আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন: জেনেভায় আইপিইউ অধিবেশনে ১০ দফা সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ওপর ইউনূস সরকারের চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়নের (আইপিইউ) ২১৬তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে ১০ দফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো আওয়ামী লীগের ৬ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য— সাবের হোসেন চৌধুরী, ফজলে করিম চৌধুরী, হাবিবে মিল্লাত, আসাদুজ্জামান নূর, মোশাররফ হোসেন ও মুহাম্মদ ফারুক খান — এর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুতর অনিয়ম, অমানবিক আটকাবস্থা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। আইপিইউ জানিয়েছে, এই সংসদ সদস্যরা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক মামলা “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল” হতে পারে বলে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। গৃহীত ১০ দফা সিদ্ধান্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো: ১. বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দাবি করলেও আগস্ট ২০২৪ থেকে প্রেরিত আইপিইউর বিভিন্ন অনুরোধের উত্তর না দেওয়ায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ। ২. ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষকদের ভিসা প্রদান নিয়ে গড়িমসির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ, যা স্বাধীন তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ৩. আটক চার সংসদ সদস্য— ফজলে করিম চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নূর, মোশাররফ হোসেন ও ফারুক খান — এর জীবন ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান এবং মানবিক কারণে জামিন বিবেচনার অনুরোধ। ৪. ন্যায়বিচারের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং প্রতিটি মামলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ আইপিইউকে জানাতে ইউনূস সরকারের প্রতি অনুরোধ। ৫. বিচার পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত এবং ইউনূস সরকারের সহযোগিতা কামনা। ৬. বাংলাদেশে আইপিইউ প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত, যারা কারাবন্দি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবে। ৭. বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান এবং ২০২৬ সালের শুরুর দিকে ঘোষিত নির্বাচনের স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য আয়োজন নিশ্চিতের অনুরোধ। ৮. গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মূলনীতি পুনর্ব্যক্তকরণ, যাতে সকল রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যেন পূর্ণ সুযোগ-সুবিধাসহ সমানভাবে অংশ নিতে পারে। ৯. এই সিদ্ধান্ত ইউনূস সরকার ও অভিযোগকারীদের কাছে পাঠানোর নির্দেশ। ১০. বিষয়টি পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত। আইপিইউ মনে করে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি একটি জটিল রাজনৈতিক সংকটের অংশ, যা কেবল জাতীয় সংলাপ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। সংস্থাটি সকল পক্ষকে অহিংস, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উপায়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
