‘জুলাই সনদ’ কড়চা এবং অতঃপর …
To be honest, I don’t even want to think about this situation! গত তিন দিন ধরে ‘জুলাই সনদ’ ঐক্যমত্য কমিশিন, প্রতারণা, নোট অব ডিসেন্ট, স্বাক্ষর ইত্যকার বিষয়গুলো টক অব দ্য কান্ট্রি। সনদে স্বাক্ষর করা দলগুলো এবং স্বাক্ষর না-করা দলগুলো একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে মাইক্রোফোন গরম করে ফেলছেন। তা নিয়ে আবার জনগণের মধ্যে থেকে ব্যাপক রাজনৈতিক বিশ্লেষণ উঠে আসছে। কেউ বলছেন-‘নির্বাচন ভণ্ডুল করতেই এসব করা হচ্ছে’। কেউ বলছেন-‘তিন দলের কামড়াকামড়ি লোক দেখানো’। কেউবা বলছেন-‘যথাসময়ে সবাই স্বাক্ষর করবে এবং ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে’। 📍 এখানে যে বিষয়টি কেউ আলোচনা করছেন না, এমনকি ভাবনাতেও আনছেন না, তা হলো নির্বাচন শেষে নতুন সরকার আসলে বর্তমান ইন্টেরিম এবং তাদের আওলাদ-বনেদদের কী হবে? তারা দেড় বছরে যতো অন্যায়-অপরাধ, বেআইনী কার্যকলাপ, জেল-জুলুম, খু/ন-জখম, অর্থ লোপাট, অর্থনীতি ধ্বংস, ক্ষমতার অপব্যবহার, মাত্রাতিরিক্ত স্বজনপ্রীতি, প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ, অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে পাকিস্তানিকরণ, জ/ঙ্গি লালন-পালন করাসহ দেশকে ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে ফেলেছে সেসবের বিচার হবে? ইনডেমনিটি পাবে? নাকি কোনোকিছু ছাড়াই সেফ এক্সিট পাবে? 📍 এটা মনে করার কারণ নেই যে ইনডেমনিটি ও সেফ এক্সিট নিশ্চিত না হয়ে ইউনূস সাহেব নির্বাচন করিয়ে আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দক্ষিণ প্লাজায় আবেগঘন ভাষণ দিয়ে ফুলে তোড়া হাতে নিয়ে ঘরে ফিরে যাবেন এবং তার আমর্ত্যবর্গরাও যার যার পেশায় ফিরিয়া গিয়া সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিবেন! ইহাদের সহিত আরও একজন রহিয়াছেন যাহার বিষয়ে উহ্য থাকিতেছে, তারই বা কি হইবে? 📍 গত তিন দিন ধরে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথাবার্তায় অনেকে তাকে প্রায় ‘ইউনূস-জামাতবিরোধী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সোল এজেন্ট’ ভেবে বসেছেন! কেননা তিনি বলেছেন―” জামায়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন- জোট পাকিয়ে রাস্তার মধ্যে আন্দোলন করছেন এবং ধমক দিচ্ছেন, ‘আজকেই হতে হবে, নাহলে আমরা নির্বাচন হতে দেব না’; মানুষকে বোকা ভাববেন না। “ জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, “চেষ্টা করছে একটা শক্তি—যারা বাংলাদেশে একাত্তর সালে স্বাধীনতা বিরোধিতা করেছিল, তারা একাত্তরকে এখন নিচে নামিয়ে দিতে চায়, তারা শুধুমাত্র চব্বিশের জুলাইয়ের যে আন্দোলন, তাকে বড় করে দেখাতে চায়। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কিছু কিছু শক্তি, কিছু মানুষ এখানে বিভক্তি আনতে চায়।” 📍 মির্জা ফখরুল বলেন, “ আমি কথাটা পরিষ্কার করে বলতে চাই, তাতে আপনারা নাখোশ হলে আমার কিছু করার নাই। সেদিন আপনারা সেই মুক্তিযুদ্ধকে গোলমাল বলে আখ্যায়িত করেছিলেন…কিছু দুষ্কৃতিকারীর একটা অভ্যুত্থানের কথা বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছিলেন। এবং যারা আমাদের হত্যা করছিল, তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আপনারা এই দেশের মানুষকে হত্যা করেছিলেন এবং আমাদের বহু গুনি-জ্ঞানী ব্যক্তিকে সেদিন হত্যা করে বধ্যভূমিতে নিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন, আমরা একটু ভুলিনি।” 