শেখ হাসিনার রায়কে ‘পাত্তা’ দিল না ভারত, বিবৃতির পরতে পরতে কূটনৈতিক বার্তা

১৭ নভেম্বর, ২০২৫ | ১১:০৮ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

নয়াদিল্লির সংক্ষিপ্ত ও সতর্ক বিবৃতি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে গভীর তাৎপর্য বহন করছে। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে দেশটির তথাকথিত "আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল"-এর রায়কে কার্যত কোনো গুরুত্বই দিল না ভারত। আজ ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই রায়কে শুধু "নোট করা হয়েছে" বলে উল্লেখ করা হয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংক্ষিপ্ত ও সতর্ক বিবৃতির মাধ্যমে নয়াদিল্লি কেবল রায়টিকে অগ্রাহ্যই করেনি, বরং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ওপরই নিজেদের মূল ফোকাস রেখেছ রায়কে সরাসরি স্বীকৃতি নয়: ভারত রায়টিকে "স্বাগত" বা "নিন্দা" কিছুই জানায়নি। শুধু "নোট করেছে" বলে দায় সেরেছে, যা কূটনৈতিক ভাষায় বিষয়টিকে কম গুরুত্ব দেওয়ার সামিল। ট্রাইব্যুনালের বিশ্বাসযোগ্যতায় প্রশ্ন: বিবৃতিতে "আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল" নামটি উদ্ধৃতি চিহ্নের (" ") মধ্যে রাখা হয়েছে, যা এই প্রতিষ্ঠানের গঠন বা এখতিয়ার নিয়ে ভারতের সূক্ষ্ম কিন্তু স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। মূল ফোকাস স্থিতিশীলতা: ভারত রায়ের প্রসঙ্গ দ্রুত এড়িয়ে বাংলাদেশের "শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতা"-র মতো বৃহত্তর বিষয়ে নিজেদের অঙ্গীকারের কথা বলেছে। সবার সঙ্গে আলোচনার বার্তা: "সকল অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করব"– এই বার্তার মাধ্যমে ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে যে তারা শুধুমাত্র বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে নয়, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী। বিস্তারিত সংবাদ: ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কিত রায় প্রসঙ্গে নয়াদিল্লির অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, "ভারত বাংলাদেশের 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল' কর্তৃক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কিত ঘোষিত রায়টি নোট করেছে।" কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, "নোট করেছে" শব্দটির ব্যবহার এবং ট্রাইব্যুনালের নাম উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখার মধ্য দিয়ে ভারত অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই রায় এবং বিচার প্রক্রিয়ার থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রেখেছে। এর মাধ্যমে নয়াদিল্লি কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তারা এই রায়কে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির একটি অংশ হিসেবেই দেখছে, কোনো নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রক্রিয়া হিসেবে নয়। বিবৃতিতে ভারত রায়ের বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য না করে দ্রুত নিজেদের মূল উদ্বেগের কথা তুলে ধরে। এতে বলা হয়, "একজন নিকট প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের প্রতি, বিশেষ করে সে দেশের শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।" সবশেষে, "সকল অংশীদারদের" সঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়ে ভারত একটি বড় কূটনৈতিক চাল দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং বিরোধী শিবির উভয়কেই নিজেদের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিল। স্পষ্টতই, ভারতের কাছে এই রায়ের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা।