যে কোনো দেশের পারমাণবিক পরীক্ষা হলে রাশিয়া ‘সমানভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে’: ল্যাভরভ

১২ নভেম্বর, ২০২৫ | ৬:০৮ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, তবে রাশিয়াও “সমানভাবে প্রতিক্রিয়া” জানাবে। মঙ্গলবার রুশ সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ল্যাভরভ বলেন, “রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ২০২৩ সালেই এই বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিলেন—যদি কোনো পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র আসল পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায়, রাশিয়া একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে।” ল্যাভরভের এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি প্রশাসনকে “অবিলম্বে” পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন, অন্যান্য দেশ পারমাণবিক পরীক্ষা চালাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রেরও “সমান ভিত্তিতে” পরীক্ষা করা উচিত। তবে রাশিয়ার সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা হয়েছিল ১৯৯০ সালে, চীনের ১৯৯৬ সালে, আর যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ১৯৯২ সালে পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা চালায়। ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত ‘কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট-ব্যান ট্রিটি’ (CTBT) অনুযায়ী পারমাণবিক বিস্ফোরণ নিষিদ্ধ। ওই চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর শুধুমাত্র ভারত, পাকিস্তান এবং উত্তর কোরিয়া পরিচিত পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে। গত অক্টোবর মাসে রাশিয়া একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালেও, সেটি প্রকৃত পারমাণবিক বিস্ফোরণ ছিল না। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি সচিব ক্রিস রাইট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটাবে না, বরং অস্ত্রের অংশবিশেষ ও উপাদান পরীক্ষা করে সেগুলোর কার্যক্ষমতা যাচাই করবে। ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, “আমরা যে পরীক্ষার কথা বলছি, তা হচ্ছে সিস্টেম টেস্ট—এগুলো পারমাণবিক বিস্ফোরণ নয়, এগুলো ননক্রিটিক্যাল টেস্ট।” এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে রাশিয়া এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য পায়নি। তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের মার্কিন সহকর্মীরা এই বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।” পেসকভ আরও জানান, গত সপ্তাহে পুতিন রুশ সেনাবাহিনীকে পারমাণবিক পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের সম্ভাব্যতা “পর্যালোচনা” করার নির্দেশ দিয়েছেন। চীন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তারা কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালাচ্ছে না এবং ওয়াশিংটন যেন CTBT-র আওতায় থাকা পরীক্ষানিষেধ বজায় রাখে, সে প্রত্যাশা করছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, “জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ও দায়িত্বশীল পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে চীন শান্তিপূর্ণ উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতি মেনে চলে এবং আত্মরক্ষামূলক কৌশল অনুসরণ করে।” মঙ্গলবার ল্যাভরভ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সহকারী পদপ্রার্থী রবার্ট ক্যাডলেকের মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন। ক্যাডলেক মার্কিন কংগ্রেসে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এমন বিশ্বাসযোগ্য পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা থাকা উচিত যা আঞ্চলিক সংঘাতে ব্যবহৃত হতে পারে।” এর জবাবে ল্যাভরভ বলেন, “এই বক্তব্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট অঞ্চলে নিজেদের লক্ষ্য পূরণের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে।” রাশিয়াকেও ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের শুরুর দিকে পারমাণবিক হুমকি প্রদর্শনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, যখন প্রেসিডেন্ট পুতিন দেশের পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতায় রাখার নির্দেশ দেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মস্কোর এই ঘোষণা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিতের পর। বিশ্লেষকদের মতে, যদি দুই দেশই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করে, তবে ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর আবার বৈশ্বিক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।