শেখ হাসিনার বিচার: গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে জাতিসংঘে অভিযোগ

১১ নভেম্বর, ২০২৫ | ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) চলমান বিচার প্রক্রিয়ায় ন্যায্য বিচার এবং যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ তুলে জাতিসংঘের কাছে একটি জরুরি আবেদন করা হয়েছে। শেখ হাসিনার পক্ষে লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের আইনজীবী স্টিভেন পাওলেস কিউসি এবং তাতিয়ানা ইটওয়েল এই আবেদনটি দাখিল করেন। আবেদনটি জাতিসংঘের বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার এবং বিচারবহির্ভূত, সংক্ষিপ্ত বা নির্বিচারী মৃত্যুদণ্ড বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করে। তবে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এক পর্যায়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। ব্যাপক সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে ৫ আগস্ট ২০২৪-এ শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। এর পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনা এবং আরও দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। অভিযোগ আনা হয় যে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভে তৎকালীন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। শেখ হাসিনা ভারতে থাকায় তার অনুপস্থিতিতেই এই বিচারকার্য চলছে এবং শিগগিরই এর রায় ঘোষণা হওয়ার কথা, যেখানে তার মৃত্যুদণ্ড হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘে করা আবেদনে বলা হয়েছে, এই বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক পরিবেশে একটি অনির্বাচিত ও অগণতান্ত্রিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। আবেদনে শেখ হাসিনার ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকার লঙ্ঘনের বেশ কয়েকটি গুরুতর বিষয় তুলে ধরা হয়েছে: ১. স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনালের অভাব: আবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হচ্ছে না, যা আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চুক্তির (ICCPR) ১৪(১) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। বিচারক প্যানেলের সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয় এবং শেখ হাসিনার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এছাড়া, প্রধান প্রসিকিউটর নিজেও শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নিয়েছেন, যা তার পক্ষপাতদুষ্টতাকে স্পষ্ট করে। ২. অনুপস্থিতিতে বিচার ও আত্মপক্ষ সমর্থনে বাধা: শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মতো গুরুতর মামলার বিচার চলছে। ভারত থেকে তাকে প্রত্যর্পণের একটি অনুরোধ বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও বিচার এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হয়নি। উপরন্তু, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের ওপর হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে, শেখ হাসিনার পক্ষে একজন রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ বা পরামর্শ হয়নি। ৩. একতরফা বিচার: আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ট্রাইব্যুনাল একতরফাভাবে শুধু শেখ হাসিনার সরকারের সদস্যদের বিচার করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে যে, "যারা গণঅভ্যুত্থান সফল করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত কোনো কার্যকলাপের জন্য মামলা করা হবে না।" এটি বিচার প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্যমূলক চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছে। ৪. মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা ও জীবনের অধিকার লঙ্ঘন: আইনজীবীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এমন একটি অন্যায্য বিচার প্রক্রিয়ার পর যদি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে তা হবে একটি সংক্ষিপ্ত বা বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ডের শামিল। এটি আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চুক্তির (ICCPR) ৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জীবনের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই জরুরি আবেদনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার বিচার প্রক্রিয়ায় মানবাধিকারের মানদণ্ড নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।