পুলিশের বেধরক পিটুনিতে আহত ১২৫ শিক্ষক হাসপাতালে, কর্মবিরতির ডাক

৯ নভেম্বর, ২০২৫ | ৫:২১ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে সকাল থেকে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের লাঠিচার্জ, জলকামান এবং কাঁদুনে গ্যাসে অন্তত ১২৫ জন শিক্ষক আহত হন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম বলেন, “আমাদের শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন, অনেকেই গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলবে।” তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকদের বৈধ দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত কোনও শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন না।” তিন দফা দাবি দশম গ্রেডে বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা শিক্ষক নেতারা জানান, সরকারের ঘোষিত পদোন্নতির উদ্যোগ তাদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ১১তম ও ১৩তম গ্রেডে থাকা শিক্ষকদের বেতন উন্নীত করার উদ্যোগে সহকারী শিক্ষকরা অসন্তুষ্ট। ফলে তাদের পক্ষ থেকে নতুন এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, শাহবাগ এলাকায় আন্দোলনকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেওয়া হয়। এ সময় কিছু শিক্ষক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন, ফলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করা হয়। ডিএমপি জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও শিক্ষকরা তা অমান্য করে মিছিলের চেষ্টা করেছিলেন। জননিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। নতুন কর্মসূচি শনিবার রাতে শিক্ষক সংগঠনগুলো জানায়, রোববার থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি চলবে। একই সঙ্গে ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে। ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’, ‘প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি’ ও ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)’—এই চার সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন। অন্যদিকে, সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিরসন এবং শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিতের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। তারা সরকারকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে জানিয়েছে, দাবি না মানলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ১১ ডিসেম্বর থেকে তারা আমরণ অনশন শুরু করবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে।