৩২ নম্বরে উত্তেজনা, সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বিধ্বস্ত বাড়ি ভেঙে খেলার মাঠ নির্মাণে এক্সকাভেটর নিয়ে আসা ছাত্র-জনতাকে ধাওয়া দিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। এ সময় ছাত্র-জনতা পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। বিপরীতে পুলিশকে অন্তত চারটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ১টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনে মূল সড়কে এই ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ১টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ছাত্র-জনতাকে এক্সকাভেটর থেকে নামিয়ে বাঁশি বাজাতে বাজাতে ধাওয়া দেয়। ধাওয়া খেয়ে ছাত্র-জনতা তিন ভাগে সরে যায়— এক পক্ষ সোবহানবাগ, এক পক্ষ কলাবাগান এবং আরেক পক্ষ পান্থপথের দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাসেল স্কয়ার মোড়ে অবস্থান নিলে তিন দিক থেকেই তাদের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়ে ছাত্র-জনতা। পরে পুলিশ আবার ধাওয়া দিলে চারটি সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। দুপুর দেড়টার দিকে ছাত্র-জনতার একটি অংশ আবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনের সড়ক আটকে স্লোগান দিতে থাকে। তাদের চারপাশ ঘিরে রাখে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে থাকা ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পুলিশের ব্যারিকেড ছিল। ছাত্র-জনতা সেটি ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তাই আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি। এ সময় তারা কিছু ঢিল ছোড়ে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এক্সকাভেটর দিয়ে পরিত্যক্ত শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙতে আসাদের নেতৃত্বে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির উদ্দিন রিয়ন। তিনি বলেন, আমরা এই পরিত্যক্ত বাড়িটি ভেঙে একটি খেলার মাঠ নির্মাণের কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ বাধা দেয়। পরে সেনাবাহিনী আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে নানা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ যোগ দিচ্ছেন। আজ আমরা আমাদের কর্মসূচি সফল করব। এর আগে সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে দুইটি এক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২-এর বিধ্বস্ত বাড়ি ভাঙতে সেখানে পৌঁছায় ছাত্র-জনতা। তবে সেনাবাহিনী ও পুলিশের বাধার কারণে এক্সকাভেটরগুলো মূল সড়ক থেকে ভেতরে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে সেখানে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে এক্সকাভেটর দুটি পাশের মেট্রো শপিং মলের সামনে রাখা হয়। এরপর থেকে ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২-এ প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ বারবার বাধা দিলে উত্তেজনা তৈরি হয়, যদিও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাস্থলে উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তখন ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয়, প্রশাসন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের নিরাপত্তার জন্য নয়, আমাদের নিরাপত্তার জন্য। সময় হলে প্রশাসন আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেবে। আমরা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙব না। এ সময় সেখানে শেখ হাসিনার দুটি কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। পাশাপাশি স্লোগান দিতে থাকে ছাত্র-জনতা— ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘ধানমন্ডি ৩২ ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও।’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও মানবঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