📍 তার এই বক্তব্যকে আরও মজবুত করেছেন তার দলের আরেক নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি ২০২৪ সালের যে ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, একই কারণে ১৯৭১ সালের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। এইসব মাখো মাখো কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে না এই দলটি সত্যি সত্যিই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গর্বিত? 📍 যে মুহূর্তে আপনি গর্ব করতে শুরু করলেন তখনই দেখলেন মির্জা ফখরুল বলে বসেছেন― “আজকে ভারতে বসে হাসিনা বিভিন্ন মিডিয়াকে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। একবারের জন্যও তিনি অনুশোচনা পর্যন্ত প্রকাশ করেননি। তাকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিল তুমি কি অ্যাপোলজি (ক্ষমা) চাইবে না তোমার কর্মকাণ্ডের জন্যে। সে বলেছে, ‘না, আমরা অ্যাপোলজি চাইব না। সেই মহিলা, সেই ব্যক্তি আজকে অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারতে বসে।“ “ভারত সরকারকে খুব পরিষ্কার করে আমরা বলতে চাই, ভারতে আছে শেখ হাসিনা, তাকে আপনারা বাংলাদেশে ফেরত দিন এবং তার বাংলাদেশের আইনে যে বিচারের মুখোমুখি, তাকে সেই বিচারের মুখোমুখি করার ব্যবস্থা করে দিন। সবসময় বাংলাদেশের বিরোধিতা করবেন না। মানুষের বিরোধিতা করবেন না, বাংলাদেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না।” 📍 জুলাই সনদ নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “এই যে সনদ আমরা পাস করেছি, আপনাদের মনে আছে পার্লামেন্টের সামনে বৃষ্টিতে ছাতা ধরে পাস করেছি, সই করেছি না? ওইখানে আমরা যে বিষয়গুলোতে সই করেছি, সেখানে বলা হয়েছিল যে—সব রাজনৈতিক দল যেগুলোতে একমত, সেগুলো সব সই হয়ে গেল। এটা অন্যায়, এটা জনগণের সঙ্গে একটা নিঃসন্দেহ প্রতারণামূলক কাজ।” 📍 এর সঙ্গে সুর মেলালেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বললেন―” দেশ বিরাট সংকটে, উদ্ধারের ক্ষমতা নেই সরকারের। তিনি এও মনে করেন, এই সংকট থেকে উদ্ধারে এখন বিএনপিকেই ভূমিকা নিতে হবে। তিনি ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালায় ভিন্নমত বা নোট ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি, তা অন্তর্ভুক্ত করার বিষটিকে বোকামি, নিবুর্দ্ধিতা ও মুর্খতা বলেন।“ 📍 মির্জা ফখরুল, মাহমুদুর রহমান মান্না, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মেজর (অবঃ) হাফিজ, জহির উদ্দিন স্বপন, মির্জা আব্বাস প্রমুখদের সুগারকোটেড কথাবার্তা শুনে মনে করার কারণ নেই যে তারা ইন্টেরিমের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে বিপ্লব করে ফেলবেন। দুদিন বাদেই দেখা যাবে এরা, জামায়াত, এনসিপি, গণপরিষদ, গণফোরাম, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি, গণসংহতি, রাষ্ট্র সংস্কার, বাংলাদেশ জাসদ, রব জাসদ, ইশাআ, হেফাজতসহ তালেবর গাউস-কুতুব, আলেম-ওলামায়েকেরামগণ সব এক সুরে সারিন্দা বাজাচ্ছে। 📍 এবার এই সারিন্দার সুর যেন না কেটে যায়, সে জন্য ৫৩ জন বিশিষ্ট (!) নাগরিক এক বিবৃতি ম্যানুফ্যাক্চার করেছে! শুধু নামগুলো স্মরণ রাখুন কারণ, এদের অনেকেই আপনার লিস্টে আছে এবং মাঝে মাঝেই সরকারবিরোধী বক্তিমে দিয়ে জনদরদী সাজে। 