ছয় মাসে সর্বোচ্চ দর পতন

১৫ নভেম্বর, ২০২৫ | ৪:১৩ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। প্রতিদিনই চোখের সামনে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে তাদের বিনিয়োগের টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে ৯ দিনই দর হারিয়েছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার। এ সময়ে সূচক হারিয়েছে ৪১৯ পয়েন্ট বা ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। গতকাল ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪৬ কোম্পানির মধ্যে ৩২৩টি বা ৯০ শতাংশের দর কমেছে। বেড়েছে মাত্র ১৩টির দর। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১২২ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৭০২ পয়েন্টে নেমেছে। সূচক পতনের হার ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ পতন চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৫ মে সূচকটি ১৪৯ পয়েন্ট হারায়। এদিকে পতনের আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি বাড়ার কারণে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ডিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে ৩৮৩ কোটি টাকার শেয়ার, যা বুধবারের তুলনায় ৯৩ কোটি টাকা বেশি। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকালের পতন গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। দিনের লেনদেনের বিভিন্ন সময়ে অন্তত ৯৮ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন দরে কেনাবেচা হয়। এর মানে নির্দিষ্ট দিনে সর্বনিম্ন যে দরে শেয়ার কেনাবেচা হতে পারে, ওই পর্যায়ে নেমেছিল। লেনদেনের শেষে এসে অবশ্য এ সংখ্যা ২৮টিতে নামে। তবে ৫ থেকে ১০ শতাংশ দর হারিয়েছে অন্তত ১৭৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। গতকালের দর পতনে উদ্যোক্তা-পরিচালক থেকে শুরু করে সাধারণ বিনিয়োগকারী পর্যন্ত সবার সব শেয়ারের মূল্য এক দিনেই কমেছে তিন হাজার কোটি টাকা। গত দুই সপ্তাহে কমেছে ১৬ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। গতকাল বীমা খাতের ৫৮ কোম্পানির মধ্যে ৫৫টির দর কমেছে। বেড়েছে মাত্র তিনটির দর। সব খাতেই দর পতন ছিল। কারণ কী কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত তিন দিনের নাশকতার ঘটনার প্রভাব শেয়ারবাজারে দর পতনের অন্যতম কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট অনেকে। কেউ কেউ মনে করছেন, নতুন মার্জিন ঋণ বিধিমালা সংশোধনের পর কিছু ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ‘ফোর্স সেল’ করছে, যা দর পতন উস্কে দিচ্ছে। ডিএসইর পরিচালক ও সিনিয়র ব্রোকার মিনহাজ মান্নান ইমন মনে করেন, চলতি রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নাশকতার পাশাপাশি শেয়ারবাজার সংস্কারে মার্জিন ঋণ ও মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্বস্তি আছে। এর নেতিবাচক প্রভাবে দর পতন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। মিনহাজ মান্নান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক জটিল সমীকরণ সাধারণ মানুষের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে। কৌশলী বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের অনিশ্চিত পরিবেশে বিনিয়োগ থেকে হাত গুটিয়ে নেন। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার সংস্কারের অংশ হিসেবে যে নতুন মার্জিন ঋণ বিধিমালা করা হয়েছে, তা নিয়ে কিছু বিনিয়োগকারীর অস্বস্তি আছে। যদিও দীর্ঘমেয়াদে এ বিধান ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। তবে স্বল্পমেয়াদে এ ধকল নিতে পারছে না বাজার। আবার নতুন মার্জিন ঋণ বিধিমালা জারি হলেও এ কার্যকারিতা যে ছয় মাসের জন্য শিথিল থাকবে– এ বিষয়েও সবাই সচেতন নয়। লোকসানি অ্যাকাউন্ট সমন্বয়ে সময় বাড়ল লোকসানি মার্জিন অ্যাকাউন্টে ‘ফোর্স সেল’ দর পতনকে উস্কে দিচ্ছে– এমন খবরের মাঝে মুলধনি লোকসান মার্জিন অ্যাকাউন্টের শেয়ার বিক্রি করে সমন্বয়ের সময় বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে ২৮টি মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউসের আবেদন বিবেচনায় নিয়েছে বিএসইসি। গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।