দিল্লি হামলাকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা মোদির, তদন্তে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ ভারতীয় পুলিশের
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় দেশটির পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী আইন ‘আনলফুল অ্যাকটিভিটিজ (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট’ বা ইউএপিএ আইনে মামলা দায়ের করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘটনাটিকে “গভীর ষড়যন্ত্র” বলে উল্লেখ করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লা সংলগ্ন ব্যস্ত মেট্রো স্টেশনের সামনে একটি হুন্ডাই আই২০ গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় গাড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং আশপাশের বেশ কিছু যানবাহনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের পর প্রচণ্ড আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং মুহূর্তেই এলাকা আতঙ্কে ভরে যায়। নিহতদের পরিচয় এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি, কারণ অনেক মৃতদেহ আগুনে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ), যা সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডের তদন্তে বিশেষভাবে নিযুক্ত। এনআইএর কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে ফরেনসিক দলসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করেছেন। মোদি ভুটানে এক রাষ্ট্রীয় সফরের সময় ভাষণে বলেন, “আমি সবাইকে আশ্বস্ত করছি, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই ষড়যন্ত্রের পেছনের সবাইকে শনাক্ত করবে। যারা দায়ী, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।” এই বিস্ফোরণটি ছিল ভারতের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা ঘটনা। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যা ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বাড়িয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে আল জাজিরাকে সাংবাদিক ঈশান গর্গ জানান, “এই বিস্ফোরণ দিল্লি ও পুরো ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করেছে। রাজধানীতে কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে এবং সীমান্ত অঞ্চলগুলোতেও তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে।” রাজস্থানের পাশাপাশি ওডিশা ও পাঞ্জাব রাজ্যের প্রশাসনও সতর্কতা জারি করেছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বিস্ফোরণটির সঙ্গে ফারিদাবাদের একটি সন্দেহভাজন “সন্ত্রাসী সেল”-এর সংযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে ফারিদাবাদে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয় এবং দুইজন কাশ্মীরি চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের একজনের মালিকানাধীন গাড়িই বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তকারীরা গাড়িটির গতিপথ সিসিটিভি ফুটেজ ও টোলপ্লাজা ডেটা বিশ্লেষণ করে ট্রেস করেছেন। দেখা গেছে, গাড়িটি প্রথম দেখা যায় ফারিদাবাদের এশিয়ান হাসপাতালের সামনে, এরপর টোলপ্লাজা পেরিয়ে সকাল ৮টা ১৩ মিনিটে দিল্লিতে প্রবেশ করে। বিকেল ৩টা ১৯ মিনিটে এটি লালকেল্লার কাছে একটি পার্কিং লটে অবস্থান নেয়, প্রায় তিন ঘণ্টা সেখানে থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে পার্কিং ছাড়ে এবং ২৪ মিনিট পর বিস্ফোরণ ঘটে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখনো বিস্ফোরণের কারণ ও ব্যবহৃত বিস্ফোরক শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে ইউএপিএ আইনে মামলা দায়েরের পর তদন্তকারীদের সন্দেহ, এটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে, যার উদ্দেশ্য ছিল রাজধানীতে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী দায় স্বীকার করেনি। তবে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সম্ভাব্য আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ ও স্থানীয় সহায়তাকারীদের বিষয়েও তদন্ত শুরু করেছে। সরকার জানিয়েছে, “দেশের নিরাপত্তায় কোনো ধরনের আপস করা হবে না।”
