সর্বদলীয় নির্বাচন ছাড়া সেনা মোতায়েন নয়, আসছে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট ২.০’

৯ নভেম্বর, ২০২৫ | ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে দুটি কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। গতকাল রাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চ-পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনে সেনাবাহিনী কোনো দায়িত্ব পালন করবে না। একইসাথে, দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং সন্ত্রাস দমনে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট ২.০’ নামে একটি সমন্বিত অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর এই আকস্মিক ও দৃঢ় অবস্থান দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটকে নতুন মাত্রা দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বৈঠকের মূল আলোচনা ছিল আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে। বৈঠকে উপস্থিত শীর্ষ কর্মকর্তাদের সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ প্রধান দলগুলোকে বাইরে রেখে কোনো একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, সেনাবাহিনী সেই নির্বাচনে সহায়তা প্রদান থেকে বিরত থাকবে। বৈঠকের সূত্র অনুযায়ী, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজুর রহমান বলেন, একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অংশ হয়ে সশস্ত্র বাহিনী তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে না। তিনি আরও উল্লেখ করেন, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ছাড়া আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে পারে এবং দেশের সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে। সিদ্ধান্ত-২: সন্ত্রাস দমনে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট ২.০’ বৈঠকে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান দেশে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জঙ্গিবাদ এবং ৫ আগস্টের পর লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’-এর আদলে একটি সাঁড়াশি অভিযানের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এই অভিযানের বিষয়ে বৈঠকে একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, “নির্দিষ্ট অভিযোগ বা ওয়ারেন্ট ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে আটক করা হবে না।” তবে এর পাশাপাশি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, “সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিনষ্টকারী ব্যক্তি যে দলেরই হোক না কেন, তাদের নির্মূলে কঠোরতম পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হবে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র এবং যারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে তাদের দমন করা। বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীর নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। যেকোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ না হয়ে, কেবল রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের ভূমিকা সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে কর্মকর্তারা একমত পোষণ করেন। এই সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। সশস্ত্র বাহিনীর এই নতুন অবস্থান জাতীয় রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা দেখার জন্য এখন অপেক্ষা করতে হবে।