কক্সবাজারে হোটেলে পর্যটকের গোপন ভিডিও ধারণ, অভিযুক্ত কর্মচারী ও ছাত্রলীগ নেতা পলাতক

১৫ নভেম্বর, ২০২৫ | ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেলে পর্যটকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি কলাতলীর একটি অভিজাত হোটেলে অবস্থানরত একজন ব্যারিস্টারের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও গোপনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হোটেলের এক কর্মচারী এবং তাকে সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে দুজনই পলাতক রয়েছেন। এই চক্রটি ব্ল্যাকমেইল বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এ কাজ করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে ব্যারিস্টার ফুয়াদ ব্যক্তিগত কাজে কক্সবাজার এসে শহরের কলাতলী এলাকার একটি স্বনামধন্য হোটেলে ওঠেন। অভিযোগ উঠেছে, হোটেলের রুম সার্ভিস বয় হিসেবে কর্মরত হামজা বাথরুমের ভেন্টিলেটরে মোবাইল ফোন লুকিয়ে রেখে ব্যারিস্টার ফুয়াদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে সেই ভিডিও ও স্থিরচিত্র স্থানীয় ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়দানকারী সাঈদীর সহযোগিতায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, অভিযুক্ত হোটেল কর্মচারী হামজার বাড়ি মহেশখালী উপজেলায় এবং সে প্রায় ছয় মাস ধরে ওই হোটেলে কর্মরত ছিল। তার প্রধান সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত সাঈদীর হোটেলে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যারিস্টার ফুয়াদকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা বা ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে কক্সবাজার থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, "আমরা অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে। প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।" তিনি আরও জানান, এই চক্রের সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কিনা বা অতীতেও তারা একই ধরনের অপরাধ করেছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় হোটেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবে একজন কর্মচারী হোটেলের কক্ষে গোপন ক্যামেরা স্থাপনের সুযোগ পেল, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। হোটেলটির ব্যবস্থাপক (নাম অপ্রকাশিত) বলেন, "এটি একটি অত্যন্ত লজ্জাজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা অভিযুক্ত কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছি এবং পুলিশকে তদন্তে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও কঠোর নিয়ম অনুসরণ করা হবে।" এদিকে, কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা এই ঘটনাকে পুরো পর্যটন শিল্পের জন্য একটি "অশনি সংকেত" হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, "এ ধরনের ঘটনা পর্যটকদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে, যা আমাদের সবার জন্য বিব্রতকর। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সকল হোটেল মালিককে কর্মচারী নিয়োগের পূর্বে তাদের পরিচয় ও অতীত রেকর্ড পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই (Police Verification) করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি।" ব্যারিস্টার ফুয়াদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের এই ঘটনাটি কেবল একজন ব্যক্তির সম্মানহানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে কক্সবাজারের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটকের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু হোটেলের সুরক্ষিত কক্ষে যদি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, তবে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক পর্যটন অর্থনীতিতে। তাই অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি হোটেলগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।