📍 বিবৃতিতে সম্মতি জানিয়েছেন যারা-কাজল শাহনেওয়াজ, জাহেদ উর রহমান, আর রাজী, গোলাম সারওয়ার, আমিরুল ইসলাম, মোস্তফা নাজমুল মনসুর তমাল, আমিনুল ইসলাম, আবুল ফজল, মোস্তফা কামাল পলাশ, রাখাল রাহা, জি এইচ হাবীব, নাহিদ হাসান নলেজ, আবুল কালাম আল আজাদ, আহমেদ স্বপন মাহমুদ, সায়েমা খাতুন, গাজী তানজিয়া, রেজাউর রহমান লেনিন, সালাহ উদ্দিন শুভ্র, সাঈদ বারী, মাহাবুবুর রহমান, মৃদুল মাহবুব, অমল আকাশ, চিনু কবির, জামাল ভাস্কর, আরিফুল ইসলাম সাব্বির, অ্যাডভোকেট মমিনুর রহমান, ইমামুল বাকের এপোলো, অনি আতিকুর রহমান, পলিয়ার ওয়াহিদ, রাসেল রায়হান, সানাউল্লাহ সাগর, এনামুল হক পলাশ, শাকিলা খাতুন, আব্দুল মজিদ অন্তর, তানভীর আহমেদ, সোয়েব মাহমুদ, মেশকাত চৌধুরী, হারুন-অর-রশিদ, তছলিমা শাহনুর, মাসুম মুনওয়ার, আরিফ রহমান, জব্বার আল নাঈম, রাফসান আহমেদ, আশরাফুল ইসলাম, সাজ্জাদ বিপ্লব, পিন্টু রহমান, রকিব লিখন, শাহনেওয়াজ আরেফিন, শাদমান শাহিদ, আফসানা জাকিয়া, শামীম রেজা, ফুয়াদ সাকী। 📍 এবার উপসংহার টানা যাকঃ জুলাই সনদ মানেই ‘বিকল্প সংবিধান’। এটা পাশ করিয়ে গণভোট আয়োজন করে এমন এক ব্যবস্থা করা হবে যেখানে নির্বাচিত সরকার এসেও ইন্টেরিমের কোনও কাজকে প্রশ্ন, চ্যালেঞ্জ, মামলা, শাস্তি, জবাবদিহিতা করতে পারবে না। সেই ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না দেখলেই গণভোট আগে না পরে, সনদের বৈধ্যতা-অবৈধতা, নির্বাচনী এলাকা, আসনবণ্টন, জোটগঠন, নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সেনা-আদালত কাণ্ডে সেনাভ্যন্তরে অসন্তোষ থেকে ভোটকেন্দ্র পাহারা নিয়ে জটিলতা, নামোল্লেখ না করা একটি বর্হিশত্রু দেশের আক্রমণ নিয়ে এমন এক জগাখিচুড়ি পাকানো হবে যাতে করে নির্বাচনের কথা ভাবতেও পারবে না কেউ। 📍 তখন ইন্টেরিমকে দিয়েই ‘জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার’ ডিক্লেয়ার করা হবে। তার প্রধান থাকবেন মুহাম্মাদ ইউনূস স্বয়ং। সেই সরকারকে বৈধতা দিতে বাধ্য হবে সর্বোচ্চ আদালত কারণ, তারা বেশি সংখ্যক দলের ম্যান্ডেট নিয়ে নেবে। 📍 এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মিছিল বড় হতে থাকা, ভারতের চারপাশে আরব সাগর থেকে বঙ্গোপসাগর অবধি “Notice to Air Missions” বা NOTAM ডিক্লেয়ার করা, চিকেন নেকস সংলগ্ন অঞ্চলে ভারী যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করা, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তঞ্চলগুলোতে জ/ঙ্গিদের ‘স্লিপার সেল’ এন্ট্রি নেওয়া, ভারত-মার্কিন ১০ বছরের সামরিক চুক্তিবলে আমেরিকা কর্তৃক ‘বাংলাদেশ বিষয়টি ভারতের ওপর ছেড়ে দেওয়া’ এবং আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো থেকে ‘ইনক্লুসিভ ইলেকশন’-এর চাপ আসতে থাকলে, ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায়ের দিন ঘোষণা হলে, এর মধ্যে পশ্চিমা পরাশক্তির কোনও দেশ ইউনূসকে আল্টিমেটাম দিলে ভিন্ন কোনও পরিস্থিতি ঘটতে পারে। অন্যথায় ইউনূস এন্ড গংয়ের বর্তমান অপশাসন প্রলম্বিত হবে এবং দেশ খুব দ্রুত ব্যর্থরাষ্ট্র পাকিস্তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে এবং নিশ্চিত দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। তখন কী ঘটবে সেটা আমার অনুমানের বাইরে। সত্যি বলতে সেসব আমি ভাবতেও চাই না। লেখক পরিচিতঃ মনজুরুল হক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
