ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা দখলে সক্রিয় সিন্ডিকেট
ক্ষুদ্র ও আঞ্চলিক ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে দিতে একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা সরকারের নজরে এসেছে। বড় কিছু কোম্পানি বাজার দখলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে তাদের নেটওয়ার্কে নিয়মিত সাইবার হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে– কিছু বড় ইন্টারনেট সরবরাহকারী বা গোষ্ঠী ইচ্ছে করে ছোট অপারেটরদের নেটওয়ার্কে আক্রমণ চালাচ্ছে। এতে নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আক্রমণের মাত্রা কিছু ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে ৭০০ গিগাবাইট পর্যন্ত পৌঁছায়, যা ছোট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব। এতে ছোট প্রতিষ্ঠান গ্রাহক হারাচ্ছে; বড় কোম্পানিগুলো অন্যায্যভাবে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে। বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু জাতীয় পর্যায়ের ইন্টারনেট সরবরাহকারী নতুন দূরসংযোগ নেটওয়ার্ক ও অনুমোদন নীতিমালা-২০২৫ এর ভুল ব্যাখ্যা করে ছোট প্রতিষ্ঠানকে ভয় দেখিয়ে দখলের চেষ্টা করছে। এ প্রক্রিয়াকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে সরকার। ফয়েজ আহমদ বলেন, নতুন দূর সংযোগ অনুমোদন নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, ছোট ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান তাদের বর্তমান এলাকার পাশাপাশি পুরো জেলায় কার্যক্রম চালাতে পারবে। আমরা তাদের কাজের ক্ষেত্র সম্প্রসারণের সুযোগ দিয়েছি। অনুমোদন নবায়নে জাতীয় পর্যায়ের ফি কিছুটা বাড়িয়ে জেলা-উপজেলায় তা যৌক্তিক সমন্বয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ইন্টারনেট খাতকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ বিবেচনা করি। তাদের স্বার্থরক্ষা করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। এ ব্যাপারে ফয়েজ আহমদ বলেন, শিগগির এ খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যাবে। বড় প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট বা বাজার নিয়ন্ত্রণের যে কোনো প্রচেষ্টা রোধে মন্ত্রণালয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, মন্ত্রণালয় ছোট ইন্টারনেট সরবরাহকারীদের বাজার থেকে সরানোর যে কোনো প্রচেষ্টা রুখে দেবে। একই সঙ্গে সাইবার হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং একটি ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। কারণ, ডিজিটাল বাংলাদেশে ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার কোনো বিলাসিতা নয়; এটি নাগরিক অধিকার। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা টিকে থাকলেই দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি টেকসইভাবে বৃদ্ধি পাবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রায় দুই হাজার ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের অধিকাংশ ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার গ্রাহক নিয়ে স্থানীয়ভাবে সেবা দিচ্ছে। গত কয়েক মাসে অন্তত ৩৪টি প্রতিষ্ঠান বড় আকারের সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। বিটিআরসি সূত্র জানায়, এসব হামলায় কিছু প্রতিষ্ঠান ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। তারা যেমন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে, তেমনি স্থানীয় ব্যবহারকারীরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
