শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায়কে দাবিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা আখ্যা নেতাকর্মীদের

১৫ নভেম্বর, ২০২৫ | ১০:২৬ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা কথিত মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় সোমবার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন ইউনূস সরকারের ট্রাইব্যুনাল। দীর্ঘদিনের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তার বিরুদ্ধে চলমান এই মামলার রায় ঘোষণার আগে দেশজুড়ে সহিংসতা দেখা গেছে। মামলা পরিচালনাকারী আদালতকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ এবং এর রায়কে ‘প্রহসনের রায়’ আখ্যা দয়ে প্রতিবাদস্বরূপ তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সারাদেশে কোটি কোটি সমর্থক দেশজুড়ে “লকডাউন” কর্মসূচি পালন করেছে। দলের নেতাকর্মীদের ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এমন ফরমায়েশি রায় দিয়ে আওয়ামী লীগকে দাবিয়ে রাখার হাস্যকর ও বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে অবৈধ ইউনূস সরকার। কিন্তু দেশের মানুষ এত বোকা নয়, তারা ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরেছে। অচিরেই ইউনূস সরকারকে হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনর্বহাল করবে মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নিয়েছে। কর্মী-সমর্থকদের ভাষ্যমতে, স্বতঃস্ফূর্ত সাধারণ মানুষ লকডাউন কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিধায় পরিবহন মালিকরাও যান চলাচল স্থগিত রেখেছে। ফলে অফিসযাত্রী ও শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশগ্রহণ করেনি। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠনের কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থান নেয় রাজপথে, তারা আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক কর্মী-সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে এবং তাদের ওপর মব সন্ত্রাস চালাতে রাস্তায় সহিংস অবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতেই। আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছৈ, বুধবার সারাদেশে ৩২টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা রেকর্ড করেছে কর্তৃপক্ষ। দেশজুড়ে ডজনখানেক বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। যদিও অসাবধানতাবশত ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দেখা যায়, খোদ পুলিশ সদস্যরাই হাতবোমা ছুড়ে প্যানিক সৃষ্টি করছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বিমানবন্দরসংলগ্ন এলাকায় আরও দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হলেও কেউ আহত হয়নি। ইতিপূর্বে সংবাদকর্মীর ভেস্ট পরে গণপরিবহনে পেট্রোল বোমা ছুড়ে ও গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত বিএনপির (যুবদল) নেতা রবিউল ইসলাম নয়নকে পুনরায় দেখা গেছে রাজপথে আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি প্রতিহত করতে সহিসং অবস্থায়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস নিরাপত্তা জোরদার করেছেন। রাজধানীতে বিজিবির ৪০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা। একই সঙ্গে চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে এবং সব ধরনের বড় সমাবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এদিকে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জে একটি সরকারি কার্যালয়ে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনার দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর, এমন দাবি করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত দুদিনে গ্রামীণ ব্যাংকের কয়েকটি কার্যালয়ের বাইরে ছোট আকারের আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। আল-জাজিরার ভাষ্য, এই ব্যাংকটি ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত। যদিও প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা তিনি নন, তিনি ছিলেন ব্যাংকটিতে ৬ হাজার টাকা বেতনের একজন সরকারনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পুলিশ বিস্ফোরণ এবং নাশকতার অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের বহু সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে। গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের জন্য আন্দোলনের নামে প্রাণঘাতী সহিংসতার পর শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় বিচারকার্য পরিচালনা করছে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার, অভিযোগ আওয়ামী লীগের। শেখ হাসিনাও বিভিন্ন বক্তব্যে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এ বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছুই নয়। সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবীরা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, এই আদালতটি একটি ‘সার্কাস’-এ পরিণত হয়েছে। এখানে শেখ হাসিনার পক্ষে নিজের পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ করতে দেওয়া হয়নি। বরং ইউনূস সরকারের বাছাইকৃত এমন একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনার পক্ষের দেখিয়ে, যিনি নিজেই শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজা দাবি করে বসে আছেন। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে আদালতের বিচার প্রক্রিয়া। সেখানে বিচারক এবং আইনজীবীরা শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে নিজেরাই হাসিঠাট্টায় মেতে উঠেছিলেন। যাতে যোগ দেন ইউনুস সরকারের নিযুক্ত আইনজীবীও। ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইউনূস সরকারের অভিযোগ—গত বছর বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর যে সহিংস ভূমিকা ছিল, তিনি তার “মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা”। যদিও শেখ হাসিনা এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিজস্ব আইন ও এখতিয়ার রয়েছে। তারা জানেন সহিংস বিক্ষোভ এবং দাঙ্গা থেকে দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় করণীয় সম্পর্কে আইনগত নির্দেশনা রয়েছে বাহিনীগুলোর ওপর। তারা সেই আইনে দায়বদ্ধ। পৃথিবীর সকল দেশেই এ ধরনের আইন ও প্রবিধান রয়েছে। আল-জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘকে উদ্ধৃত করে, সহিংসতায় প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়ে থাকতে পারেন। যদিও ইতিমধ্যে জাতিসংঘ এবং ইউনূস সরকারের অধীনস্ত স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্যে ব্যাপক গড়মিল পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্যবিভাগের দাবি, নিহতের সংখ্যা ৮৩৪ জন। আবার বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক ‘নিহত’ ব্যক্তি ‘জীবিত’ অবস্থায় ফিরে এসেছেন জনসম্মুখে। এমনকি অনেক জীবিতকে মৃত সাজিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কাল্পনিক মামলা দেওয়ার ঘটনাও উন্মোচিত হয়েছে। যদিও জাতিসংঘ তাদের এই একপেশে প্রতিবেদনে সেসব তথ্য সন্নিবেশিত করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটির স্বচ্ছতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা মিলে একটি পাল্টা প্রতিবেদন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ে জমা দিয়েছে। যেখানে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পরতে পরতে মিথ্যা তথ্য, নথিপত্রের গোঁজামিল, একপেশে বক্তব্য উপস্থাপনসহ অভিযোগগুলোর বিপরীত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসেন। এর ছয় বছর আগে তিনি সামরিক শাসক এরশাদবিরোধী গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি টানা ১৫ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। অসাংবিধানিক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস দাবি করেছিলেন, তিনি শেখ হাসিনার কাছ থেকে “সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া” একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা পেয়েছেন। যদিও অর্থনীতিবিদরা দেখিয়েছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো একসাথে সাড়ে ৩শর বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে যাননি ইতিপূর্বে, যা গত দেড় বছরের চিত্র। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় সহিংসতা বন্ধের অঙ্গীকার করলেও বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর প্রতিবেদন বলছে, দায়হীনতার সংস্কৃতি এখনো অব্যাহত আছে, যা এসব লঙ্ঘনকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পুলিশ ও কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। শত শত লাশ ভাসছে নদীতে। প্রতিদিন অন্তত ১২-১৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।