ইউনূস সরকারের আমলে বাড়ছে অপরাধ, বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতাঃ অক্টোবরে ৫% বৃদ্ধি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সময়ে দেশজুড়ে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ, নারী-শিশু নির্যাতন, চুরি, সিঁধেল চুরি এবং পুলিশের ওপর হামলাসহ সাত ধরনের অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর মাসে এসব অপরাধে মামলার সংখ্যা ৫ শতাংশ বেড়েছে। পুলিশের তথ্য বলছে, অক্টোবরে হত্যার মামলা হয়েছে ৩১৯টি, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ২৯৭টি। ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৬টিতে, আগের মাসে যা ছিল ২১০টি। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা এক মাসে ১,৯২৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৯৮৫টি। অপহরণের ঘটনায় মামলা ৯৬ থেকে বেড়ে ১১০টি এবং পুলিশের ওপর হামলার মামলা ৪৩ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯টিতে। গত ১৩ মাসে এই সাত ধরনের অপরাধে মোট ৩৯ হাজার ৯৩৬টি মামলা দায়ের হয়েছে, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১০০টির বেশি মামলা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশের ওপর হামলা ও হেনস্তার ঘটনায় মোট ৫৩১টি মামলা হয়েছে।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই অবনতি ঘটছে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে, যখন রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা উভয়ই তীব্র হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলির মধ্যে রবিবার মুন্সীগঞ্জে বিএনপি নেতা আরিফ মীরকে গুলি করে হত্যা এবং গতকাল সূত্রাপুরে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনা জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি এবং সমাবেশকেন্দ্রিক সহিংসতা এই অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে মুখ্য ভূমিকা রাখছে। অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন, সরকারের শিথিল নজরদারি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধপ্রবণতা বাড়িয়ে তুলেছে। অপরাধ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “অপরাধ দমন শুধু পুলিশি তৎপরতায় সম্ভব নয়। কর্মসংস্থান সংকট, মূল্যস্ফীতি, সামাজিক বৈষম্য এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা—এসব কারণে অপরাধ বাড়ছে।” এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের ওপর হামলা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে সদর দপ্তর। আইজিপি বাহারুল আলম সম্প্রতি এক বৈঠকে বলেছেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। নির্বাচনের আগে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।” দেশের বিভিন্ন জেলায় চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ জনগণ। অনেকে মামলা করতে সাহস না পাওয়ায় পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশ দিয়েছে—প্রয়োজনে পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে মামলা করবে। চাঁদার টাকা, রশিদ ও প্রমাণসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।শহর থেকে গ্রাম—সর্বত্র চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ ও সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউনূস সরকারের সময়কালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং সমন্বয়ের অভাব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
