন্দাদের ঘন ঘন ঢাকা সফর এই ষড়যন্ত্রের পালে হাওয়া দিচ্ছে। সম্প্রতি পাকিস্তানি নৌবাহিনী প্রধানের সফর এবং আগামী জানুয়ারিতে আইএসআই-এর একটি দলের ভারত-সীমান্ত পরিদর্শনের পরিকল্পনা এই বিপজ্জনক সম্পর্ককে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, নাসিমুল গনির এই সফরটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) খলিলুর রহমান ভারতের সঙ্গে কৌশলগত আলোচনার জন্য দিল্লি যাচ্ছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ককে পাশ কাটিয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে এই গোপন বোঝাপড়া আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি। এটি কার্যত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তাগত সহযোগিতাকে দুর্বল করার একটি অপপ্রয়াস। দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন ভঙ্গুর, তখন স্বরাষ্ট্র সচিবের এই বিদেশ ভ্রমণকে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং রাষ্ট্রের প্রতি চরম অবহেলা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকার যেখানে উগ্রবাদ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ, সেখানে তাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাকিস্তানমুখী নীতি প্রমাণ করে যে দেশের নিরাপত্তা ভুল হাতে পড়েছে। কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত তড়িঘড়ি করে নেওয়া হচ্ছে, যা দুই দেশের মধ্যে সন্দেহজনক কার্যকলাপ আরও সহজ করে দেবে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন। প্রশ্ন উঠেছে, কাদের স্বার্থে, কিসের বিনিময়ে এবং কোন গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নে এই বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার?
