যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে খুদা বখশ চৌধুরীর অনুপস্থিতি ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে
যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে নির্ধারিত সময়ে কাজে যোগ না দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের বিশেষ সহকারী খুদা বখশ চৌধুরীকে ঘিরে নানা জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে। ১৭ দিনের ছুটি শেষ হওয়ার পর সাত দিন অতিবাহিত হলেও তিনি এখনও গৃহ মন্ত্রণালয়ে কাজে ফেরেননি। চৌধুরীর এই অনুপস্থিতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে তাঁর বিষয়ে গৃহ মন্ত্রণালয়ের নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রণালয়—যিনি খুদা বখশকে নিজেই বেছে নিয়েছিলেন—এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি যে তিনি ছুটি বাড়িয়েছেন। ছুটি অনুমোদন, সফর ও শর্তাবলি সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী, চৌধুরী সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে “এক্স-বাংলাদেশ লিভ”-এর জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে ১৫ সেপ্টেম্বর গৃহ মন্ত্রণালয় তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফর অনুমোদন করে। অনুমোদন অনুযায়ী তিনি ২৪ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের অস্টিনে অবস্থান করার কথা ছিল। তিনি এ সফরে কূটনৈতিক পাসপোর্ট নম্বর D00017417 ব্যবহার করেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ ছিল যে ছুটিকালে তিনি বাংলাদেশি মুদ্রায় বেতন-ভাতা গ্রহণ করবেন এবং কোনো অংশ বিদেশি মুদ্রায় তোলা যাবে না। সফর-সংক্রান্ত ব্যয়ের দায়িত্বও তাঁকেই বহন করতে বলা হয়। তাঁর স্ত্রী ফায়জুন নেসা বেগম (পাসপোর্ট নং A12131536) সফরে সঙ্গে ছিলেন। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও পদে যোগদান নেই ৯ নভেম্বর ছুটি শেষে পুনরায় যোগদানের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তিনি সচিবালয়ে হাজির হননি। দীর্ঘ অনুপস্থিতি তাঁর ভবিষ্যৎ ভূমিকা ও অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিতর্ক, অভিযোগ ও অতীত ভূমিকা ১০ নভেম্বর ২০২৪ খুদা বখশ চৌধুরীকে ড. ইউনুসের বিশেষ উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং পরে তাঁকে গৃহ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগেই, ২০ অক্টোবর তাঁর বিরুদ্ধে গৃহ মন্ত্রণালয়ের ওপর অস্বাভাবিক প্রভাব বিস্তার এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছিল। রাজনৈতিক মহলে তখন প্রশ্ন ওঠে—একজন ৭৩ বছর বয়সী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা কীভাবে মন্ত্রণালয়ের ওপর এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছেন। এছাড়া ছাত্রজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন—এ তথ্যও সেই সময় নতুন করে আলোচনায় আসে। সেনা ব্রিগেডের ‘মনগড়া’ তথ্য প্রচারের অভিযোগ চলতি বছরের ১২ অক্টোবর নর্থইস্ট নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের কথিত সৈন্য চলাচল নিয়ে খুদা বখশ চৌধুরী একটি “মনগড়া গল্প” প্রচার করেন। ঘটনাটি যাচাই না করেই তিনি প্যারিসভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রভাবক পিনাকি ভট্টাচার্যকে ফোন দেন। এরপর পিনাকি একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যা সেনা সদর দফতর “উদ্বেগজনক” হিসেবে চিহ্নিত করে। কোথায় খুদা বখশ? সরকার নীরব বর্তমানে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন এবং কেন কাজে যোগ দিচ্ছেন না—এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বা গৃহ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। এ নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
