ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সেনা মোতায়েন চেয়ে সেনাসদরে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি, আইনি এখতিয়ার বহির্ভূত
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি বিশেষ বাহিনী। সংবিধানের আলোকে সরাসরি রাষ্ট্রের প্রধানের কাছে যাদের জবাবদিহিতা। কখন, কোথায়, কার নির্দেশনায় সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে, এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সংবিধানে দেয়া আছে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের প্রশাসন কি জানে না কখন কি অবস্থায় কে বা কার নির্দেশনায় সেনা মোতায়েন হতে পারে? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেনা মোতায়েনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিস থেকে সেনা সদর দপ্তরে নভেম্বর ১২, ২০২৫ বুধবার চিঠি পাঠিয়েছে। বিষয় হলো, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সেনা সদরে চিঠি দিয়ে পরদিন মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মামলার রায়ের দিন নির্ধারণকে ঘিরে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তার জন্য সেনা মোতায়েন চেয়েছে। কথিত এই চিঠিটি আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। সেনা মোতায়েনের জন্য সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসন সরাসরি সেনা সদরকে চিঠি লিখতে পারে না। সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসনের এহেন কার্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং সেনাবাহিনীর প্রতি তাচ্ছিল্যপনা দেখানোর শামিল। আজব! কি হচ্ছে বাংলাদেশে? কেউই আইনের তোয়াক্কা করছে না। কেউ কাউকে মানছে না। কার কি দায়িত্ব, কেউই সে ব্যাপারে সচেতন থাকার প্রয়োজনবোধ করছে না। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ, প্রত্যেকটির আলাদা অস্তিত্ব ও সম্মানের প্রতি কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। “সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে” নীতি নিয়ে সেনাবাহিনী কাজ করে বলে যে কেউ সেনাবাহিনীকে নিরাপত্তার জন্য ডাকতে পারবে? কোন বিধিবদ্ধ বিধান মানার প্রয়োজন নাই? ২০২৪ সালের ০৫ আগস্টের পর থেকে রাষ্ট্রীয় মদদে একের পর এক বিভিন্নভাবে সেনাবাহিনীকে তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে, অপমান করা হচ্ছে। কিন্তু কেন? ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভাঙচুরকরণের দিন সেনাবাহিনীর সদস্যদের মুখের সামনে দাঁড়িয়ে ভূয়া ভূয়া স্লোগান দিয়েছে। টকশোতে কেউ বলছে, কর্মচারীর আচরণ কর্মচারীর মতো হতে হবে, সেনাবাহিনীকে আচরণ শেখাচ্ছে, অথচ সেনাবাহিনীর যথোপযুক্ত ট্রেনিং আছে। কেউ বলছে, সেনানিবাস উড়িয়ে দিবে। সেনা প্রধানের নাম ধরে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করছে। আইন উপদেষ্টা প্রশ্ন করে বলেছে, সেনাবাহিনী নির্বাচন নিয়ে কথা বলার কে! আশ্চর্য, সেনাবাহিনীর নির্ধারিত কাজের বাইরে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তাদের কাজে লাগাবেন, কিন্তু কতদিন তাদের এমন কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে বা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে কতদিন দেশের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা তাদের জন্য সমীচীন হবে, সেটি তারা আলোচনা করতে পারবে না? বুঝতেছি না, কে কোন উদ্দেশ্যে এসব করছে! আমার মনে হচ্ছে, দেশের সবকিছু তছনছ করে দেয়ার ষড়যন্ত্রই কার্যকর হচ্ছে। সারা বিশ্বে শান্তি মিশনে গিয়ে যেখানে আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনী দেশের গৌরব অর্জন করছে, সেখানে হঠাৎ দেশের ভেতরে তাঁদের অপমান অপদস্ত করণে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি মহল, তাতে অন্তর্বর্তী সরকার সায় দিচ্ছে এবং তারাও ভূমিকা রাখছে, বিষয়টি খুবই আপত্তিকর। পরিশেষে বলবো, যারা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন, একটু সতর্ক হতে চেষ্টা রাখুন। গোলাম হোসেন, আইনজীবী। নভেম্বর ১৪, ২০২৫।
