তুর্কি লবি–জামায়াতের ভরসায় লীগ থেকে ভোল পাল্টে জামায়াতে, তবুও শেষ রক্ষা হয়নি জাহেদীর
ঝিনাইদহ-২ (সদর–হরিণাকুণ্ডু) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বর্তমানে বাফুফে সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর ঝিনাইদহ শহরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে ১০ থেকে ১২ জন ব্যক্তি এ হামলা চালায়। আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হয়েও নাসের শাহরিয়ার জাহেদী দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৫ই আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকদের পাশে না থাকা এবং কোনো ধরনের আইনি সহায়তা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, এক ভার্চুয়াল বৈঠকে শেখ হাসিনা তাকে প্রকাশ্যে তিরস্কার করে বলেন, “দলের প্রতি বেইমানির জন্য মূল্য দিতে হবে।” আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ৫ই আগস্টের পর এলাকায় সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী এবং সমর্থক নিরুপদ্রবে থাকতে পারেনি, বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো থেকে শুরু করে মব সন্ত্রাসসহ সকল প্রকার নির্যাতন-নিপীড়ন সইতে হচ্ছে। বাড়িঘরে থাকতে পারছেন না নৌকার সমর্থকরা। অথচ সেখানে শাহরিয়ার জাহেদী রযেছেন সম্পূর্ণ নিরাপদে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বহাল তবিয়তে টিকে থাকতে পারাকে সন্দেহজনক বলে মনে করছেন ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রাজনীতিতে বহুমুখী যোগাযোগ ও বারবার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দুই পক্ষের কাছেই এখন নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বিতর্কিত ও অবিশ্বাসী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে উঠেছেন। বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী ফেরদৌস হাসান জানান, মাগরিবের আজানের সময় হঠাৎ কয়েকজন লোক বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে। দুজন ভেতরে ঢুকে তিনটি মোটরসাইকেল, চেয়ার ও সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে তাকে মারধর করে। মূল ভবনের ভেতরের ফটকে তালা থাকায় তারা সেখানে প্রবেশ করতে পারেননি। নাসের শাহরিয়ার জাহেদী পরিচালিত জাহেদী ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী তবিবুর রহমান বলেন, “মণ্ডল সাহেব চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন। বাড়িতে কেউ না থাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা কিছুটা শিথিল ছিল। সন্ধ্যায় হঠাৎ দুর্বৃত্তরা বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। মণ্ডল সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তার নির্দেশে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।” রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন, বাংলাদেশে তথাকথিত তুর্কি লবির অন্যতম প্রধান ব্যক্তি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। এই লবির মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। বিএনপি এ আসনে শরিক গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের জন্য আসনটি ছেড়ে দিলেও সম্প্রতি তারেক রহমানের সঙ্গে জাহেদীর যোগাযোগের তথ্য ফাঁস হওয়ায় স্থানীয় বিএনপি ক্ষুব্ধ হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিএনপির একটি অংশের সঙ্গে অর্থনৈতিক লিঁয়াজো গড়ে তোলার কৌশল নিয়েছেন জাহেদী। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর পূর্ণ সমর্থনও পেতে সক্ষম হন তিনি। এতে তার সমর্থকেরা মনে করছিলেন, আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হওয়া তার জন্য সহজ হবে। তবে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় তারা জুলাইয়ের বিক্ষোভকারীদের ব্যবহার করে এ হামলা করিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
