এবার হংকং ভিত্তিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে সাক্ষাৎকার দিলেন শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভারত থেকে নির্বাসিত অবস্থায় হংকংভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। নিম্নে সাক্ষাৎকারের মূল অংশের বাংলা অনুবাদ দেয়া হলো: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট: আগামী মাসগুলোতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে আপনার অবস্থান কী? শেখ হাসিনা: বাংলাদেশের অবশ্যই পাকিস্তানের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক দরকার, কিন্তু এই সম্পর্ক হতে হবে সমানাধিকার ও ন্যায্য অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। এজন্য আমাদের এমন একজন নেতা নির্বাচিত করতে হবে যাঁর প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা আছে এবং যিনি এই পর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনা চালানোর যোগ্যতা রাখেন। বর্তমান প্রশাসন স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে, তাদের এর কোনোটাই নেই। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট: চীন ও ভারত—উভয়ের সঙ্গেই বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে আপনি কোনো ভূমিকা পালন করার পরিকল্পনা করছেন কি? শেখ হাসিনা: আমার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বাংলাদেশের কল্যাণ ও স্থিতিশীলতা। আমি এই দুটি মহান দেশের সঙ্গে শক্তিশালী ও গঠনমূলক সম্পর্কের পক্ষে সোচ্চার থাকব। আমি আগেও বলেছি, ভারত ও চীনের জন্য আমরা তখনই নির্ভরযোগ্য অংশীদার হতে পারব যখন একটি বৈধ সরকার নির্বাচিত হবে—যে সরকারের প্রতি অন্য দেশগুলোর আস্থা থাকবে যে, এটি সত্যিই জনগণ ও তাদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট: আইএমএফ সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৯ শতাংশ, আগের বছর যা ছিল ৩.৮ শতাংশ। শিল্প উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন? শেখ হাসিনা: এই প্রবৃদ্ধির হার আসলে অত্যন্ত নগণ্য—বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঐতিহাসিক প্রবৃদ্ধির ধারার তুলনায় খুবই কম। এটা আমাদের দেশকে দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের যে বীরত্বপূর্ণ প্রয়াস চালিয়েছে, তা ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, সাম্প্রতিক সময়ে আইএমএফ দু’বার বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে দেখিয়েছে। সত্য হচ্ছে, ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও কু-শাসনের কারণে কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, বাণিজ্য ও ট্রানজিট স্থবির হয়ে পড়েছে, অনেক আন্তর্জাতিক ক্রেতা হতাশ হয়েছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি ট্রাজেডি। আমার ১৫ বছরের শাসনামলে জিডিপি ৪৫০ শতাংশ বেড়েছিল—বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধির হারগুলোর একটি। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট: যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আগামী মাসগুলোতে ওয়াশিংটন ও ঢাকার সম্পর্ক কীভাবে দেখছেন? নতুন মার্কিন প্রশাসন কি আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে বলে আশা করছেন? শেখ হাসিনা: বর্তমানে ওয়াশিংটন ও ঢাকার সম্পর্ক নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে আমি জানি, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব সময়ই ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি নিজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের প্রশংসক এবং আমি এটা প্রকাশ্যেই বলে এসেছি। অবশ্যই ট্রাম্প ড. ইউনূসের ভক্ত নন—তিনি এটা প্রকাশ্যেই বলেছেন। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট: আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে আপনি কি দলে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছেন? থাকলে কী ধরনের এবং কতটা পরিবর্তন আশা করছেন? দলের মধ্যে এবং ভবিষ্যৎ ফেডারেল সরকারে আপনি নিজে কী ভূমিকা পালন করতে চান? শেখ হাসিনা: আওয়ামী লীগ কখনোই মূলত আমার বা আমার পরিবার-কেন্দ্রিক দল ছিল না। আমাদের দলের গভীরতা আছে, সমাজের প্রতিটি স্তরে আমাদের শিকড় আছে। সরকারে থাকুক বা বিরোধী দলে থাকুক—বাংলাদেশের চলমান কল্যাণে আওয়ামী লীগের অনেক কিছু দিতে পারার আছে। আমরা যেকোনো ভূমিকাতেই সেবা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে জরুরি অগ্রাধিকার হচ্ছে—আসন্ন নির্বাচনে আমরা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি। এটা শুধু দলের ভাগ্যের জন্য নয়, সর্বোপরি আমাদের দেশের স্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
